সংক্ষিপ্ত

ভারতীয় সেনা জওয়ানদের স্বপ্নে আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী তনোট। তিনিই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্ষা করেছিলেন ভারতের বীরদের। গুটিকয়েক ভারতীয় জওয়ানের কাছে হেরে গিয়েছিল বিশাল পাক সেনা। অদ্ভুত কাহিনী নিয়ে আজও পূজিতা আওয়াদ মাতা। 

ভারতের রাজস্থানে অবস্থিত হলেও পাকিস্তান সীমানার থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। অতএব, শত্রু-দেশের রোষ যে এখানে খুব সহজেই পড়তে পারে, সেই ঘটনা অবিশ্বাস্য নয়। কিন্তু, যা অবিশ্বাস্য, তা হল, শত্রুর শয়ে শয়ে আক্রমণের পরেও স্থির অটলভাবে টিকে থাকা। এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে রাজস্থানের তনোট মায়ের মন্দিরে, জয়সলমের থেকে যার দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। 

লোঙ্গেবালা সীমান্ত- লাগোয়া মন্দিরে স্থাপিত তনোট মা বা স্থানীয় ভাষায় দেবী ‘আওয়াদ মাতা’ অতি জাগ্রত, এমন বিশ্বাস শুধুমাত্র স্থানীয় গ্রামবাসীদেরই নেই, আছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের মধ্যেও। ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স‌  বা BSF-এর একটি ট্রাস্টই এখন এই মন্দির দেখাশোনার দায়িত্বে আসীন। কিন্তু, কেন এমন বদ্ধমূল বিশ্বাস? 

-
মনে করা হয় যে, দেবী হিংলাজের একটি রূপ হলেন দেবী তনোট। তিনিই কর্ণী মাতার রূপ ধারণ করেছিলেন। অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজস্থানে তনোট দেবীর মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় রাজস্থান সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সেসময়ে সেনার কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। এই সুযোগটা নিয়ে সাদেওয়ালা পোস্টের কাছে কিষাণগড়-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। সেই সময় ভারতের ১৩ গ্রেনেডিয়ার বাহিনীর সেনারা নিজেদের ঘাঁটি রক্ষা করতে লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাদেওয়ালায়। 

-
১৭ নভেম্বর সাদেওয়ালায় তনোট দেবীর মন্দিরের কাছে একটি সেনাঘাঁটিতে হামলা হয়। হামলার সময় বেশ কয়েকটি বোমা ওই মন্দিরের পাশে এসে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা এটাই যে, একটি বোমাও ফাটেনি। কথিত আছে, ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তনোট মন্দিরের আশপাশে প্রচুর বোমা ফেলেছিল পাক সেনা। দেবী তনোট নাকি ভারতীয় সেনা জওয়ানদের স্বপ্নে আবির্ভূতা হয়েছিলেন।  মন্দিরের কাছে যারাই থাকবেন, দেবী তাঁদের প্রাণরক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, শুধু ওই একটি বছরে নয়।

-
১৯৭১ সালেও নাকি ত্রাতা রূপে সুরক্ষা দিয়েছিলেন দেবী তনোট। ১৯৭১-এর যুদ্ধে পাক সেনা সাদেওয়ালার পরিবর্তে লোঙ্গেবালা ঘাঁটিতে হামলা করে। এই ঘাঁটিটিও মন্দিরের কাছেই ছিল। মেজর কুলদীপ সিং চাঁদপুরীর নেতৃত্বে ১২০ জন সেনা লোঙ্গেবালা ঘাঁটি পাহারা দিচ্ছিলেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ওই ঘাঁটির সেনারা দেবী তনোটের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের একটি পূর্ণ ব্যাটালিয়ন এবং সাঁজোয়া গাড়ি লোঙ্গেবালা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। কিন্তু তখনও নাকি আশ্চর্যজনকভাবে, পাক সেনার নিক্ষেপ করা একটা বোমাও ফাটেনি। সেবার গুটিকয়েক ভারতীয় জওয়ানের কাছে হেরে গিয়েছিল বিশাল পাক সেনা। 

-
১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে তনোট দেবীর মন্দির আরও বড় করে নির্মাণ করা হয়। মন্দিরের ভিতর একটি জাদুঘর তৈরি করে বিএসএফ । লোঙ্গেবালার জয়কে চিরস্মরণীয় করতে মন্দির প্রাঙ্গণে একটি বিজয়স্তম্ভ স্থাপিত হয়। প্রত্যেক বছর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় উদযাপন করে ভারতের বাহিনী। 


আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।