সংক্ষিপ্ত

‘যে দেশকে আমরা গভীরভাবে ভালোবাসতাম তার ওপর ছায়া পড়ে আছে’, ভারতে মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়া নিয়ে সরব লেখক সলমন রুশদি। সমীক্ষা অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, ডিজিটাল অধিকারের বিরুদ্ধে হুমকির বাড়বাড়ন্ত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সম্প্রতি নিউইয়র্কে ছুরির ঘায়ে একেবারে খুন করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল তাঁকে, পাঞ্জা লড়েছেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর সঙ্গে, এবার বর্তমান ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে আওয়াজ তুললেন বিশ্ববরেণ্য লেখক সলমন রুশদি। গভীর আক্ষেপে লিখলেন, “যে দেশকে আমরা গভীরভাবে ভালোবাসতাম তার ওপর ছায়া পড়ে আছে।” 

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে রুশদি সহ ১০০ জনেরও বেশি লেখক এই দেশের এখনকার মানবাধিকারের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বে বাক স্বাধীনতা প্রকাশের সংগঠন ‘দ্য পেন’ দ্বারা প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে ১১৩ জন ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সম্মিলিতভাবে "ইন্ডিয়া অ্যাট ৭৫" শিরোনামে গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে একটি বিবরণী প্রকাশ করেছেন। 


সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১০২ জন লেখক এবং দ্য পেন-এর সমর্থকরা স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে ভারতে লেখনীর স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। নিজের ওপর হামলা হওয়ার আগে রুশদি এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। মেহতা, রুশদি এবং রাজমোহন গান্ধির সংক্ষিপ্ত লেখাগুলি এই প্রতিবেদনের শুরুতে যোগ করা হয়েছে।

১৯৮৮ সালে ভারতই প্রথম রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিষিদ্ধ করেছিল এবং সেসময়ে এই লেখক দেশে ফেরার জন্য সরকারী কর্তৃপক্ষ এবং ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলির প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বম্বেতে জন্ম নেওয়া সলমন রুশদি শেষবার ভারত সফরে এসেছিলেন ২০১৩ সালে।

১১৩ জন লেখকের (তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিরণ দেশাই, ঝুম্পা লাহিড়ী, গীতাঞ্জলি শ্রী, গণেশ দেবী, প্রিয়মবদা গোপাল, শোভা দে, অশোক বাজপেয়ী এবং মেহতা) বার্তাগুলির সাথে দ্য পেন-এর ভূমিকায়, ১৯৭৫ সালের এমারজেন্সি এবং স্বাধীন ভারত দ্বারা কঠোর ঔপনিবেশিক আইন বজায় রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এটিতে বলা হয়েছিল, “২০১৪ সালের নির্বাচন ভারতকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করেছে যেখানে ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করা হয় এবং উচ্চস্বরে সেগুলি প্রচার করা হয়। এখানে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য করা হয় এবং তাঁদের মারধর করা হয়। তাদের বাড়িঘর ও মসজিদ বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়, তাদের জীবিকা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এখানে খ্রিস্টানদের মারধর করা হয় এবং গীর্জা আক্রমণ করা হয়। এখানে রাজনৈতিক বন্দীদের বিনা বিচারে কারাগারে রাখা হয়। ভিন্নমত পোষণকারী সাংবাদিক ও লেখকদের দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।”

লেখাটির ভূমিকাতে বলা হয়েছে, "যে প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে, তারা হল আদালত, সংসদ, সিভিল সার্ভিস এবং বেশিরভাগ মিডিয়া, যাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা দুর্বল করা হয়েছে।” লেখার স্বাধীনতা প্রসঙ্গে PEN আমেরিকার সবচেয়ে সাম্প্রতিক সূচকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে কম গণতন্ত্র থাকা দেশগুলির মধ্যে ভারত প্রথম দশের মধ্যে পড়ে যেখানে লেখক এবং বুদ্ধিজীবীরা কারাগারে বন্দি হন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতে কথা বলা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, ডিজিটাল অধিকারের বিরুদ্ধে হুমকির বাড়বাড়ন্ত, অনলাইন ট্রোলিং এবং হয়রানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, ‘পেন আমেরিকা’ ভারত এবং ভারতীয় প্রবাসী লেখকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে তাঁদের নিজস্ব অনুভূতি লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করার লক্ষ্যে। একসাথে এতগুলি স্বাধীন মতবাদ সারা বিশ্বের রেকর্ডে একটি ঐতিহাসিক দলিল।


আরও পড়ুন-
কে এই হাদি মার্তার? সলমন রুশদির হামলার কারণও জানাল পুলিশ
ঐক্যের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করার জন্য ধর্ম বর্ণ জাতের প্রশ্ন নিয়ে আসা হয়: স্বাধীনতা দিবসে সরব বিমান বসু

যার ঘরই নেই, সে কোথায় পতাকা লাগাবে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন বিমান বসুর