সংক্ষিপ্ত

বর্ণময় জীবন ছিল গুলাম রসুল গালওয়ানের
ব্রিটিশ অভিযাত্রীদলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন
তাঁর নামে নামকরণ গালওয়ান উপত্যকার
যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা
 

পূর্ব লাদাখের ইন্দো-চিন সীমান্তে গালওয়ান উপত্যকা,যা নিয়ে ভারত আর চিনের মধ্যে ক্রমশই উত্তেজনা বাড়ছে। চিনের জিনজিয়াং এলাকার সামজুংলিং থেকে উৎপত্তি গালওয়ান নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। পর্বত ঘেরা এই উপত্যকা বরাবর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় এই গালওয়ান উপত্যকা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্ল্যাশপয়েন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে একটি একমাত্র পাহাড়ী উপত্যকা, ইংরেজরা যার সন্ধানের কৃতিত্ব দিয়েছিল এক ভারতীকে। তিনি হলেন গুলাম রসুল গালওয়ান। যার নামে এই উপত্যকার নামকরণ হয়েছিল গালওয়ান উপত্যকা। 

১৮৭৮ সালে তিব্বতের ইয়ারকান্দে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন গুলাম রুসুল গালওয়ান। বর্তমানে ওই এলাকা চিনের স্বশাসিত এলাকা উইঘোরের জিনজিয়াং এলাকায় পড়ে। তাঁর বাবার কোনও পরিচয় পাওয়া যায় না। সম্ভবত মায়ের সঙ্গেই  থাকতেন গুলাম রুসুল গালওয়ান। দীন দরিদ্র পরিবার। অভিযাত্রীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়াকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন গালওয়ান। তাও খুব ছোট্ট বয়সে। 

সমুদ্রপূষ্ট থেকে পাঁচ হাজার বা সাত হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত গালওয়ান উপত্যকা। শীতের তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কারাকোরাম উপত্যকার ভয়ঙ্কর সেই এলাকা ছিল গালওয়ানের হাতের তালুর মতই চেনা। লাদাখি মুসলিম অভিযাত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন সাহেবদের অত্যন্ত প্রিয়। 

 দারিদ্রতাই তাঁকে ঠেলে দিয়েছিল অভিযাত্রী জলের মালবাহক হতে। সেই সময়ই অনেক পর্বত আরোহী দলের আকর্ষণ ছিল তিব্বত, ইয়ারকাণ্ড, কারাকোরাম পামির মালভূমি বা মধ্য এশিয়া অভিযান। সেই সব দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন ছোট্ট গালওয়ান। স্যার ফ্রান্নিস ইয়ং হাসব্যান্ডের দলের সঙ্গে  সাধারণ মালবাহক হিসেবেই অভিযাত্রী জীবন শুরু করেছিলেন গালওয়ান। ১৮৯২ সালে চার্লস মারের সঙ্গে পামীর আর কাশগার পর্বত অভিযানই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেই দলটি লাদাখের গিরিখাতের মাঝখানে আটকে গিয়েছিল। কিন্তু ছোট্ট গালওয়ানই তাঁদের সহজ পথ দেখিয়ে দেন, যাতে চক্রবুহ্য থেকে বার হওয়া অনেক সহজ হয়ে যায় সাহেবদের কাছে। তারপরই অভিযাত্রী দলটি খুশি হয়ে উপত্যকার নাম রাখেন গালওয়ান উপত্যকা। 


পর্বত আরোহী ও হিমালয়ান জার্নালের দীর্ঘদিনের সম্পাদক হরিশ কাপাডিয়া বলেছেন সেই সময় পর্বত শৃঙ্গই হোক আর ভৌগলিক নিদর্শন নেটিভ অভিযাত্রীর নামে নাম রাখার ঘটনা খুবই বিরল। গালওয়ান উপত্যকা ছা়ড়া আর কোনও এমন এলাকা আছে বলে তাঁর জানা নেই বলেই দাবি করেন তিনি। লাদাখের ঐতিহাসিক আবদুল ঘানির কথায় তৎকালীন ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের সঙ্গে রীতমত ওঠাবসা ছিল গালওয়ানের। কাশ্মীর আর তিবব্বত ভূগোল সম্পর্কে অসামান্য জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন গুলাম রসুল গালওয়ান। ১২ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর অভিযাত্রী জীবন। বিশ্বের বৃহত্তম চূড়া গডউইন অস্টিন কে ২ উচ্চতা নির্ধারণকারী মেজর এইচ এইচ গডউইন অস্টিনের দলের সদস্যও হয়েছিলেন গালওয়ান। 

পড়াশুনা জানতেননা গুলাম রসুল গালওয়ান। কিন্তু রীতিমত স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন লাদাখি, তুর্কী ও উর্দু ভাষায়। বিট্রিশ অভিযাত্রীদলের সঙ্গে থাকতে থাকতেই শিখেনিয়েছিলেন ইংরাজি। আর সেই ইংরাজি ভাষাতেই নিজের জীবনী লিখেছিলেন তিনি। বইটির নাম 'সার্ভেন্ট অব সাহিবস'। প্রায় এক যুগ ধরে বইটি সম্পাদনা করেছেন স্যার রর্বাট ব্যারেটের স্ত্রী ক্যাথরিন। ক্যাথরিন জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে যখন গালওয়ানের পরিচয় হয় তখন সর্বসাকুল্যে ১০-১২টা ইংরাজি শব্দ জানতেন তিনি। কিন্তু ইংরাজি লেখার প্রবল ইচ্ছে ছিল প্রবল। কথা বলতে বলতেই ইংরাজি আয়ত্ত্বে এনেছিলেন গালওয়ান। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় বইটি। গুলাম রসুল গালওয়ানের বৈচিত্র্যমত ৩৫ বছরের অভিযাত্রী জীবন শেষ হয় মাত্র ৪৭ বছরেই।