ওঁরা সকলেই ডাক্তার। সকলকে মাস্ক পরার কথা বলছেন। অথচ নিজেরা শরীরের সব কাপড় খুলে ফেললেন। কেন এমনটা করলেন ওঁরা? 

সারা পৃথিবীব্যপী যেখানে নতুন করোনাভাইরাস-এর হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক, প্লেক্সিগ্লাসের মুখবর্ম দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যস্ত সবাই, সেখানে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব জামা কাপড় খুলে উদোম হয়ে গেলেন জার্মান ডাক্তাররা। সেভাবে বিনা সুতোয় নিজেদের ছবি তুলে পোস্ট করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোনও কোনও চিকিৎসকের মুখ-নাক-চোখ সংক্রমণ রোধী সুরক্ষা মাস্ক বা প্লেক্সিগ্লাসে ঢাকা থাকলেও শরীরে ছিল না কোনও কাপড়।

আসলে এটা তাঁদের প্রতিবাদ। ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম বা পিপিই-র অভাব-কে এরকম নগ্নতার মধ্য দিয়ে তুলে ধরলেন তাঁরা। এই আন্দোলনকে তাঁরা বলছেন 'ব্ল্যাঙ্ক বেডেনকেন' বা 'নগ্ন উদ্বেগ'। একজন মানুষ জামাকাপড়হীন অবস্থায় যেরকম দুর্বল বোধ করে, শারীরিক সুরক্ষার অভাব বোধ করে, যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে তাঁদের অবস্থাও সেই রকম। নগ্ন হয়ে সেটাই গোটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা।

Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পশ্চিমবঙ্গই হোক, কী নরেন্দ্র মোদীর ভারত কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সব জায়গাতেই স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের এক অবস্থা। ঢাল-তলোয়াড়'হীন নিধিরাম সর্দার করে তাঁদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ভয়ঙ্কর ভাইরাস-এর সামনে। এই বিশ্বজোড়া জনস্বাস্থ্য সংকট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রায় প্রচিটি দেশই কীভাবে অস্ত্রাগার বাড়াতে কিংবা প্রযুক্তিগত দিক থেকে একে অন্যকে মাত করতে অর্থব্যয় করেছে, আর চিকিৎসা পরিষেবার মতো মানুষের মৌলিক অধিকার-কে অবহেলা করা হয়েছে। আর তাই এখন বিভিন্ন দেশে দেশে চিকিৎসকদের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম-এর অভাব। 


Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

তবে এই নগ্ন প্রতিবাদ-এর দিশারী কিন্তু এক ফরাসি ডাক্তার। এলেন কলম্বি নামে ওই ডাক্তারই প্রথম এইরকম বস্ত্রত্যাগ করে ছবি তুলে লড়াইয়ে নিজেকে এবং তাঁর সহকর্মীদের 'কামানের খোরাক' বলে বর্ণনা করেছিলেন। জার্মান ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এলেনের দেখানো পথেই তাঁরা এই প্রতিবাদকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তবে কেউ টয়লেট রোল, কেউ প্রেসক্রিপশনের তাড়া, কেউ মেডিকেল ফাইলের তাড়ার পিছনে দাঁড়িয়ে সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন।

Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

এই প্রতিবাদি ডাক্তারদের একজন জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের কাজের প্রতি দায়বন্ধ, চিকিৎসা বন্ধ করতে তাঁরা চান না। কিন্তু, তারজন্য তাঁদের যথাযথ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম লাগবে। জানুয়ারীর শেষ দিকে জার্মানিতে এই ভাইরাস প্রথম হানা দিয়েছিল। সেই সময় থেকে তাঁরা বারবার আরও বেশি সংখ্যক পিপিই-র সরবরাহের জন্য আবেদন করে আসছেন। কিন্তু, তাঁদের কথা কর্তৃপক্ষ কানেই তোলেনি। এরপর ডাক্তাররা কাজ বন্ধ করলে তাঁদের দিকে আঙুল তোলা হবে।

'প্লাজমা থেরাপি'র আশায় জল ঢালল কেন্দ্র, রক্তরস অদল-বদলে রয়েছে 'প্রাণের ঝুঁকি'ও

সামনে এল করোনা-র এগারোতম অবতার, এটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সবচেয়ে ছোঁয়াচে

কাটা পড়া হাতে ফের নড়ছে আঙুল, লকডাউন হিরো হরজিৎ সিং-কে অভিনব সেলাম অন্ধ্র পুলিশের

জানা গিয়েছে, জার্মানিতে এই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম যে সংস্থাগুলি তৈরি করে, তারা এই মুহূর্তে চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তার উপর হাসপাতালগুলি থেকে এই বিপর্যয়ের সময়ও একাংশের অপরাধীরা জীবাণুনাশক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। জার্মানিতে এই প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। এই অবস্থায় জার্মান মেডিকেল টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও সরকারকে দেশে এই ধরণের চিকিৎসা সরঞ্জামের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকাঠামোগত সহায়তার অনুরোধ করেছে।

জার্মানিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত। তবে ইউরোপের মধ্যে জার্মানিতেই মৃত্যুর হার অনেকটাই কম। এখনও পর্যন্ত এই রোগের বলি হয়েছেন ৬,১৬১ জন।