সংক্ষিপ্ত

নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় আর একটু হলে বড়সড় বিপদে পড়ছিলেন প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান। ফিরে আসছিল প্রিন্সেস ডায়নার দুর্ঘটনার ভয়ানক স্মৃতি। কিন্তু, হ্যারি ও মেগান অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে পৌঁছানোয় তাঁদের অনুরাগীরা হাফ ছেড়েছেন।

 

ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সঙ্গে ভারতীয়দের সংযোগ সর্বজন বিদিত। কীভাবে বাকিংহাম প্যালেসর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে ভারতীয়দের সংস্পর্শে এসেছেন তার কাহিনিও অসংখ্য। এমনকী গত কয়েক দশকে যে প্রিন্সেস ডায়না বাকিংহাম প্যালেসের চর্চাকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ভারত প্রীতি এবং ভারতের মানুষের সঙ্গে সংযোগ এখনও আলোচনায় জায়গা পায়। এবার দেখা গেল যে রাত্রে ডায়নার ছোট পুত্র হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান নিউ ইয়র্কের রাস্তায় পাপারাৎজিদের কবলে পড়লেন, ঠিক তখন তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে এলেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত গাড়ি চালক। নাম সুখচরণ সিং।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে যে সুখচরণ সিং নিউ ইয়র্কের ম্যান হ্যাটন পুলিশ স্টেশনের সামনে রাস্তায় তাঁর হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় লম্বা-চওড়া এবং সুঠাম দেহের অধিকারী এক ব্যক্তি সুখচরণের ইয়েলো ট্যাক্সির দিকে এগিয়ে আসেন। সুখচরণ জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি যে একজন নিরাপত্তা রক্ষী তা পরে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুখচরণ সিং জানিয়েছেন, ওই নিরাপত্তারক্ষী জানতে চেয়েছিলেন যে তিনি ভাড়া পেতে আগ্রহী কি না? উত্তরে নাকি সুখচরণ যেতে রাজি হয়েছিলেন। এরপর নাকি তিনি দেখেন গাড়ির পিছনের আসনে এক পুরুষ এবং দুই মহিলা উঠেছেন। প্রথমে একটু চেনা চেনা ঠেকলেও পরে নাকি তিন চিনতে পারেন ব্রিটেনের রাজপরিবারের প্রাক্তন রাজপুত্র হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগানকে। কারণ, এখন প্রায়শই খবরের শিরোনামে থাকেন হ্যারি এবং মেগান। নিরাপত্তারক্ষী আগেই সুখচরণকে গন্তব্যের ঠিকানা বলে দিয়েছিলেন। এরপর হ্যারি এবং মেগানও নাকি গাড়িতে উঠে কোথায় যেতে হবে তার ঠিকানা বলেছিলেন সুখচরণকে। তাঁর গাড়ির সামনে একটি বর্জ্য বোঝাই ট্রাক রাস্তা আটকে দাঁড়িয়েছিল। সুখচরণ নাকি বুঝতে পারছিলেন না কোনদিকে যাবেন। সেই সময় পিছন সিটে বসে থাকা হ্যারি ও মেগান তাঁদের গন্তব্য জানিয়ে রাস্তার নির্দেশও দিয়েছিলেন সুখচরণকে।

সুখচরণ সিং-এর বক্তব্য অনুযায়ী, গোটা রাস্তায় হ্যারি এবং মেগান বিশেষ কথা বলেননি। তবে, গাড়ি চলতে শুরু করলে হ্যারি তাঁর নাম জানতে চেয়েছিলেন। সুখচরণ তাঁর ভারতীয় নাম বলায় হ্যারির মুখে নাকি কিছুটা প্রসন্নভাবও লক্ষ্য করেছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছে হ্যারি ও মেগান তাঁকে ৫০ ডলার দেন। যদিও ভাড়া ছিল ১৭ ডলার। বাকি অর্থটা টিপস হিসাবে নাকি সুখচরণকে রাখতে বলেন হ্যারি। আর সেই সঙ্গে সুখচরণকে ধন্যবাদ ও দিনটা ভালো কাটুক বলেও শুভেচ্ছা জানিয়ে হ্যারি নাকি গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন। 

হ্যারির শাশুড়িকে অবশ্য চিনতে পারেননি সুখচরণ। পরে যখন সাংবাদিকরা তাঁর কাছে পৌঁছয় তখন নাকি তিনি বুঝতে পারেন যে হ্যারি ও মেগানের সঙ্গে থাকা প্রবীণ মহিলা আসলে শাশুড়ি। সুখচরণ তাঁর দেওয়া বয়ানে আরও জানিয়েছেন যে, হ্যারি ও মেগান তাঁর গাড়িতে ওঠার পরও কিছু পাপারাৎজি তাঁদের পিছু নিয়েছিলেন। কেউ কেউ ছবি তুলছিলেন গাড়ির কাছে। তবে, সুখচরণ জানিয়েছেন পাপারাৎজিরা খুব একটা আক্রমণাত্মক ছিলেন না। তাঁরা শান্তি মতো গাড়ির পাশে তাঁদের গাড়ি নিয়ে এসে ছবি তুলছিলেন। তাই তাঁর মনে হয়নি কেউ তাঁদের পিছু ধাওয়া করছে, যাকে ইংরাজিতে চেজ বলে ব্যাখ্যা করা হয়। 

বুধবার ভারতীয় সময় রাতে জানা যায় যে পাপারাৎজিদের শিকার হয়েছেন হ্যারি ও মেগান। আর পাপারাৎজিদের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে হ্যারি ও মেগানের গাড়ি রাস্তায় একাধিক গাড়িকে নাকি ধাক্কাও মারে। হ্যারির গাড়ির ধাক্কায় নাকি নিউ ইয়র্ক পুলিশের দুই অফিসার এবং কয়েক জন পথচারীও আহত হয়েছেন। যদিও, পরে বিবৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানায়, হ্যারি ও মেগানের গাড়ি বেসামাল হলেও কোনও ধাক্কা বা সংঘর্ষের কবলে পড়েনি। পাপারাৎজিদের জন্য যে হ্যারি-মেগান যে চরম বিপদে পড়ছিলেন তা অবশ্য বিবৃতিতে উল্লেখ করে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। এই ঘটনায় কেউ জখম হয়নি বলেও জানায় এনওয়াইপিডি। ১৯৯৬ সালে এভাবেই পাপারাৎজিদের ছবি তোলার শিকার হয়েছিলেন হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়না। আর তাতে প্রিন্সেস ডায়নার গাড়ি প্যারিসের একটি টানেলে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। এতে প্রাণ হারান ডায়না ও তাঁর বন্ধু ডোডি আল ফায়েদ। হ্যারির বয়স তখন মাত্র সাড়ে চার বছর। আজও মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুকে নিজের জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম আতঙ্ক বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন হ্যারি।