এখনও কংগ্রেসে সর্বেসর্বা সনিয়া গান্ধী
অথচ রাজনীতিতে আসতেই চাননি তিনি
রাজীবের সঙ্গে আলাপের সময় ছিলেন ইতালির এক রেস্তোরাঁর কর্মী
সেখান থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে কীভাবে উত্থান ঘটল তাঁর
তপন মল্লিক: তাঁকে অ-ভারতীয় বলাটা বোকামি। যাঁর এ দেশে পরিচয়ের শুরু হয় ভারতের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রীর পুত্রবধূ হিসেবে তাঁকে অ-ভারতীয় বলা হবে কোন যুক্তিতে। তারপর তো তাঁর পরিচয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্ত্রী কথাটাও আছে। রাজীবের সঙ্গে সনিয়ার প্রথম আলাপ কেমব্রিজে থাকাকালীন এক রেস্তোরাঁয়৷ সেখানে হাতখরচ জোগাড় করতে পার্ট টাইম কাজ করতেন সনিয়া মাইনো৷ রাজীব ওই রেস্তোরাঁর মালিককে সনিয়ার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে বলেছিলেন। তার জন্য রেস্তোরাঁ মালিক রাজীবের কাছ থেকে মোটা টাকাও নিয়েছিলেন। রাজীব দামী পানীয় আর ন্যাপকিনে ছোট্ট একটি কবিতা লিখে সনিয়াকে উপহার দিয়েছিলেন। এরপর আলাপ প্রেমে পরিণতি পায়৷ ওই সময় তাঁরা মাঝে মাঝে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতেন। শোনা যায় তাদের একসঙ্গে দেখা প্রথম ছবিটি নাকি সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি৷
সনিয়া জানতে পারেন রাজীব ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছেলে। ইন্দিরা নেহরু এগজিবিশনে লন্ডনে থাকার সময় রাজীব মায়ের সঙ্গে সনিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ইন্দিরা, সনিয়াকে বলেছিলেন, বিয়ের আগে সনিয়া যেন ভারতে এসে কদিন থেকে যান৷ মনে হয় অন্য সংস্কৃতি কতটা সনিয়া মানিয়ে নিতে পারবেন সে কথা ভেবেই। রাজীব দিল্লিতে ফেরার কয়েকমাস পর সনিয়া দিল্লি এসেছিলেন৷ সনিয়া উঠেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বচ্চন পরিবারে৷ ইন্দিরা মন থেকে না মানতে পারলেও বিয়ে দিতে দেরি করেননি৷ অমত ছিল সনিয়ার বাবা স্টেফানো মাইনোর৷ আপত্তিটা রাজনৈতিক পরিবার বলে। সনিয়ার বিয়ের মেহেন্দি হয়েছিল হরিবংশ রাই বচ্চনের বাড়িতে।
সনিয়ার নতুন সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল। শাড়ি পরা থেকে শুরু করে হিন্দি ভাষা শেখা, সব কিছুই ধীরে ধীরে রপ্ত করেন তিনি৷ তবে রাজনীতিতে আসার কোনও ইচ্ছা ছিল না সনিয়ার৷ এমনকি চাননি রাজীবও সে পথে পা রাখুক। কিন্তু এমন পরিবার আর এমনই ঘটনাক্রম যে নিয়তির নির্দেশ অমান্য করে কার সাধ্য৷ মাত্র ২৩ বছরেই দেখলেন রাজনীতির চড়াই-উতরাই। ইন্দিরা গান্ধীর এমার্জ্যান্সি থেকে শুরু করে সরকার থেকে কংগ্রেসের বিদায়, ইন্দিরা হত্যাকাণ্ড, তারপর আবার কামব্যাক, রাজীব হত্যাকাণ্ড... ২১ শতকে এসে সনিয়া গান্ধীই হয়ে উঠলেন কংগ্রেসের সুপ্রিমো।
রাজীব ও সন্তানদের সঙ্গে সনিয়া
ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা অধ্যায়ে সনিয়ার নাম দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেখা হতেই পারত, কিন্তু হতে দেননি নিজে। তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা হয়ত গান্ধী পরিবারের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ, রাহুল তখন রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নয়। মেয়ে প্রিয়ঙ্কা রাজনীতিতে আসবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ ছিল। তাই, নিজেকে রাজনীতিতে আরও ঝালিয়ে নিতে সময় নিয়েছিলেন। সে সময় তিনি ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নিজেও এলেন না, প্রণবের নামও করলেন না। তিনি নিয়ে এলেন গান্ধী পরিবারের প্রতি আন্তরিক এবং নিপাট ভদ্র ও শিক্ষিত মানুষ মনমোহন সিংকে। যাকে নিয়ন্ত্রণ করাটা তাঁর পক্ষে অনেকটাই সহজ ছিল। আর কংগ্রেসের সর্বেসর্বা হয়ে গান্ধী পরিবারের পরের প্রজন্মের জন্য রাজনীতির পথকে প্রশস্ত করাটাই সেরা সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ তথা রাজীব গান্ধীর স্ত্রী। অন্যদিকে মনমোহনকে সামনে রেখে তিনি কংগ্রেসের মধ্যে তখন তুষের মতো ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকা বিদ্রোহের আগুনটাকে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন - মোদী সরকার পাঠালো ২০ পাতার খসড়া প্রস্তাব - কী আছে তাতে, প্রতিবাদীরা কৃষকরা কি মানবেন
আরও পড়ুন - 'সরকার আছে কতক্ষণ', পঞ্চায়েত ভোট থেকেই শোনা যাচ্ছে আরও এক রাজ্যে কংগ্রেসের বিদায় বাজনা
এই সনিয়া গান্ধী ১৯৯৭ সালের কলকাতা প্লেনারি সেশনে সরকারিভাবে কংগ্রেস দলে নাম লেখান। ১৯৯৮-এ দলের প্রাথমিক সদস্যপদ পাওয়ার মাত্র ৬২ দিনের মাথায় দলের নেত্রী হন। কিন্তু, শরদ পাওয়ার থেকে শুরু করে পি এ সাংমা, তারিক আনোয়ারদের মতো তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতারা তার বিরোধিতা করেছিলেন। সনিয়ার বিদেশিনী পরিচয়কে তুলে ধরে কংগ্রেসের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তাঁরা। ওই তিন বিদ্রোহী কংগ্রেস নেতাকেই দল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, যিনি কখনই রাজনীতিতে আসতে চাইনি। তাঁকেই কেন রাজনীতির মঞ্চে ব্যাটন ধরতে হল? যে কংগ্রেস একসময় দেশ শাসন করেছে, সেই কংগ্রেসের হাল মনে হয় এত খারাপ আগে কখনও হয়নি। আবার এটাও ঠিক কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের আধিপত্যে সনিয়া এখনও অপরাজিত।
Read Exclusive COVID-19 Coronavirus News updates, from West Bengal, India and World at Asianet News Bangla.
খেলুন দ্য ভার্চুয়াল বোট রোসিং গেম এবং চ্যালেঞ্জ করুন নিজেকে। கிளிக் செய்து விளையாடுங்கள்
Last Updated Dec 9, 2020, 4:36 PM IST