সংক্ষিপ্ত

কেরলে লাইফ মিশন দুর্নীতি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই তোলপাড় চলছে। এর আগে সিবিআই এই দুর্নীতিতে এক বিল্ডারকেও এই ঘটনায় গ্রেফতার করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে একাধিক সরকারি আধিকারিককেও এই দুর্নীতিতে জেরা করছিল সিবিআই ও ইডি।

 

শেষ রক্ষা আর হল না। ইডির হাতে গ্রেফতার হতে হল কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নের প্রাক্তন ব্যক্তিগত আপ্ত-সহায়ককে। শিবশঙ্কর নামে এই প্রাক্তন আপ্ত-সহায়কের নাম জড়িয়েছে কেরলের লাইফ মিশন দুর্নীতিতে। ২০১৮ সালের কেরলে যে বন্যা হয়েছিল। তাতে দুর্গতদের ঘর বানিয়ে দেওয়ার জন্য যে অর্থ সাহায্য এসেছিল, তাতেই অনেক নয়ছয় হয়েছিল বলে অভিযোগ। আর এই আর্থিক নয়ছয়ে নাকি জড়িত রয়েছেন শিবশঙ্করের মতো একাধিক শীর্ষ আমলা-সহ বিল্ডার এবং কিছু প্রভাবশালী। এমনই অভিযোগ করেছে সিবিআই ও ইডি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতেই সরকারি আমলার কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন শিবশঙ্কর। কিন্তু, লাইফ মিশন দুর্নীতি তাঁর পিছু ছাড়েনি। গত সোমবার থেকে তাঁকে লাগাতার জেরা করছিল ইডি। সরকারি কর্মজীবন শেষ হওয়ার শেষদিনেই ইডি শিবশঙ্করকে জেরা করার সমন পাঠিয়েছিল। কিন্তু, শিবশঙ্কর সেই সময় ইডি-কে নতুন তারিখ দিতে অনুরোধ করেছিলেন। আর তার ভিত্তিতেই তাঁকে নতুন তারিখ দিয়েছিল ইডি। কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা শিবশঙ্করের আগে স্বপ্না সুরেশ এবং আরও দুই সরকারি অফিসারকে জেরা করেছিল। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নাকি জেরা করা হয় শিবশঙ্করকে। স্বপ্না সুরেশ এর আগে কেরলের গোল্ড স্মাগলিং কেসে অভিযুক্ত হয়ে জেল খেটে বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। লাইফ মিশন দুর্নীতিতে স্বপ্না সুরেশের নাম জড়ানোর পর জল্পনা চলছিল যে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের আর কাকে কাকে জেরা করতে পারে ইডি সেই নিয়ে। শিবশঙ্করকে ইডি সমন পাঠাতেই এই জল্পনার অনেকটাই পরিস্কার ধারনা তৈরি হয়েছিল।
এই একই দুর্নীতি মামলায় সিবিআই ইউনিটেক নামে একটি নির্মাণ সংস্থার সন্তোষ ইয়াপেন-কে গ্রেফতার করেছিল। এর সঙ্গে সঙ্গে শিবশঙ্করকেও একদফা জেরা করেছিল। লাইফ মিশন প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে কেরলের গোল্ড স্মাগলিং কেসের পিছু ধরেই। গোল্ড স্মাগলিং কেসের তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় সংস্থা লাইফ মিশনে আর্থিক নয়ছয়ের হদিশ পায়। ২০২০-র জুনেই শিবশঙ্কর একদফা জেল খাটেন গোল্ড স্মাগলিং কেসে। সিবিআই এই ঘটনার তদন্তে নেমে স্বপ্না সুরেশ এবং শারিথকে এই গোল্ড স্মাগলিং-এর অন্যতম কুশীলব বলে চিহ্নিত করে। এই দুজনেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহী কনস্যুলেটের কর্মী ছিলেন। স্বপ্না সুরেশের সঙ্গে গভীর যোগ ছিল কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের। স্বপ্না যে একজন প্রভাবশালী এবং মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে তাঁর যথেষ্টই আঁতাত রয়েছে তা সিবিআই-এর তদন্তেই সামনে এসেছিল।

লাইফ মিশন প্রকল্পের তদন্তে সিবিআই জানতে পারে যে ইউনিটেক বলে যে সংস্থা বন্যা দুর্গতদের জন্য বাড়ি বানানোর বরাত পেয়েছে তাতে কোনও টেন্ডারই হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় ৯৭টি বাড়ি এবং একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হওয়ার কথা ছিল। তদন্তে আরও সামনে আসে যে গোল্ড স্মাগলিং কেসে অন্যতম দুই অভিযুক্ত লাইফ মিশন প্রকল্প নিয়ে ইউনিটেক-এর সঙ্গে ব্যক্তিগত চুক্তি করেছিলেন। আর এই চুক্তিতে প্রকল্পের জন্য আসা মোট অর্থ বরাদ্দ থেকে ৩০ শতাংশ নিশ্চিত করেছিলেন স্বপ্না সুরেশ এবং শারিথ। তাদের তদন্তে এমনই অভিযোগ করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরও জানায় যে, স্বপ্না সুরেশ এবং কেরলের কিছু সরকারি আমলার জন্য বরাদ্দ ছিল ১০ শতাংশ কমিশন, আর বাকি ২০ শতাংশ কমিশন গিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সরকারের কিছু আধিকারিকের পকেটে। এমনকী সিবিআই এমনও দাবি করে যে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নের তৎকালীন ব্যক্তিগত আপ্ত-সহায়ক শিবশঙ্কর নিজের চেম্বারে ইউনিটেক-এর প্রধান সন্তোষের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বপ্না সুরেশও। এছাড়াও ছিলেন লাইফ মিশন প্রকল্পের সিইও ইউ ভি জোসেফ। লাইফ মিশন প্রকল্পে ঘর বানাতে সরকারের তরফে সব ধরনের সাহায্যের নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন শিবশঙ্কর। এমন অভিযোগও প্রকাশ্যে আনে সিবিআই।
আরও পড়ুন- 
'কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়', বিবিসি ইস্যুতে বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে সুর চড়ালেন মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর 
দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান, টেলিফোনে মোদী কথা বললেন বাইডেনের সঙ্গে 
শ্রদ্ধার ছায়া! সহবাস-সঙ্গীকে হত্যা করে দেহ লুকিয়ে রাখল ধাবার ফ্রিজে, পুলিশের জালে প্রেমিক