সংক্ষিপ্ত

  • মস্কোর মাটিতে অবশেষে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ভারত ও চিনের
  • এই প্রথম দু’দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হল
  •  মস্কোর মেট্রোপোল হোটেলে আয়োজিত হয় এই বৈঠক
  • ভারত-চিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে  ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে চলল বৈঠক

লাদাখ সীমান্তে একে অপরের দিকে চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছে রয়েছে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। আর এই আবহেই চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল জেনারেল ওয়েই ফেংহের সঙ্গে বৈঠক করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। চিনের আর্জিতেই এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।  মস্কোর মেট্রোপোল হোটেলে ভারতীয় সময় সাড়ে নটার একটু পরে শুরু হল ভারত-চিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক। দুই ঘণ্টা কুড়ি মিনিট ধরে চলল এই বৈঠক। 

পরমাণুধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের জল কোন দিকে গড়ায় সেই নিয়ে বৈঠকের দিকে আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্বই।  দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে চলল বৈঠক। হাইভোল্টেজ এই বৈঠকের পর দুই দেশের তরফেই সরকারি ভাবে এখনও কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্যুইট করে জানান,  ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের বিষয়বস্তু ছিল লাদাখের উত্তেজনাকিন্তু, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কী কথা হল, তার কিছুই জানা যায়নি। দু-জনের কেউই প্রেসের কাছে মুখ খোলেননি। রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবেও এই বৈঠক নিয়ে আর কিছু ঘোষণা করা হয়নি।

আরও পড়ুন:৯০ কিলোমিটার দূরেও নির্ভুল আঘাত, জানুন ভারতীয় সেনার অস্ত্রভান্ডারের অন্যতম শক্তিশেল 'পিনাকা'র অজানা কথা

রাজনাথ সিংয়ের বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠক শেষে নিজের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ট্যুইট করেন 'রক্ষামন্ত্রী' (প্রতিরক্ষা) রাজনাথ। তিনি জানান, ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের বিষয়বস্তু ছিল লাদাখের উত্তেজনা। কিন্তু, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কী কথা হল, তা নিয়ে চুপ রয়েছেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীই। 

 

 

ট্যুইটারে  বৈঠকের একটি ছবিও  পোস্ট করেন রাজনাথ। ছবি দেখে সহজেই ধারণা করা যায়,  ঘরের পরিস্থিতি দৃশ্যতই থমথমে, তার মধ্যেই হাত উঁচিয়ে কিছু একটা বলছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এরপরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এদিনের বৈঠকের বিভিন্ন ছবি। প্রতিটাতেই বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে মনে হয় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। রাজনাথের সরকারি হ্যান্ডেল থেকে পরে জানান হয় যে ১৪০ মিনিট ধরে বৈঠক চলেছে। যদিও আলোচনার গতিপ্রকৃতির কথা বলা হয়নি। 

সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবারই মস্কোয় পৌঁছেছেন রাজনাথ সিং। একই কারণে সেখানে রয়েছেন  চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। এই  বৈঠকের বাইরে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন জেনারেল ওয়েই ফেংহে। বৃহস্পতিবার ভারতের কাছে চিনের তরফে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে, ভারত আদৌ সেই প্রস্তাবে সাড়া দেবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা একটা ছিলই। কারণ, পূর্ব লাদাখে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংঘাত বাধার পর থেকে এর আগে আরও দু-বার চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রক বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, লাগাতার চিনা আগ্রাসনের কারণে ভারত প্রতিরক্ষা স্তরে বৈঠকে বসতে নারাজ ছিল। তাই আগের দু'টি বৈঠক হয়নি। এবারও সেই সম্ভাবনা প্রবল ছিল। রাজনাথ সিং মস্কোয় যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চিন বা পাকিস্তানের সঙ্গে আলাদা করে কোনও আলোচনায় তিনি বসবেন না। কিন্তু, শুক্রবার সকালেই আভাস মিলেছিল বৈঠক হতে পারে। সেই মতো শুক্রবার রাতেই বৈঠকের সময় স্থির হয়। তবে , ভারত-চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, তা ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের আলোচনায় মিটিয়ে ফেলা যাবে, এমনটা ভাবা বাড়াবাড়ি। তার পরেও এই বৈঠক যথেষ্ট তাত্‍‌পর্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন: ''কিল নরেন্দ্র মোদী'', এনআইএ-র হাতে আসা গোপন ই-মেলে ফাঁস প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছক

 গত ১৫ জুন  লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায়  ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে এই প্রথম দু’দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হল। এর আগে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আলাদা আলাদা ভাবে ফোনে কথা বলেছিলেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। সেনাস্তরে বৈঠকও লাগাতার চলছে। এর মাঝেই  লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। যে কোনও সময় যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। নতুন করে চিন অনুপ্রবেস চালানোর চেষ্টা করার পর গত দশ দিনে পরিস্থিতি আরও বেশি বদলেছে।

বৈঠকের আগেই ভারতের  বিদেশসচিব হর্ষ শ্রীংলা বলেন যে ১৯৬২-র পর চিন সীমান্তে এমন সমস্যা তৈরী হয়নি। চিন যে বিপুল সংখ্যক সৈন্য সেখানে জড়ো করেছে সেই কথাও জানান তিনি। বিদেশসচিব বলেন যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সীমান্ত সমস্যা প্রভাব ফেলতে বাধ্য। অন্যদিকে সেনা প্রধান নারভানে, জানিয়েছেন সীমান্তের অবস্থা খুব সংবেদনশীল। সেখানে যে কিছুটা অস্থিরতা আছে তা মেনে নিয়েছেন তিনি। শুক্রবার  বৈঠকের আগেই চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনে রাজনাথ বুঝিয়ে দেন যে, লাদাখে চিনা সেনার আগ্রাসন ভারত ভাল ভাবে নেয়নি। এসসিও সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বাসের পরিবেশ, অনাগ্রাসন, পরস্পরের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে মতপার্থক্য নিরসনের উপরেই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিরতা নির্ভর করে।’’ সাউথ ব্লক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারত যে শান্তির পথে হেঁটে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে প্রস্তুত, সেই অবস্থানই চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজনাথ। তাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে বেজিংকেও।