আরাবল্লী পাহাড়ের সংজ্ঞা নিয়ে ওঠা বিতর্কে সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছে। আদালত সোমবার এই মামলার শুনানি করবে। আদালত ইতিমধ্যেই চারটি রাজ্যে নতুন খনির লিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে একে পরিবেশের ঢাল বলে অভিহিত করেছে। 

আরাবল্লী পাহাড় বিতর্ক: দেশের সবচেয়ে পুরোনো পর্বতমালা আরাবল্লী পাহাড় নিয়ে চলা বিতর্কে এবার সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকেই পদক্ষেপ (Suo Motu) নিয়েছে। আদালত আজ, সোমবার এই মামলার শুনানি করবে। এই মামলাটি আরাবল্লী পাহাড়ের সংজ্ঞা, খনির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করবে, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি (CJI) সূর্যকান্ত। তাঁর সঙ্গে বেঞ্চে বিচারপতি জে.কে. মহেশ্বরী এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহও থাকবেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই মামলার ৫টি বড় ফ্যাক্ট এবং কেন এই মামলাটি এত গুরুত্বপূর্ণ?

আরাবল্লী পাহাড়ের মামলাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আরাবল্লী পাহাড় শুধু পাথরের সমষ্টি নয়, বরং এটি মরুভূমির বিস্তার রোধকারী একটি সবুজ প্রতিবন্ধক। এটি জীববৈচিত্র্যের (Biodiversity) একটি বড় কেন্দ্র। ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণেই এই পাহাড়গুলিতে খনি ও নির্মাণকাজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে।

আরাবল্লী পাহাড়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কেন নিজে থেকে পদক্ষেপ নিল?

২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আরাবল্লী পাহাড়ের একটি অভিন্ন এবং বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞাকে অনুমোদন দিয়েছিল। এরপর খনি শিল্প এবং কিছু রাজ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ক্রমবর্ধমান বিতর্ক দেখে আদালত নিজেই এই বিষয়টিকে গুরুতর মনে করে শুনানির সিদ্ধান্ত নেয়।

আরাবল্লী মামলার সঙ্গে জড়িত ৫টি বড় ফ্যাক্ট

১. চারটি রাজ্যে নতুন খনির লিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা

সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাটে আরাবল্লী অঞ্চলে নতুন খনির লিজ দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, যতক্ষণ না বিশেষজ্ঞের রিপোর্ট সম্পূর্ণ হচ্ছে।

২. পরিবেশ মন্ত্রকের কমিটির সুপারিশ অনুমোদন

আদালত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক (MoEF&CC) দ্বারা গঠিত কমিটির সুপারিশগুলি গ্রহণ করেছে। এই কমিটির উদ্দেশ্য হল আরাবল্লী পাহাড়কে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুরক্ষিত রাখা।

৩. আরাবল্লী পাহাড় এবং রেঞ্জের নতুন সংজ্ঞা কী?

কমিটির মতে, আরাবল্লী পাহাড় (Aravalli Hill): এমন কোনো ভূখণ্ড যা নির্দিষ্ট আরাবল্লী জেলাগুলিতে অবস্থিত এবং আশেপাশের জমি থেকে কমপক্ষে ১০০ মিটার উঁচু।

আরাবল্লী রেঞ্জ (Aravalli Range): এমন দুই বা ততোধিক পাহাড়, যা একে অপরের থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত, এবং এর সাথে তাদের মধ্যবর্তী জমি ও ভূ-আকৃতিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৪. কোর এলাকায় খনির কাজ পুরোপুরি বন্ধ

এই রায়টি টি.এন. গোদাবরমন থিরুমুলপাড় সম্পর্কিত পরিবেশ মামলায় শোনানো হয়েছে, যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। আদালত বলেছে যে কোর এবং ইনভায়োলেট (অস্পৃশ্য) এলাকায় খনির কাজ পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে। তবে, কমিটির দ্বারা নির্ধারিত সীমিত পরিস্থিতিতে কিছু ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

৫. টেকসই খনি পরিকল্পনা জরুরি

সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে যতক্ষণ না টেকসই খনি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Sustainable Mining Management Plan) তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ কোনো নতুন খনির লিজ দেওয়া হবে না। বর্তমান খনিগুলিও কঠোর নিয়মের অধীনেই চলতে পারবে। এই পরিকল্পনাটি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেস্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (ICFRE)-এর মাধ্যমে তৈরি করা হবে।