সংক্ষিপ্ত

মোদী মন্ত্রীসভায় নতুন মুখ রাজীব চন্দ্রশেখর

ভারতের অন্যতম সেরা উদ্যোগপতি তিনি

সেইসঙ্গে গত ১৫ বছর ধরে রাজ্যসভার অন্যতম সেরা সাংসদও

বর্তমানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় মুখপাত্র

বুধবার, মোদী মন্ত্রীসভায় স্থান পেলেন ভারতের অন্যতম সেরা উদ্যোগপতি রাজীব চন্দ্রশেখর। তবে শুধু উদ্যোগপতি হিসাবেই নন, গত তিন মেয়াদে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবেও দেশ সেবা করে চলেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় মুখপাত্রও। মঙ্গলবারই জানা গিয়েছিল মন্ত্রিসভায় অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং শিক্ষিত মুখ চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমাজের জেনে নেওয়া যাক তাঁর চমকপ্রদ উত্থানের কাহিনী।

এমআইটি, মনিপাল থেকে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে রাজীব চন্দ্রশেখর স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনার জন্য আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন। শিকাগোর ইলিনয়িস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স-এ এমএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বস্টনের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যআনেজমেন্টের ডিগ্রি, স্ট্য়ানফোর্ড এবং ইনটেল ইউনিভার্সিটি থেকে প্রযুক্তির বিষয়ে আরও বেশ কয়েকটি কোর্স করে তিনি প্রবেশ করেছিলেন পেশাদার জগতে।

প্রথমে আমেরিকাতেই। ইনটটেল সংস্থার মাইক্রোপ্রসেসর টিমে প্রথমে সিনিয়র ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার ও পরে সিপিইউ আর্কিটেক্ট হিসাবে কাজ করেছিলেন। বিখ্যাত পেন্টিয়াম প্রসেসরের আর্কিটেকটার টিমের সদস্য ছিলেন তিনি। কাজ করেছিলেন ইনটেলের দুই প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব, ভিন ধ্যাম ও ইনটেলের বর্তমান  সিইও প্যাট গেলসিঙ্গার-এর অধীনে। এখানেই ইতি রাজীবের আমেরিকা পর্বের।

১৯৯১ সালে ভারতে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিপিএল মোবাইল সংস্থার। যে কয়েকজন ব্যক্তির হাত ধরে ভারতে টেলিকম ব্যবসা গড়ে উঠেছিল, তার অন্যতম হলেন রাজীব চন্দ্রশেখর। সেই সময় অনেক প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগপতিও টেলিকম ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে দ্বিধা করেছিলেন। পরের বারো বছরে মুম্বই, কেরল, পদুচেরি, গোয়া, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র জুড়ে ভারতের তৎকালীন সর্ববৃহৎ সেলুলার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। টেলিকম রেগুলেটর ট্রাই এবং ১৯৯৯ সালের টেলিকম নীতি গঠনের পিছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

আরও পড়ুন - 'ধোঁয়া থাকলে আগুনও আছে' - 'না বলতেই' পদত্যাগ বাবুলের, উগরে দিলেন 'দুঃখ'

আরও পড়ুন - টিম মোদীতে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী নিশীথ, অবশেষে ভারতের মানচিত্রে জায়গা পেল কোচবিহার-রাজবংশী

আরও পড়ুন - ৫ বছর পর ফের মন্ত্রিসভায় সর্বানন্দ সোনোয়াল, বর্ণময় তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার

তবে, সেখানেই আটকে থাকেননি তিনি। ২০০৬ সালে এ রাজা'র দুর্নীতিরাজ শুরু হওয়ার মুখেই তিনি টেলিকম ব্যবসার জগত থেকে সরে গিয়েছিলেন। ওই বছরই জুপিটার ক্যাপিটাল নামে একটি প্রাইভেট ইকুইটটি ইনভেস্টর সংস্থা স্থাপন করেছিলেন  তিনি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান। এরপর থেকে মিডিয়া, প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে তিনি একের পর এক সফল ব্র্যান্ড ও ফ্র্য়াঞ্চাইজি গঠন করেছেন বা বিনিয়োগ করেছেন। সেইসঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন-এর ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।

এটা গেল রাজীব চন্দ্রশেখরের জীবনের একটি দিক। উদ্যোগপতি হিসাবে সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদও বটে। গত ১৫ বছর ধরে তিনি বিজেপির সমর্থনে রাজ্যসভার সাংসদ। তবে রাজনীতিতে আসাটা তাঁর যেন বাধাই ছিল। কারণ বরাবরই সমাজসেবা থেকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সম্মান প্রদর্শন - সমস্ত রকম সামাজিক কাজে আগ্রহী ছিলেন তিনি। সংসদে প্রথম ৮ বছর (২০০৬-২০১৪) তিনি ছিলেন বিরোধী ভূমিকায়। আর তারপর থেকে রয়েছেন শাসক দলের সাংসদ হিসাবে। বিরোধী বা শাসক, যে আসনেই তিনি থাকুন না কেন, মানুষের জন্য লড়াই করেছেন।

বিরোধী আসনে থেকে তাঁর সবথেকে বড় সাফল্য ছিল ২জি কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সংসদের ভিতর লড়াই। তিনিই প্রথম এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। ৬৬ এ ধারা বাতিলের জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের, গোপনীয়তার অধিকার, ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্টারনেট, ইউপিএ সরকারের আধার আর্কিটেকচর, পাবলিক সেক্টরের ব্যাঙ্কের এনপিএ সমস্যা, ওআরওপি, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ভোটদানের অধিকার, ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল স্থাপন, কার্গিল বিজয় দিবস পাল-এর মতো বিষয়গুলি নিয়ে সংসদে  আওয়াজ তুলেছিলেন রাজীব চন্দ্রশেখর। এছাড়া সাংসদ হিসাবে ২০০৯ সালে কর্নাটকের বন্যা পরবর্তী পুনর্গঠন এবং ২০০৯-১০ সালে বেঙ্গালুরু শহরের ভবিষ্যত উন্নয়নের পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি।

বর্তমানে তিনি অর্থ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। ২০১৯ সালের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য (পিএসি)-ও ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে তথ্য সুরক্ষা বিল ২০১৯-এর যৌথ কমিটি এবং ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। এছাড়া বিশ্ব বিষয়ক ভারতীয় কাউন্সিলেরও সদস্য রাজীব চন্দ্রশেখর। শাসক দলের চেয়ারে বসেও নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

একইসঙ্গে, সংসদের বাইরেও রাজনীতিতে সমান উত্থান ঘটছে তাঁর। বর্তমানে তিনি বিজেপির জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব রয়েছেন। সেইসঙ্গে তিনি দলের ভিশন ২০২৫ কমিটির আহ্বায়কও। ২০১০-এ তাঁকে কেরল এনডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের কর্নাটক নির্বাচনে তিনি ছিলেন দলের মিডিয়া ও যোগাযোগ ইনচার্জের দায়িত্বে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও একই ভূমিকা পালন করেন। ২০১৯ সালের বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার কমিটিতেও রাখা হয়েছইল তাঁকে। ২০২১ সালের পদুচেরি নির্বাচনে সহ-ইনচার্জের ভূমিকা থেকে তিনি দলকে সাফল্যও এনে দিয়েছেন।

এবার নতুন দায়িত্বেও তিনি সমান সফল হবেন, তেমনই আশা করা হচ্ছে। এদিন শপথ নেওয়ার পর রাজীব চব্দ্রশেখর বলেন, 'এমপি হিসাবে আমি আমার সেরাটা দিয়ে ১৫ বছর ধরে জাতির সেবা করেছি। প্রধানমন্ত্রী মোদির দল প্রাণবন্ত বিকাশমান সমৃদ্ধ ভারত গড়ার কাজ করছে। এমন একটি দলে আমাকে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে আমি সম্মানিত'।