সংক্ষিপ্ত
২০২৪ সাল আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। অসংখ্য সুখের সাথে এই বছর শত শত বেদনাও বয়ে এনেছে। দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও এই বছর ভয়াবহ স্মৃতি ধারণ করে বিদায় নিচ্ছে। এই বছর বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু বড় বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা লক্ষ লক্ষ মানুষকে গভীর শোকে আচ্ছন্ন করেছে। এই দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিক, বিমান কর্মী এবং বিখ্যাত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। আসুন জেনে নিই এই বছর ঘটে যাওয়া বিশ্বের বড় বড় বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে।
মুয়ান বিমানবন্দরের জন্য কালো রবিবার: দুর্ঘটনায় ১৭৯ জনের মৃত্যু
দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৯ ডিসেম্বরের সকাল কালো রবিবার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। Boeing 737-800 Jeju Air বিমানটি ভেঙে পড়ে। এতে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। বিমানটি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে এসেছিল। দুর্ঘটনায় ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিমানে ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন। দু'জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট J28243 বড়দিনে বিধ্বস্ত
আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের Embraer 190 বিমানটি কাজাখস্তানের আকতাউ বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টায় ২৫ ডিসেম্বর ভেঙে পড়ে। বিমানে ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুলবশত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করায় এই বিমানটি ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমা চেয়েছেন। রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ইউক্রেনের আক্রমণের জবাব দিচ্ছিল। সেই সময় ভুলবশত বিমানের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
ভোয়েপাস এয়ারলাইন্স ATR-72 বিধ্বস্ত
ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ভোয়েপাস এয়ারলাইন্স কর্তৃক পরিচালিত একটি ATR-72 বিমান ৯ আগস্টে ভেঙে পড়ে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে পাইলটরা বিমানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা সকল ৬২ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৫৮ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।
নেপালে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা
২৪ জুলাই ২০২৪, নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সূর্য এয়ারলাইন্সের একটি বিমান পোখরার উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের সময় ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে, যাদের মধ্যে ১৭ জন সূর্য এয়ারলাইন্সের কর্মী এবং বাকি ২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। বিমানটি প্রায় ২১ বছরের পুরানো ছিল এবং মেরামতের পর পরীক্ষামূলকভাবে উড়ানো হচ্ছিল। বিমানটি সকাল প্রায় ১১ টায় উড্ডয়ন করেছিল, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ইরানে রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত
ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার ১৯ মে ভেঙে পড়ে। খারাপ আবহাওয়া এই দুর্ঘটনার কারণ ছিল। এই দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি রাইসি, বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান সহ ৯ জন নিহত হন। দুর্ঘটনাটি ঘটে তেহরান থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে ইরানের সীমান্তবর্তী শহর জোলফার কাছে। ঘন কুয়াশা এবং পাহাড়ি এলাকার কারণে হেলিকপ্টারের পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং এটি ভেঙে পড়ে।
রাশিয়ায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় একটি বিমান ভেঙে পড়ে। জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হন। এই বিমানে ৬৫ জন ইউক্রেনীয় বন্দী এবং ৯ জন রুশ ক্রু সদস্য ছিলেন। রাশিয়া ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কথা বলেছে, অন্যদিকে ইউক্রেন রাশিয়ার উপর দোষ চাপিয়েছে।
মালাবিতে বিমান দুর্ঘটনা
মালাবীর উপরাষ্ট্রপতি সৌলোস ক্লস চিলিমা এবং তার ৯ সহযোগী একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হন। জুন মাসে এই দুর্ঘটনা ঘটে যখন তাদের বিমানটি খারাপ আবহাওয়ার কারণে নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ বিমানটিকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু দৃশ্যমানতা কম থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিমানের ধ্বংসাবশেষ একদিন পর দেশের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া যায়।
হলিউড অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান অলিভারের বিমান দুর্ঘটনা
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি বিমান দুর্ঘটনায় হলিউড অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান অলিভার, তার দুই মেয়ে এবং পাইলট নিহত হন। ৬ জানুয়ারি এই দুর্ঘটনাটি গ্রেনাডাইন্সের একটি ছোট দ্বীপ পেটিট নেভিসের কাছে ঘটে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমানটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয় এবং বিমানটি সমুদ্রে পতিত হয়।
চিলির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে
চিলির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সেবাস্তিয়ান পিনেরার হেলিকপ্টার এই বছর একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই দুর্ঘটনাটি চিলির দক্ষিণাঞ্চলে ঘটে। হেলিকপ্টারে চারজন ছিলেন, যাদের মধ্যে ৩ জন বেঁচে যান, কিন্তু সেবাস্তিয়ান পিনেরা মারা যান। এই দুর্ঘটনাটি চিলিতে বড় দুর্ঘটনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
আফগানিস্তানে বিমান দুর্ঘটনা
২১ জানুয়ারী ২০২৪, আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশে একটি বিমান ভেঙে পড়ে। এই ব্যবসায়িক জেটে সাতজন রুশ নাগরিক ছিলেন, যারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিমানটি মরক্কোর একটি বিমান সংস্থার ছিল এবং এর ইঞ্জিনে ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ক্রু সদস্য এবং যাত্রীরাও মারা যান।
জাপানের হানেদা বিমানবন্দরে দুটি বিমানের সংঘর্ষ
জাপানের রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরের রানওয়েতে জাপান এয়ারলাইন্স Airbus A350 এবং জাপান কোস্ট গার্ড বিমানের মধ্যে ২ জানুয়ারি সংঘর্ষ হয়। এয়ারলাইন্স এয়ারবাসের বিমানে থাকা সকল ৩৭৯ জন যাত্রীকে সুরক্ষিতভাবে বের করে আনা হয়। কোস্ট গার্ড বিমানে থাকা পাঁচজন ক্রু সদস্যের মৃত্যু হয়।