Population Control: দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত মানবসভ্যতা এখনই বিলুপ্তির মুখে না হলেও, টিকিয়ে রাখা দায়। যদি মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখতে হয়, তবে ‘প্রতিস্থাপন হারের’ সংজ্ঞা নতুন করে ভাবতে হবে এবং হয়তো লক্ষ্য হবে প্রতি নারীর ২.৭ সন্তান।
Population Decline: বিশ্বজুড়ে কমছে জনসংখ্যার হার। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন মহিলার গড়ে ২.১ সন্তান থাকা আবশ্যক। এই সংখ্যাটিকে 'Replacement Fertility Rate' বলা হয়। এই সংখ্যাটি বিশ্বব্যাপী নীতি এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকে রূপ দিয়েছে। তবে, PLOS One জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, দীর্ঘকাল ধরে মেনে আসা ২.১ সংখ্যাটি ভবিষ্যতে মানব জনসংখ্যার হ্রাস, এমনকী বিলুপ্তি রোধ করার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। শুধু ২.১ নয়, ভবিষ্যতে মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হবে প্রতি নারী পিছু গড়ে ২.৭টি সন্তান।
গবেষণা কী বলছে?
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন যে প্রকৃত প্রতিস্থাপনের হার প্রতি মহিলার জন্য ২.৭ শিশুর কাছাকাছি হওয়া উচিত, ২.১ নয়। ২.১ -এর হিসেবে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ পড়েছে তা হল-
১. সন্তান হওয়ার আগেই অকাল মৃত্যু
২. জন্মের সময় লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা
৩. সন্তানহীনতা বা সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত
৪. পরিবারভিত্তিক বৈচিত্র্য ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা
ইলন মাস্কের সতর্কবার্তা
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্ক বহুবার বলেছেন, জন্মহার হ্রাসই সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। তাঁর মতে, আধুনিক জীবনের সুবিধা ও জীবনধারার পরিবর্তনের জেরে মানুষ কম সন্তান নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে শ্রমিক সংকট, প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ ও আর্থিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কেন কমছে জন্মহার?
১. শিক্ষা ও কেরিয়ারে জোর : মহিলারা এখন স্বনির্ভর হয়েছে।.উচ্চ শিক্ষা ও চাকরির জন্য সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যাচ্ছে অথবা কম সন্তান ধারণের ইচ্ছা বাড়ছে।
২. খরচ বেড়েছে : যে হারে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে তাতে বাড়ি, শিক্ষা ও শিশুর দেখভালের জন্য ব্যয় অনেক বেড়েছে। একটির বেশি সন্তান নেওয়া, তাকে মানুষ করা আজ যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ।
৩. গর্ভনিরোধের সহজলভ্যতা : পরিবার পরিকল্পনায় স্বাধীনতা এসেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নত সুযোগ মহিলাদের প্রজনন সিদ্ধান্তের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে।
৪. পরিবেশের জন্য উদ্বেগ : ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাব, এই দুশ্চিন্তা অনেককেরই। পরিবেশ ও বিশ্বের অবস্থা সম্পর্কে ভয়ের কারণে অনেকেই সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
৫. পুরুষদের শুক্রাণুর মান হ্রাস : কিছু গবেষক মনে করেন, পরিবেশে কৃত্রিমতা ও রাসায়নিকের ব্যবহার, দূষণ ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন হচ্ছে। যার ফলে পুরুষদের উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে জন্মহার পতনেই পরিসংখ্যান
১৯৬০ সালে বিশ্বের গড় জন্মহার ছিল ৫.৩ যা ২০২৩ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ২.৩ -এ। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার মাত্র ০.৮৭। উন্নত দেশ চিনের জনসংখ্য ২০২৪ সালে ১০ লাখ কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হার ১.৬২। যা নতুন লক্ষ্যমাত্রা ২.৭ থেকে অনেকটাই কম।
এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণের কারণ কী?
বর্তমানের এই গবেষণায় সন্তান প্রতি নারী মাথা পিছু জন্মহার ২.১ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও দ্বিমত পোষণ করছেন একাংশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন জনসংখ্যা বিভাগের প্রধান জোসেফ চ্যামি মনে করেন, ২০৮০ সালের আগে বিশ্ব জনসংখ্যা কমবে না—বরং তা ১০.৩ বিলিয়নে পৌঁছে তারপর ধীরে ধীরে কমবে। আবার অন্যদিকে ড. জেনিফার সিউবা-র মতে, 'মানুষ স্বেচ্ছায় কম সন্তান নিচ্ছে, আর এই পরিবর্তন স্থায়ী হতে চলেছে। আমাদের উচিত স্বল্প জনসংখ্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া।'
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
