সংক্ষিপ্ত

  • জীবনের ৩২টা বছর ছোট্ট একটা দ্বীপেই কাটান তিনি
  • ১৯৮৯ সালে তিনি ইতালির এই দ্বীপ এসেছিলেন
  • দ্বীপ যাতে পরিষ্কার থাকে সেই কাজ করে গিয়েছেন
  • তাঁকে এবার সেই দ্বীপ ছেড়ে লোকালয়ে ফিরতে হচ্ছে

'আমাকে আমার মত থাকতে দাও, আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি...'। গানটা এই মানুষটার মুখেই সবচেয়ে বেশি মানায় বোধহয়। গত ৩২টা বছর তিনি একটা ছোট্ট নির্জন দ্বীপে অনায়াসে কাটিয়ে দিয়েছেন। না, না কোনও হলিউড সিনেমার গল্প নয়। একেবারে সত্যি। সব কিছু থেকে অনেক অনেক দূরে, একাই জীবনের ৩২টা বছর ইতালির ছোট্ট ছবির মত সুন্দর একটা দ্বীপে কাটানো সেই মানুষটার নাম মাওরো মোরান্ডি। ইতালির নাগরিক। নামটা মনে রেখে দিতে পারেন। কখনও নিজেকে একা একা মনে হলে ৮২ বছরের মাওরো মোরান্ডির কথাটা মনে করতে পারেন।

আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ভারতের পাশে Google, ১৩৫ কোটি টাকা আর্থ সাহায্য ঘোষণা সুন্দর পিচাইয়ের

১৯৮৯ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন জীবনের সব মোহ, সব ভিড় ত্যাগ করে তিনি থাকবেন নর্থ সারদিনার এক দ্বীপপুঞ্জে। যে দ্বীপপুঞ্জে আছে গোলাপী বালি, সারাদিন বয়ে যায় অজস্র ঢেউ। কেউ কখনও ওখানে যাওয়ার কথা ভাবেই না। নির্জনতা প্রিয় মাওরো নির্জনে থাকার জন্য বেছে নিয়েছিলেন সেই গোলাপী বালির দ্বীপপুঞ্জকে। একটা ছোট নৌকা নিয়ে একাই পাড়ি দিয়েছিলেন সেখানে। বড় ঢেউয়ের জন্য সেই দ্বীপে যাওয়ার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না তাঁর। সেই দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে তাঁর এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, যিনি সেই দ্বীপ ও পাশের কিছু দ্বীপের পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। তিনি ছিলেন কর্মী। কিন্তু তাঁর কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল, বলে তিনি নিজেই বলেচিলেন, এই দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। এরপর এতগুলো বছর  নিজের জীবনকে ভাসিয়ে দেন সেই নির্জনতায়। এই এতগুলো বছর দুনিয়া যেমন তাঁর খবর রাখেনি, তিনিও দুনিয়ার খবর রাখেননি। দ্বীপের পরিষ্কার পরিচ্ছনতায় বজায় রেখেছেন দারুণভাবে।

আরও পড়ুন: ডোভালের ফোনেই চমৎকার, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কাঁচামাল নিয়ে ভারেতর পাশে থাকার বার্তা আমেরিকার

১৯৮৯ সাল থেকে দুনিয়ায় কত বদল ঘটে গিয়েছে। সেই সবের কোনও খবরই তিনি রাখেননি। অবশেষে তাঁর খোঁজ মিলল এক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের এক কাজে কিছু কর্মী সেই দ্বীপে যাওয়ার পর। এত নির্জন দ্বীপে মানুষ দেখে তো ঘাবড়ে গিয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩২ বছর তিনি একাই ছিলেন। ঝড়-জল-রোদ সব সামলে নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়ে।

সেই দ্বীপে এখন দেশের পরিবেশবিদরা কিছু গুরত্বপূর্ণ কাজ করবেন, তাই দেশের স্বার্থে মাওরোকে তাঁর দ্বীপ ছাড়তেই হচ্ছে। এই দ্বীপপুঞ্জকে এখন পরিবেশবিদ্যার বড় হাব বানানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কথা মেনে মাওরো সেই দ্বীপ ছেড়ে লোকালয়ে ফিরতে রাজি হলেন। স্থানীয় প্রশাসনই তাঁকে শহরের বাইরে কিছুটা নির্জন স্থানে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করছে। এতগুলো বছর একা একা থাকতে কেমন লাগলো? মাওরো বললেন, সমুদ্র দেখেই জীবন কেটে যেত। আমি এখন যেখানে থাকব সেখান থেকেও সমুদ্র দেখা যায়। জীবনের বাকিটা সময়ও সমুদ্র দেখে কেটে যাবে।