সংক্ষিপ্ত
সম্প্রতি ইটালি-র অর্থনৈতিক দুরাবস্থার খবর বিশ্বের সামনে প্রকট হয়ে উঠেছে। একে অতিমারির ধাক্কা, সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে এই দেশে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষড়া পরিস্থিতি।
সত্যি সত্যি কি না খেতে পাওয়ার জায়গায় পৌঁছেছে ইটালির কিছু এলাকা? এক ভাইরাল ভিডিও-কে ঘিরে এমনই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এই ভাইরাল ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করা যায়নি। কিন্তু টুইটারে এই ভিডিও এই মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে এজি মিলিটারি ১ বলে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। যেখানে পোস্ট করা ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে কিছু মহিলাকে যাদের মধ্যে বয়স্করাও রয়েছে তাঁরা ঘিরে ধরেছেন কিছু পুরুষকে। এদের মধ্যে অধিকাংশই অল্প বয়সী। যে ভাষায় ভিডিও-তে তারা কথা বলছেন তা পরিচিত নয়। ভিডিও-তে রয়েছে সাবটাইটেল। আর তাই দেখেই ভিডিও-র কথোপকথন আঁচ করতে হচ্ছে।
টুইটারে পোস্ট হওয়া এই ভাইরাল ভিডিও-র সাব টাইটেলে দেখা যাচ্ছে এক মহিলা চিৎকার করছেন যে তাঁর বাড়িতে এক ছটাও রুটি নেই। সকলেরই কি একই অবস্থা। লর্ড বলে একজন এতে ক্ষিপ্ত ভাষায় গালিগালাজ করছেন- ভিডিওটির সাব টাইটেলে তেমনই ফুটে উঠেছে। যদিও, এই ভিডিও আদপে ইটালির কি না অথবা ইটালির হলেও তা বর্তমান সময়ের কি না তা জানা যায়নি। তবে, বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে এটা পরিস্কার যে ইটালিতে অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্টই সঙ্কটে।
বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের অনির্দিষ্টকালের লড়াই ইটালির অর্থনীতির উপরে প্রবল প্রভাব ফেলেছে। ইটালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিকস (আইস্ট্যাট) জানিয়েছে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের অনিশ্চিত ভবিষ্যত তাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে প্র়বল ভাবে। এর জেরে মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে। আর এই অবস্থা ইউরোজোনকেই আঘাত করেছে বলেছে জানিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিকস।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জেরে ইটালির কাছে আরও সঙ্কট তৈরি করেছে জ্বালানির অভাব। এর প্রভাব পড়েছে শিল্পের উৎপাদন এবং মাল পরিবহণ ব্যবস্থাতেও। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিকস আরও জানিয়েছে যে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অতিমারিতে অর্থনৈতিক ধসের মোকাবিলায় সুদের হার বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল এবং গত সেপ্টেম্বরেও সেই ঘোষণা আরও একবার করা হয়েছিল, সেগুলো সবই আপাতত স্থগিত রাথা হয়েছে। এমনকী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিকস-এর মতে সাধারণ মানুষ এমন এক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আস্থা হারিয়েছে। এর জেরে রোজই গৃহস্থদের ক্রয়যোগ্য আচরণে বদল আসছে। নিচুতলার শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগও কমেছে ইটালিতে। এরমধ্যে আশার একটাই খবর যে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ইটালিতে রিটেল সেলসের বৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.৯ শতাংশ হয়েছে।
এহেন এক পরিস্থিতিতে ইটালির চিন্তা বাড়িয়েছে গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষড়া। বলা হচ্ছে গত ৭০ বছরে উত্তর ইটালি এমন ভয়াবহ ক্ষড়ার সম্মুখিন হয়নি। এর তীব্র প্রভাব পড়েছে অলিভ ওয়েলের উৎপাদন, পাস্তা তৈরি এবং রিসোট্টো রাইস উৎপাদনে। বিশ্বে যত অলিভ ওয়েল, পাস্তা এবং রিসোট্টো রাইস-এর উৎপাদন হয় তার ৯০ শতাংশই আসে ইটালি থেকে। মনে করা হচ্ছে এর জন্য বিশ্বজুড়েই অলিভ ওয়েল, রিসোট্টো রাইস এবং পাস্তা-র মজুত ভাণ্ডার প্রভাবিত হবে। যার জন্য বিশ্ব জুড়েই এই জিনিসগুলোর দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইটালি সরকার এরমধ্যে অবশ্য গ্যাস আমদানিতে মস্কোর উপরে নির্ভরতা কমাতে তৎপর। ব্লুমবার্গের দেওয়া তথ্য বলছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ইটালি গ্যাস আমদানিতে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নিয়ে এসেছে। ইটালি গ্যাস আমদানিতে জার্মানির উপরে নির্ভরতা বাড়়াচ্ছে। যদিও, জার্মানি এখনও তাদের গ্যাসের ৩৫ শতাংশ রাশিয়া থেকেই আমদানি করছে। সুতরাং, ইটালি সরকারের এই তৎপরতা আদৌ কতটা সে দেশের অর্থনীতিতে জোর আনতে সক্ষম তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, জ্বালানির অভাবেই ইতিমধ্যেই ধুকতে শুরু করেছে শিল্প উৎপাদন এবং মাল পরিবহণ ব্যবস্থা। অতিমারির সময় ইটালি প্রথমে যথেষ্ট সতর্কতা দেখায়নি। যার ফলে সে দেশে মৃত্যুর হার সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল এবং অর্থনীতিও প্রবলভাবে ধাক্কা খায়। অতিমারিতে যে ধাক্কা অর্থনীতিতে লেগেছে তার থেকে এখনও গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি ইটালি। সন্দেহ নেই এই মুহূর্তে ইটালির অর্থনীতিতে সঙ্কট একটা নয়া আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ৫৩ বছরের ছোট সাংসদের প্রেমে হাবুডুবু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বাধ সাধল ৪১৭ বিলিয়ন ডলার
আরও পড়ুন- বিশ্বের কোন ১০টি দেশে মজুদ রয়েছে সবথেকে বেশি সোনা, কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত - জানেন কি
আরও পড়ুন- World's Loneliest House: 'পৃথিবীর নিঃসঙ্গ বাড়ি' ১০০ বছর ধরে আজও একাকী দাঁড়িয়ে