সংক্ষিপ্ত
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে (UP Elections 2022) সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi Party) হয়ে প্রচারে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কেন অখিলেশ যাদবের প্রচারে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সুপ্রিমো, জাতীয় রাজনীতিতে কি লাভ বে তাঁর?
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে (Uttar Pradesh Elections 2022), সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi Party) হয়ে প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ৮ ফেব্রুয়ারি লখনউয়ে (Lucknow) অখিলেশ যাদবের (Akhilesh Yadav) সঙ্গে যৌথ ভার্চুয়াল সভা করবেন। সেই সভা, সারা উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) প্রচার করা হবে। কিন্তু, প্রশ্ন হল মোদী-বিরোধী মুখ হিসাবে জাতীয় স্তরে কতটা তাৎপর্য রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের? কেনই বা ভিন রাজ্যে প্রচারে যাচ্ছেন মমতা, এতে তাঁর কী লাভ?
অখিলেশ যাদবের দূত হয়ে কালীঘাটে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বাড়িতে এসেছিলেন বাংলার প্রাক্তন মৎসমন্ত্রী কিরণময় নন্দ (Kiranmoy Nanda)। মমতার সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল সুপ্রিমো আর শুধু বাংলার নেত্রী নন, বিজেপি বিরোধী সর্বভারতীয় মুখ হয়ে উঠেছেন। উত্তরপ্রদেশের মানুষ এবার বিজেপি (BJP) সরকারকে উৎখাত করতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলে তাদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহের সঞ্চার হবে। সপা কর্মীরা চাইছেন মমতা উত্তরপ্রদেশে আসুন।
২০১৪ সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) ক্ষমতায় আসার পর থেকে, একের পর এক রাজ্যে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো এগিয়েছে বিজেপি। একমাত্র পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক ছাড়া বাকি সব রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। পরে কর্নাটক এবং মধ্যপ্রদেশ - দুই জায়গাতেই শাসক দলের বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গড়ে তারা। মহারাষ্ট্রে অবশ্য উল্টো ঘটনা ঘটেছে। বেশি সংখ্যক আসনে জিতেও সরকার গড়তে পারেনি বিজেপি। কংগ্রেস (Congress) ও এনসিপির (NCP) সঙ্গে অস্বস্তিকর জোট গড়ে, পদ্মের বাড়বাড়ন্ত রুখে দিয়েছে শিবসেনা। কিন্তু, কোনও রাজ্যেই একেবারে একার হাতে বিজেপিকে কেউ রুখে দিয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটেনি।
পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় লাস্ট ফ্রন্টিয়ার হিসাবে দেখেছিল বিজেপি। একের পর এক সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah), বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডারা (JP Nadda)। প্রচারে এসেছেন, হিন্দুত্বের পোস্টার বয় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh), স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani), অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীরা (Mothun Chakroborty)। তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙিয়ে গেরুয়া শিবির নিয়ে এসেছিল শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari), রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের (Rajib Banerjee) মতো নেতাদের। আস্তিনের কোনও তাস ফেলতেই বাকি রাখেনি বিজেপি। কিন্তু, এত করেও জেতা যায়নি। অমিত শাহ'র 'আধুনিক চাণক্য' উপাধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনা সারা ভারতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি বিরোধী লড়াকু নেত্রীর পরিচয় যে দিয়েছে, তাই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনিই কি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ?
এই বিষয় নিয়ে কিন্তু, বিতর্ক রয়েছে। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই নিজেদের সর্বভারতীয় দল হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যে বিজেপির কায়দাতেই একাধীক রাজ্যে কংগ্রেস ও অন্যান্য দল ভাঙিয়ে নেতা সংগ্রহ করছে তারা। গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মতো ছোট রাজ্যে তৃণমূলের কিছু প্রভাবও তৈরি হয়েছে। কিন্তু, তাই দিয়ে কি সারা ভারতের ক্ষমতা দখল সম্ভব? এর মধ্যে আবার মুম্বইয়ে গিয়ে 'ইউপিএ বলে কিছু নেই', মন্তব্য করে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন মমতা। শিবসেনার মতো দল কিন্তু, এর স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। ২০১৪ এবং ২০১৯ - পরপর দুই লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হলেও, সারা দেশে ২০ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন দল। সেই ভোট কিন্তু মমতার দলের নেই।
এই অবস্থায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যের দল, সপা'র সমর্থন লাভের আশা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রার্থী না দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকেই সম্পূর্ণ সমর্থন করেছিল সমাজবাদী পার্টি। প্রচারে পাঠানো হয়েছিল জয়া বচ্চন এবং কিরণময় নন্দকে। তারই পাল্টা উত্তরপ্রদেশেও প্রার্থী না দিয়ে, সপাকে সমর্থন করার এবং তাদের হয়ে প্রচারে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর, যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে, সপা'কে কি তিনি পাশে পাবেন? এর আগে ২০১২ সালে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। প্রথমে তাঁকে সমর্থন করেও, পড়ে ডিগবাজি খেয়েছিলেন সৎকালীন সপা প্রধান মুলায়ম সিং যাদব (Mulayam Singh Yadav)। সেই ইতিহাস কিন্তু ভোলার নয়।