সংক্ষিপ্ত

এখানকার মানুষেরা বড় বাড়ি তৈরি করতে লজ্জা পান। ঘরবাড়িগুলো তাঁদের শারীরিক আয়তনের ওপর নির্ভর করেই ছোট ছোট আকৃতিতে তৈরি। 

লেখক জোনাথন সুইফট-এর বিশ্বখ্যাত রচনা গালিভারের ভ্রমণবৃত্তান্তের কথা মনে আছে? ভ্রমণকারী গালিভার একবার বিপর্যয়ের শিকার হয়ে গিয়ে পড়েছিলেন এমন এক দ্বীপে, যে দ্বীপে সমস্ত মানুষই বেঁটে বেঁটে ছোটোখাটো। সেই আকর্ষণীয় চমকপ্রদ রচনা যদিও এক্কেবারে গল্পকথা, কিন্তু, বাস্তবিক পৃথিবীর সঙ্গে তা যে একেবারেই সম্পর্কবিহীন, তা কিন্তু একেবারেই নয়। ইরানের এক বালিঢাকা প্রত্যন্ত গ্রামে দেখা গেল সেই গল্পকথাই। 

ইরান-আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাখুনিক গ্রাম, যেখানে বসবাসকারী সমস্ত মানুষই বামন, এই জায়গাটিকে বলা হয় ‘লিলিপুট ল্যান্ড’ বা লিলিপুট গ্রাম (Lilliput Village)। যদিও এখানকার মানুষদের বেঁচে থাকার মধ্যে জোনাথন সুইফট-এর গল্পের মতো কোনও রাজকীয়তা নেই। সত্যটা বরং তার উলটোই। খাবারের প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে ভুগে ভুগে মাখুনিক গ্রামের মানুষদের শারীরিক দৈর্ঘ্য কোনওদিন বৃদ্ধিই পায়নি। অভাব ছিল খাবার জলেরও। মরুপ্রান্তিক দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পানীয় জলটুকুও পান না এখানকার মানুষ। ফলে, লিলিপুট হওয়া তাঁদের জীবনে এক ভয়াবহ দারিদ্র্যতার ছাপ।


এখানকার বাসিন্দারা স্থাপত্য শৈলীর উপর ভিত্তি করে নিজেদের কুঁড়েঘরগুলি নির্মাণ করেন। ঘরবাড়িগুলো তাঁদের শারীরিক আয়তনের ওপর নির্ভর করেই ছোট ছোট আকৃতিতে তৈরি, আর সেগুলোর আকার এমন, যে দূরদূরান্ত থেকে দেখলে সেগুলোকে পাহাড়ের অংশ বলেই মনে হবে, আলাদা করে বাড়ি বলে চেনা যাবে না। এখানকার মানুষেরা বড় বাড়ি তৈরি করতে লজ্জা পান। গ্রামে বসবাসকারী নারীরা তাঁতের কাজ করেন কারণ এই কাজ ছাড়া তাদের আয়ের অন্য কোনও উৎস নেই। এঁরা নিজেদের আফগানিস্তানের পুরাতন বাসিন্দা বলে দাবি করেন এবং কথা-ও বলেন আফগানি দারি ভাষায়।