সংক্ষিপ্ত

সিএএ-বিরোধী নাটক করার অপরাধে স্কুলশিশুদের করা হয়েছিল জেরা।

সেই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রধানশিক্ষিকা ও এক অভিভাবিকা-কে।

সেই সঙ্গে প্রতিদিন স্কুলে হানা দিয়ে চলছে শিশুদের লাগাতার জেরা করা।

এই নিয়ে খোলা চিঠিতে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিভাবক-অভিভাবিকারা।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২১ জানুয়ারি। কর্নাটকের এক স্কুলে শিশুরা সিএএ-বিরোধী একটি নাটক করেছিল। তারপরই স্কুলে হানা দিয়েছিল পুলিশ। স্কুলশিশুদের একটানা ঘন্টা পাঁচেক পুলিশি জেরার খবর ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার পরও সেই ঘটনায় পুলিশি হেনস্থা বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্য়েই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও এক অভিভাবিকাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারপরেও দিনের পর দিন স্কুলে এসে শিশুদের লাগাতার জেরা করে যাচ্ছে পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।

নাটকটিতে বেশ কিছু  'দেশ-বিরোধী' সংলাপ ছিল। এই অভিযোগে গত ৩০ জানুয়ারি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা ও এক ছাত্রের বিধবা মা-কে এই মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই দুইজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। কিন্তু, তারপর থেকেই বিপত্তি বেড়েছে স্কুলের। কর্তৃরপক্ষের অভিযোগ গত চার দিন ধরে রোজ বেলা ১টা নাগাদ স্কুলে উপস্থিত হচ্ছেন ডিএসপি। তারপর বিকাল ৪টেয় স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত চলছে নাটকে অংশ নেওয়া ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদের জেরা করা।

স্কুলের সিইও থোসিফ মাদিকেরি বলেছেন, তাঁরা জানেন না কেন এই ঘটনায় দেশদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। এটা যেকোনও যুক্তিগ্রাহ্য মানুষের বোধের বাইরে বলে দাবি করেছেন তিনি। একজন অভিভাবক এরমধ্যেই এই নাটক উপস্থাপনের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরেও যেটা চলছে তা ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের হেনস্থা করা ছাড়া কিছু নয়। তারা প্রত্যেকে অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছেন।

পুলিশের দাবি, যে বিধবা অভিভাবিকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি সিএএ-র তীব্র সমালোচনা করা এই নাটকে 'জুতে মারেঙ্গে' বলে একটি লাইন জুড়ে দিয়েছিলেন। সেই সংলাপের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়াতেই বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে এবং পুলিশ স্কুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ধর্মের ভিত্তিতে শত্রুতা প্রচারের অভিযোগ আনে। পুলিশের দাবি ওই সংলাপ চিত্রনাট্যে না থাকলেও ওই অভিভাবিকা আলাদা করে শিশুদের তা বলতে শিখিয়েছিলেন। আর প্রধান শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করার কারণ, তিনি এই নাটক উপস্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন।

তবে বেঙ্গালুরুর স্কুলটির অভিভাবকরা পুলিশের এই যুক্তি একেবারেই মানছেন না। তাঁরা পুলিশি হেনস্থার ঘটনাকে জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট (২০১৫- এর নির্মম লঙ্ঘন বলে দাবি করছেন। তাঁদের অভিযোগ পুলিশ বাবা-মা'এর অনুপস্থিতিতে কয়েক ঘন্টার জন্য বারবার অনুমতি ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এটা 'পুলিশের অবৈধ ও অমানবিক আচরণ' বলে তাঁরা এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন।

'শান্তির পক্ষে থাকা বাবা-মা, ন্যায়বিচার এবং বহুত্ববাদী'- এই নামে একটি গোষ্ঠী স্থাপন করে, তাঁরা সেই চিঠিতে লিখেছেন, সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধ মত-কে দমন করতে রাজ্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহ আইন-এর অপব্যবহার করছে। গ্রেফতার হওয়া অভিভাবিকার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও ছিল না, এমনকী এফআইআর-এও তাঁর নাম ছিল না। তাঁদের প্রশ্ন এই দুই মহিলা জাতীয় সুরক্ষা-কে কীভাবে হুমকির মুখে ফেলেছেন যে তাঁদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করতে হবে? একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা চান না, তাঁদের বাচ্চারা সন্ত্রাসের পরিবেশে ভয়ে ভয়ে বেড়ে উঠুক। অবিলম্বে মামলাটি বাতিল করে গ্রেফতার হওয়া দুই মহিলাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।