পাঞ্জাবের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজিয়া সুলতানা এবং প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ মুস্তাফার বিরুদ্ধে ছেলে আকিল আখতারের রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ। সামনে আসা ভিডিওতে বাবা ও স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক, পারিবারিক ষড়যন্ত্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ, SIT তদন্ত শুরু করেছে। 

খুনের ঘটনা তোলপাড় করে দিল পঞ্জাবরে রাজনীতি আর পুলিশ প্রশাসনকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বর্তব্য জানিয়ে আত্মহত্যা করেছেন পঞ্জাবের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজিয়া সুনতানার ছেলে। তাঁর স্বামী প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ মুস্তাফা। মহম্মদ মুস্তাফা নিজের ছেলে আকিল আখতারের মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ। আর সেই কারণেই ছেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বক্তব্য রেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। দিনের পর দিন ধরেই বাবা ও মা ছেলের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছিল বলে অভিযোগ। আকিল আখতারের মৃত্যুর পর খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত করছে পঞ্জাব পুলিশ। মৃতের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট গোটা ঘটনাকে রহস্যময় করে তুলেছে। পাশাপাশি তাঁর ওপর প্রভাবশালী বাবা ও মা কীভাবে অত্যাচার করেছে তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।

মৃত্যু নাকি ষড়যন্ত্র? পঞ্চকুলা থেকে শুরু রহস্যের কাহিনী

পুলিশের মতে, ৩৩ বছর বয়সী আকিল আখতারকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পঞ্চকুলায় তাঁর বাসভবনে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক বিবৃতিতে পরিবার জানায় যে মৃত্যু ড্রাগ ওভারডোজের কারণে হয়েছে, যদিও পুলিশ এটিকে ওষুধের জটিলতা বলে জানিয়েছিল। কিন্তু এর কিছুদিন পর যে ভিডিওগুলো সামনে আসে, তা পুলিশকেও গোটা ঘটনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

ভিডিওতে ছেলের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, "আমার স্ত্রী ও বাবার মধ্যে সম্পর্ক আছে"

আগস্টে রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে আকিল আখতার তাঁর বাবা এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,

“আমি জানতে পেরেছি যে আমার বাবা এবং আমার স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আমি মানসিক এবং আবেগগতভাবে ভেঙে পড়েছি। আমার ভয় হচ্ছে যে এরা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে।”

আকিল আরও দাবি করেন যে তাঁর মা রাজিয়া সুলতানা এবং বোনও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত। ভিডিওতে তিনি এও বলেন যে বিয়ের আগে থেকেই তাঁর বাবা তাঁর স্ত্রীকে চিনতেন এবং বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী তাঁকে কাছে আসতে দেননি।

"আমাকে পাগল বলা হয়েছে, টাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং জোর করে রিহ্যাবে পাঠানো হয়েছে" তিনি আরও অভিযোগ করেন তাঁকে রিহ্যাবে পাঠান হলেও সেখানে কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান হয়নি। তাঁর ঠিকমত চিকিৎসা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন।

মানসিক রোগী প্রতিপন্ন করার চেষ্টা

আকিল তাঁর ভিডিওতে বলেন যে পরিবার তাঁকে "মানসিক রোগী" বলে তাঁর কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। “যখনই আমি কোনো সমস্যার কথা বলি, তাদের বয়ান বদলে যায়। আমাকে জোর করে রিহ্যাবে পাঠানো হয়েছিল, যদিও আমি সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত ছিলাম। আমি যদি অসুস্থ হতাম, তাহলে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, আটকে রাখা নয়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে পরিবার তাঁর টাকা এবং ব্যক্তিগত নথিও কেড়ে নিয়েছে, যাতে তিনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারেন।

"কেউ আমাকে বাঁচান" ভিডিওতে বেদনাদায়ক আবেদন

ভিডিওর শেষে আকিল আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “কেউ আমার সাহায্য করুন, কেউ আমাকে বাঁচান। আমার ভয় হচ্ছে যে এরা আমাকে মেরে ফেলবে।” তিনি এমনকি এও বলেন যে তাঁর মেয়ের জন্ম নিয়েও তাঁর সন্দেহ আছে। মেয়ে তাঁর না তাঁর বাবার - তাই নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর বিয়ে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বিয়ের ৮ বছর হলেও দাম্পত্য তেমন সুখকর ছিল না।

দ্বিতীয় ভিডিওতে বাড়ল বিভ্রান্তি – বয়ান বদল এবং হঠাৎ কাট

দ্বিতীয় একটি ভিডিওতে আকিল তাঁর আগের দেওয়া बयान থেকে সরে এসে বলেন যে তাঁর সিজোফ্রেনিয়া ছিল এবং তিনি যা কিছু অভিযোগ করেছিলেন, তা অসুস্থতার কারণে। “আমি অসুস্থ ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না। আমার পরিবার খুব ভালো, আল্লাহর শুকরিয়া।” কিন্তু ভিডিওর শেষে ক্যামেরা যখন তাঁর মুখের দিকে ফেরে, তখন তিনি হঠাৎ বলেন, “এরা কি আমাকে মেরে ফেলবে? এরা সবাই হারামজাদা।” এই হঠাৎ পরিবর্তিত সুর পুলিশের জন্য মামলাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

FIR দায়ের, SIT গঠন, তদন্ত এখন নতুন মোড়ে

পঞ্চকুলার ডিসিপি সৃষ্টি গুপ্তা জানিয়েছেন যে প্রথমে কোনো ষড়যন্ত্রের সন্দেহ ছিল না। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সামনে আসা ভিডিও এবং ছবির পর খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, শামসুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেছেন, যিনি পরিবারের ঘনিষ্ঠ। পুলিশ এখন এই মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করেছে, যা মহম্মদ মুস্তাফা, রাজিয়া সুলতানা, আকিলের স্ত্রী এবং বোনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করবে।

কে এই রাজিয়া সুলতানা ও মহম্মদ মুস্তাফা?

রাজিয়া সুলতানা মালেরকোটলা থেকে কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাব সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর স্বামী মহম্মদ মুস্তাফা পাঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি, যিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। রাজিয়া সুলতানা ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন এবং তারপর থেকে জনজীবন থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন।

তদন্তেই মিলবে সত্যি, রাজনীতি ও পরিবার দুটোই এখন প্রশ্নের মুখে

এই মামলাটি এখন আর শুধু একটি পারিবারিক বিবাদ নয়, বরং এর সঙ্গে রাজনৈতিক এবং আইনি প্রভাবও জড়িয়ে আছে। পুলিশ SIT-কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে এবং পাঞ্জাবের রাজনীতিতে আবারও ক্ষমতা, ষড়যন্ত্র এবং সত্যের আলোচনা জোরদার হয়েছে।

দেখুন সেই ভিডিওঃ

Scroll to load tweet…

এই ভি়ডিওর সত্যতা যাচাই করেনি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা