সংক্ষিপ্ত
দুর্গম পাহাড়ের ওপরে এসে আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। ভারতেই রয়েছে সেই বিরাট মন্দির।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমীর উৎসব উদযাপিত হয় এবং এই বছর এই শুভ তিথি পড়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি , বুধবার। এই দিনে জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকে পূর্ণ আচার মেনে পূজা করা হয়। বসন্ত পঞ্চমীর উৎসবটি বসন্তের সূচনাও করে, যা সমস্ত ঋতুর রাজা হিসেবে বিবেচিত। আজ, বসন্ত পঞ্চমী উপলক্ষে, এমন একটি মন্দিরের কথা বলব, যেখানে মা সরস্বতী প্রথমবারের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। কথিত আছে যে, দেবী সরস্বতী এখনও এখানে অবস্থান করেন এবং সমস্ত ভক্তদের ইচ্ছা পূরণ করেন।
-
মা সরস্বতীর পৃথিবীতে প্রথম আবির্ভাব হয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের মানা গ্রামে। এই মন্দিরটি বদ্রীনাথ থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে অবস্থিত। এই জায়গাটিকে দেশের শেষ গ্রামও বলা হত। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে এটি ভারতের প্রথম গ্রামে পরিণত হয়েছে, যেখানে মা সরস্বতীর মন্দির রয়েছে। মানা গ্রাম উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত, যা ভারতের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত, এই মন্দিরের নাম সরস্বতী মন্দির। এটা বিশ্বাস করা হয় যে , দেবী সরস্বতী যখন মহাবিশ্বে আবির্ভূত হন, তখন তিনি এই স্থানেই আবির্ভূত হয়েছিলেন।
দেবী সরস্বতী ছাড়াও এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক পুরাকথা। এই স্থানটিকে ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় বৈকুণ্ঠও বলা হয়। সুন্দর পর্বত ও উপত্যকার মাঝখানে অবস্থিত, এই স্থান থেকেই মহাভারতের সময় পাণ্ডবরা স্বর্গে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এছাড়া এই স্থানে মহর্ষি বেদব্যাস ও দেবতা গণেশের একটি গুহা রয়েছে। মনে করা হয় এই গুহায় বসেই ব্যাসদেব প্রথমবার গণেশকে মহাভারতের কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন, যা শোনার পর তিনি গল্পটি লিখেছিলেন।
মা সরস্বতীও এই স্থান থেকে নদীর আকারে উৎপন্ন হয়েছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে, গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর মধ্যে বিবাদের কারণে মা সরস্বতীকে নদী রূপে আবির্ভূত হতে হয়েছিল। বিষ্ণুপুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবতকথায় এই কাহিনীর উল্লেখ আছে। সরস্বতী নদী এবং অলকানন্দী নদীর সঙ্গমও এই স্থানে হয়েছে। সরস্বতী নদীর উপরে একটি শিলা আছে, যাকে ভীম শিলা বলা হয়। কথিত আছে যে, ভীম তাঁর স্বর্গ যাত্রার সময় এই পাথরটি রেখেছিলেন, যাতে পাণ্ডবরা এবং দ্রৌপদী সরস্বতী নদী পার হয়ে স্বর্গে যেতে পারেন।
-
এই মন্দিরে মাতা সরস্বতীকে মূর্তি আকারে পূজা করা হয় এবং মূর্তিটি একটি গুহার মধ্যে রয়েছে। সরস্বতী নদীর উৎসও মন্দিরের কাছে এবং সরস্বতী জলের স্রোত মন্দিরের ঠিক বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। কথিত আছে, এই মন্দিরে গেলেই মানুষের সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যায়। চারদিকে পাহাড়, বন আর নদীর মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরের দৃশ্য ভীষণ সুন্দর।