সংক্ষিপ্ত

ভদ্রী রাজ্যের রাজা ভাইয়ার নাম জানেন না, এমন মানুষ উত্তরপ্রদেশে খুঁজে পাওয়া ভার। রাজা ভাইয়া তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন।

গোবলয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বটে। তাই উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর রয়েছে গোটা দেশের। ইতিহাস বলছে উত্তরপ্রদেশে মাসল পাওয়ারের রাজনীতি চলে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলালেও এই ফ্যাক্টরকে অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন এই রাজ্যে শক্তিশালী নেতার অভাব নেই। তাদের কথা উঠলেই যাঁর নাম সবার আগে আসে, তিনি রাজা ভাইয়া। ভদ্রী রাজ্যের রাজা ভাইয়ার নাম জানেন না, এমন মানুষ উত্তরপ্রদেশে খুঁজে পাওয়া ভার। রাজা ভাইয়া তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। তিনি ২৪ বছর বয়সে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তারপর থেকে আজ অবধি রাজা ভাইয়া অপরাজেয়।

২০২২ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে (Uttar Pradesh assembly elections) প্রতিবারের মতো এবারও শক্তিশালী নেতার অভাব নেই (powerful leaders in UP)। নিজের নিজের এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে এদের জবাব নেই। এমনই এক বাহুবলী হলেন রাজা ভাইয়া (Raja Bhaiya)। রঘুরাজ প্রতাপ সিং (Raghuraj Pratap Singh), একজন প্রাক্তন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, তাঁর পিতা উদয় প্রতাপ সিং ভদ্রীর মহারাজা। 

রাজনৈতিক যাত্রা সহজ ছিল না

রাজা ভাইয়া বর্তমান সময়ে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির প্রধান মুখ হলেও, তাঁর যাত্রা এত সহজ ছিল না। তার বাবা চাননি তিনি (রঘুরাজ প্রতাপ সিং) রাজনীতিতে আসুন। কিন্তু বলা হয়, ভাগ্যে যা হয় তাই হয়। এখানেও একই ঘটনা ঘটেছে। রাজা ভাইয়া তার বাবার কাছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি চাইলে তিনি গুরুজির কাছে অনুমতি নিতে বলেন। এর পরই রাজা ভাইয়ার অপরাজেয় রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়।

১৯৯৩ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন রাজা ভাইয়া 

রঘুরাজ প্রতাপ সিং রাজা ভাইয়া ১৯৬৯ সালে ৩১শে অক্টোবর প্রতাপগড়ের ভদ্রী রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম উদয় প্রতাপ সিং এবং মায়ের নাম মঞ্জুল রাজে। তার মাও রাজ পরিবার থেকে এসেছেন। হয়তো খুব কম মানুষই জানবেন কিন্তু রাজা ভাইয়াকে অন্য নামেও ডাকা হয়। তাঁর সেই নাম তুফান সিং। রাজা ভাইয়া ১৯৯৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং তারপর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে বিধায়ক হয়ে আসছেন। আপাতত তিনি নিজের দলও গঠন করেছেন। রাজা ভাইয়া ৩১ নভেম্বর ২০১৮-এ জনসত্তা দল লোকতান্ত্রিক নামে একটি দল গঠন করেন।

রাজা ভাইয়া জিতেছেন ৬টি নির্বাচনে

প্রতাপগড়ের কুন্ডা বিধানসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর থেকেই রাজা ভাইয়া জিতে আসছেন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত হওয়া ৬টি নির্বাচনের সবকটিতেই জয়ী হয়েছেন। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে, রাজা ভাইয়া ৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। একই সময়ে, ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি বিজেপির জানকি শরণকে ১লক্ষ ৩৬ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে রাজা ভাইয়ার জয়ের ব্যবধানও বাড়ছে। যাইহোক, ২০০৭ সালে, এই ব্যবধান তুলনামূলকভাবে কম হয়েছিল। সেবছর তিনি BSP-এর শিব প্রকাশকে ৫৩ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন।

রাজা ভাইয়া মানেই বিতর্ক

রঘুরাজ প্রতাপ সিং বা রাজা ভাইয়ার বিতর্কের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। যে সময় বিএসপি সরকার ক্ষমতায় আসে, রাজা ভাইয়ার উপর পোটা আইন জারি করা হয় এবং তাকে জেলে পাঠানো হয়। ২০০৩ সালে, মায়াবতী সরকার তার বাবার প্রাসাদ এবং ভদ্রিতে বেন্টি কোঠিতেও অভিযান চালিয়েছিল। যাইহোক, এর পরে, ২০১২ সালে সমাজবাদী পার্টির সরকার গঠিত হলে, রাজা ভাইয়া মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।

মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ

রাজা ভাইয়া যখন এসপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, তখন কুণ্ডায় হাই প্রোফাইল খুন হয়েছিল। ডেপুটি এসপি জিয়া-উল-হক হত্যাকাণ্ডেও রাজা ভাইয়ার নাম জড়িয়েছিল। এই ঘটনার পর রঘুরাজ প্রতাপ সিংকে অখিলেশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়। যদিও সিবিআই তদন্তে রাজা ভাইয়া এই মামলায় ক্লিন চিট পেয়েছেন।

বেন্টি কোঠির সেই পুকুর

রঘুরাজ প্রতাপ সিংয়ের বেন্টি কোঠি সম্পর্কে বলা হয় যে এর পিছনে একটি ৬০০ একর পুকুর রয়েছে। এই পুকুর সম্পর্কিত অনেক ভীতিকর গল্পও সামনে এসেছে। কথিত আছে, রাজা ভাইয়া ওই পুকুরে কুমীর পুষতেন। শত্রুদের হত্যা করে একই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে রাজা ভাইয়া এসব গল্পকে গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন বরাবর। 

আরও পড়ুন-উত্তরপ্রদেশে ৯১ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ বিজেপির, নতুনদের সঙ্গেই ফের পুরনোতে আস্থা দলের

আরও পড়ুন- গরিমা হারাচ্ছে বিশ্বভারতী, উপাচর্যের মন্তব্যে ফের বিতর্কের ঝড়

এদিকে, উত্তরপ্রদেশে ইন্ডিয়া নিউজ ও জন কি বাত-এর সর্বেশেষ সমীক্ষা। ২২ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ২০ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলেই এই নির্বাচনী সমীক্ষা করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১৮-৩৫ বছর বয়সী রয়েছে ৩০ শতাংশ। ৩৫-৪০ বছর বয়সী রয়েছে ৪৫ শতাংশ। ৪৫ উর্ধ্ব রয়েছে ২৫ শতাংশ। যাদের অধিকাংশই বিজেপির প্রতি আস্থা রেখেছেন। নির্বাচনী সমীক্ষায় স্পষ্ট এবারও উত্তর প্রদেশে কাজ করবে না প্রিয়াঙ্কা ম্যাজিক। 

ইন্ডিয়া নিউজ ও জনকি বাতের নির্বাচনী সমীক্ষায় স্পষ্ট প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছিলেন তা ফলপ্রসূ হবে না। কার্যত এই রাজ্যে সবথেকে প্রথমে প্রচার শুরু করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। মহিলাদের টর্গেট করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে তিনি সফল হবেন না বলেও ইঙ্গিত রয়েছে সমীক্ষা। বিধানসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির হারেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।

ভোট সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাবে জাতপাত। দ্বিতায় স্থানে রয়েছে উন্ননয় ও আইনশৃঙ্খলা। উন্নয়নপ্রকল্পেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে। তবে মূল্যবৃদ্ধি তেমন গুরুত্ব পাবে না নির্বাচনে।