Israel Iron Beam: ইজরায়েল আয়রন বিম নামের একটি হাই-এনার্জি লেজার অস্ত্র তৈরি করেছে। এর সাহায্যে রকেট, ড্রোন, মর্টার এবং কম উচ্চতায় উড়তে থাকা বিমান ধ্বংস করা যায়। এর রেঞ্জ প্রায় ১০ কিমি। এটি কম খরচে আকাশপথে আসা বিপদ আটকাতে পারে।
What is Iron Beam: ইজরায়েল হাই-এনার্জি লেজার ডিফেন্স সিস্টেম 'আয়রন বিম'-এর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এটি ২০২৫ সালের শেষের দিকে মোতায়েন করা হবে। আধুনিক যুদ্ধে এটিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আয়রন বিম আকাশ থেকে আসা বিপদ ধ্বংস করতে হাই-পাওয়ার লেজার রশ্মি ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে রকেট, ড্রোন, মর্টার এবং কম উচ্চতায় উড়তে থাকা বিমানকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করা যায়। এতে আকাশপথে আসা বিপদ ধ্বংস করার খরচও অনেক কম।
মিসাইলের বদলে লেজার দিয়ে আক্রমণ করে আয়রন বিম
প্রচলিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে আকাশ থেকে আসা বিপদ ধ্বংস করার জন্য ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল ব্যবহার করা হয়। ইজরায়েলের কাছে আয়রন ডোম নামের এমন একটি সিস্টেম রয়েছে। ড্রোন, রকেট এবং মর্টার দিয়ে হামলা হলে তা প্রতিরোধ করা বেশ ব্যয়বহুল। আক্রমণ করতে আসা রকেট ধ্বংস করার জন্য তার চেয়ে অনেক বেশি দামী মিসাইল ছুড়তে হয়। একসঙ্গে অনেক টার্গেট থাকলে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মিসাইল শেষ হয়ে যায়।
এই সমস্যাগুলোর সমাধান হিসেবে ইজরায়েল আয়রন বিম তৈরি করেছে। এতে মিসাইলের পরিবর্তে লেজার দিয়ে আক্রমণ করা হয়। এটি অনেক কম ব্যয়বহুল। এর মাধ্যমে একবারে অনেক টার্গেট ধ্বংস করা যায়। আয়রন বিম তৈরি করেছে ইজরায়েলি কোম্পানি রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস। এটি প্রথমবার ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারশো-তে বিশ্বের সামনে আনা হয়েছিল।
রকেট, মর্টার থেকে বিমান পর্যন্ত টার্গেট করবে আয়রন বিম
আয়রন বিম এখন মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত। দক্ষিণ ইজরায়েলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চালানো চূড়ান্ত পরীক্ষায় আয়রন বিম রকেট, মর্টার, ড্রোন এবং এমনকি কম উচ্চতায় উড়তে থাকা বিমানসহ বিভিন্ন ধরনের টার্গেটকে সফলভাবে ধ্বংস করেছে।
আয়রন বিমকে কেন গেম চেঞ্জার বলা হচ্ছে?
প্রচলিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে যদি একবারে অনেক টার্গেট আটকাতে হয়, তাহলে তার মিসাইল শেষ হয়ে যেতে পারে। ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের দ্বারা ইজরায়েলে করা হামলায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আজকের যুগে যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে। ড্রোনের বড় বড় ঝাঁক একসঙ্গে হামলা করতে আসে। এমন পরিস্থিতিতে সবগুলোকে ভূপাতিত করা কঠিন। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের লঞ্চারে লোড করা মিসাইল শেষ হয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আয়রন বিম তৈরি করা হয়েছে। এতে আকাশ থেকে আসা বিপদ দূর করতে হাই-পাওয়ার লেজার ব্যবহার করা হয়। এই সিস্টেমে মিসাইল শেষ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা নেই। সিস্টেমে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে এটি ক্রমাগত শত্রুর আকাশ হামলা ব্যর্থ করতে পারে। লেজার ব্যবহারের কারণে এটি সস্তাও বটে। এই কারণেই একে গেম চেঞ্জার বলে মনে করা হচ্ছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ বলেছেন,
আয়রন বিম সামান্য খরচে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে আঘাত হানে। এটি আমাদের বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সমীকরণ বদলে দেবে।
ইজরায়েলের বর্তমান এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের পরিপূরক হবে আয়রন বিম
ইজরায়েলের কাছে আগে থেকেই আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিং বা অ্যারো-এর মতো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। আয়রন বিমকে এগুলোর পরিবর্তে আনার জন্য তৈরি করা হয়নি। এটি এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাল্টি-লেয়ার ডিফেন্স নেটওয়ার্কে একটি নতুন স্তর যোগ করবে এবং পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
আয়রন ডোম গাজায় হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীর রকেট আটকাতে খুব কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু এটি দামী মিসাইল ইন্টারসেপ্টরের ওপর নির্ভরশীল। এর প্রতিটি মিসাইলের দাম কমপক্ষে ৫০,০০০ ডলার (প্রায় ৪৪.১৩ লক্ষ টাকা)। যুদ্ধের সময় যখন শত্রু হাজার হাজার রকেট এবং ড্রোন ছোড়ে, তখন এই খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। আয়রন বিম এই সমস্যার সমাধান। এটি স্বল্প-দূরত্বের বিপদ, যেমন ছোট রকেট, ড্রোন, মর্টার এবং এই ধরনের কম খরচের অস্ত্রের ওপর মনোযোগ দিয়ে কাজ করে।
কীভাবে কাজ করে আয়রন বিম?
আয়রন বিমের প্রধান শক্তি এর ফাইবার লেজার প্রযুক্তিতে নিহিত। এটি অত্যন্ত ঘনীভূত শক্তির রশ্মি তৈরি করে। যখন কোনো বিপদ শনাক্ত হয়, তখন এই সিস্টেমটি তাকে ট্র্যাক করে এবং তার ওপর লেজারের রশ্মি ফেলে। লেজারের শক্তি সেই টার্গেটকে ধ্বংস করে দেয়।
লেজার শক্তি টার্গেট ধ্বংস করতে প্রায় চার সেকেন্ড বা তারও কম সময় নেয়। এই সিস্টেমের রেঞ্জ ১০ কিলোমিটার বলে অনুমান করা হয়। এটি শহর, সামরিক ঘাঁটি বা গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রক্ষার জন্য মোতায়েন করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ: 'গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল', রাষ্ট্রসংঘ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ আনল


