সংক্ষিপ্ত
আনলক চলছে ভারতে
বাড়তে পারে আক্রান্তের সংখ্যা
আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
পরীক্ষা আরও বাড়ানোর দাবি
লকডাউন ৫.০ এই পর্যায়ে এসে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হয়েছিল ভারত। আর সেই পর্ব থেকেই শুরু হয়ে যায় আনলক ১.০। কিন্তু তারপর থেকে দেখা যায় দেশে রীতিমত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। রোজই নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯৮৭। মৃত্যুর সংখ্যাতেই রের্কড তৈরি হয়েছে। এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৩৬ জনের। গত তিন থেকে চার দিন ধরেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি ছিল। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আনলক ১.০ আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে না তো? সেই প্রশ্নই আসছে ঘুরে ফিরে।
একদল বিশেষজ্ঞের অভিযোগ আনলক পর্ব শুরু করার জন্য বিশেষ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দেশের নাগরিকদের করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার কথা বলেও আনলক শুরু করি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পর্বে রীতিমত খোলা হচ্ছে কর্মস্থল, দোকান বাজার। যেখানে ভিড় বাড়ছে মানুষের। তাই আক্রান্তের সম্ভাবনার কথা এড়িয়ে যাওয়ায় যায়না। অন্যান্য দেশগুলির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল অন্যছবি। কারণ বিশ্বের বহু দেশই করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে লকডাউনের পথে হেঁটেছিল। কিন্তু আনলক তখনই করা হয়েছে যখন সংশ্লিষ্ট দেশটি আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে গেছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে উল্টো ছবি। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা যখন বাড়ছে তখনও আনলকিং-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া সুপারিশে বলা হয়েছিল, তখনই আনলক করা উচিৎ যখন টানা ১৪ দিনের পরীক্ষায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ শতাংশের নিচে থাকবে। কিন্তু ভারতে পরীক্ষার সংখ্যাই অনেক কম বলে অভিযোগ। করোনাভাইরাসের রিসোর্স সেন্টার জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ভারতে করোনা পরীক্ষা আক্রান্তের হার হার ৮.৭৩ শতাংশ। ৩১ মে থেকে ৬ জুন পরীক্ষা আক্রান্তের হার ছিল মাত্র ৭.৫ শতাংশ। ৭ জুনে ৮.২ শতাংশ করোনা আক্রান্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। আর ৮ জুনে তার হার ছিল ৯.২। পরীক্ষার পজেটিভিটির হার ভারতের করোনা পরিক্ষার হারের সঙ্গে প্রায় এক। গত তেশরা মে পর্যন্ত এই দেশের প্রায় ১০ লক্ষা মানুষের পরীক্ষা হয়েছে। যেখানে ইতিবাচর পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে ৩.৮ শতাংশ।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৯ জুন ভারত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ লক্ষ ৪১ হাজার জনের পরীক্ষা করেছিল। আরোগ্যসেতু অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯৮৭। যা প্রমাণ করে আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ। যা গত দু দিনের তুলনায় কম। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল আক্রান্তের হার ৫ শতাংশ থাকলে তবেই লকডাউন তোলা যাবে।
একমাত্র প্রচুর পরিমান পরীক্ষাই এই রোগের একটি শক্তিশালী সূচক হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা বাড়ানোর ওপরেই জোর দিয়েছেন। কিন্তু ভারতে শুধুমাত্র তাদেরই পরীক্ষা হচ্ছে যারা হাতপাতালে আসছেন চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে। এই দেশে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র অসুস্থ ব্যক্তিদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। জনস হপকিন্স বিশ্বিবিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,এই অর্থ হল এই দেশের সরকার জানতেই চাইছে না করোনার শিকড় কতটা মজবুত হয়েছে। সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইরাসটির বিস্তার জানার বিষয়ও রাষ্ট্র উদাসীন বলেই দাবি করা হয়েছে।
বর্তমানে করোনা আক্রান্ত দেশের ক্রম তালিকায় ৬ নম্বরে ভারতে। কিন্তু ভারেতের আগে থাকা দেশগুলিতে পরীক্ষার হার অনেকটাই বেশি। শতাংশের বিচারে পরীক্ষার হারে ব্রাজিলের থেকেও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে ভারত। ভারতে এক মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৩৫৬৫ জনের পরীক্ষা হয়েছে। আর ব্রাজিলে সংখ্যাটা ৪৭০৬। আমেরিকা, রাশিয়া স্পেন আর ব্রিটেনের ধারে কাছেও আসেনা ভারত। তাই এই দেশে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সঠিক সংখ্যার হদিশ নেই। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুণতিতে তারাই আছেন। তবে এপ্রিল ও মে-র প্রথম সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা হলেও বেড়েছে।কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হওয়ায় চোরা স্রোতের মতই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।