সংক্ষিপ্ত

অবশেষে মারিয়ুপোলকে সফলভাবে স্বাধীন করতে পেরে খুশি পুতিন। ওই শহরে একটি ইস্পাত কারখানা রয়েছে। সেই কারখানা ধ্বংস করে দেওয়ার পরিবর্তে তা দখল করার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

প্রায় ২ মাস হতে চলেছে, এখনও জারি রয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। এই পরিস্থিতির মধ্যেই এবার ইউক্রেনের শহর মারিয়ুপোলকে ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করল রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনের এই শহরকে অবশেষে মুক্ত করতে সফল হয়েছে রুশ সেনা। সংবাদ সংস্থ এএফপির তরফে এই খবর জানানো হয়েছে। 

এএফপির তথ্য অনুযায়ী, অবশেষে মারিয়ুপোলকে সফলভাবে স্বাধীন করতে পেরে খুশি পুতিন। ওই শহরে একটি ইস্পাত কারখানা রয়েছে। সেই কারখানা ধ্বংস করে দেওয়ার পরিবর্তে তা দখল করার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। চারটি বাসে করে ইতিমধ্যেই সেই শহর থেকে সবাইকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজও সেখানে জারি রয়েছে উদ্ধারকাজ। 

এই শহর স্বাধীন করা প্রসঙ্গে ইউক্রেনের উপ প্রধানমন্ত্রী ইরিয়ানা ভেরেস্চুক সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, "মানবিক করিডোরের মাধ্যমে বুধবারই এই শহর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবারও জারি রয়েছে সেই উদ্ধারকাজ। মহিলা, শিশু ও বয়স্কদের মারিয়ুপোল থেকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই শহরে থাকলে স্থানীয়দের ক্ষতি হতে পারে। সেই কারণেই সবাইকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।" ইউক্রেনের বন্দর শহর বলে পরিচিত মারিয়ুপোল। এই শহরটির দখল রাখতে চেয়ে বুধবার পর্যন্ত প্রাণপণ লড়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। লড়াইয়ের পরও এই শহর নিজেদের দখলে রাখতে পারে ইউক্রেন। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের বন্দর শহরের দখল নিয়েছে রুশ সেনারা। 

আরও পড়ুন- ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই শত্রুপক্ষকে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার, নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা মস্কোর

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। তারপর থেকে একের পর এক শহর দখল করার চেষ্টা লাগাতার হামলা চালিয়ে গিয়েছে রুশ সেনা। সাধ্যমতো তার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন সেনা। এই হামলার জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেনে। ভেঙে গিয়েছে শতাধিক বাড়ি, অফিস। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। ছবির মতো সাজানো দেশ এক কথায় আজ মৃত্যুপুরী। আর আজ তার আরও একটি শহর মারিয়ুপোলের দখল নিল রুশ বাহিনী। 

আরও পড়ুন- টিকে থাকার শেষ চেষ্ট ইউক্রেন বাহিনীর, ভিডিওতে দেখুন রাশিয়ার সমর যান লক্ষ্য করে হামলা

এর আগেও রুশ বাহিনী ইউক্রেনের একাধিক শহরের দখল নিয়েছে। আর সেই সময় রুশ বাহিনীর অত্যাচারের নমুনা দেখেছে গোটা বিশ্ব। মহিলা এবং শিশুদের ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। হাত বেঁধে হত্যা করা হয়েছে সাধারণ নাগরিককে। নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে হাসপাতালে। তাই সেই ঘটনার পুরনাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্যই আগে থেকে মারিয়ুপোল থেকে দ্রুত মানবিক করিডোর তৈরি করে নিরাপত্তার স্বার্থে সরানো হয়েছে বাসিন্দাদের।

আরও পড়ুন- রাশিয়ার নতুন টার্গেট রুশ অধ্যুষিত ডনবাস, প্রায় নিশ্চিহ্ন বন্দর শহর মারিউপোল

তবে মারিয়ুপোল দখল করা নিয়ে আগে থেকেই ইউক্রেনকে সতর্ক করছিল রাশিয়া। প্রাণে বাঁচতে হলে রবিবারের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল ক্রেমলিন। এমনকী, মঙ্গলবারও আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, মারিয়ুপোলের সেনাবাহিনী জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা আত্মসমর্পণ করবে না। গোটা বিশ্বের কাছে সাহায্য চেয়ে মেজর ভলনা জানিয়েছিলেন, তাঁদের ৫০০ সেনা জখম অবস্থায় রয়েছেন। হাজারেরও বেশি সাধারণ বাসিন্দা রয়েছেন সঙ্গে। এর মধ্যে কয়েকশো মহিলা ও শিশু, কারখানার নীচে পাতাল-গহ্বরে। ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত কারখানা আজভস্টল। ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। কারখানার মাটির নীচে জাল বিছিয়ে রয়েছে বহু টানেল ও অসংখ্য ঘর। রুশ বোমার হাত থেকে বাঁচতে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন মানুষ। কিন্তু, শেষরক্ষা আর হল না। অবশেষে মারিয়ুপোলের দখল নিল রুশ বাহিনী।