সংক্ষিপ্ত
চিনে দিনে দিনে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আগামী দিনে আরও বাড়তে আক্রান্তের সংখ্যা। এই অবস্থায় বেজিং জানিয়ে দিয়ে তারা প্রতিদিন কোভিড তথ্য প্রকাশ করবে না।
২০২০ সাল থেকেই চলা কঠোর নিয়ন্ত্রণবিধি চিন সরকার তুলে নিয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তারপর থেকে দেশে বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। চিনের প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তথ্যের অস্বচ্ছতা। যা চিন ছাড়াই তার প্রতিবেশী ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
অস্বস্তিকর তথ্য
বেজিং স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে গতমাসে বাধ্যতামূলক গণ কোভিড পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ট্র্যাক করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন প্রতিদিন দেশব্যাপী সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যন প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আর সেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিড কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের হাতে। যা ৮ জানুয়ারি থেকে চিনে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা মাসে একবার করে আপডেট করবে বলেও জানিয়েছে।
চিনে ৭ ডিসেম্বর থেকে কোভিড-১৯ শূন্য নীতির পরিপ্রেক্ষিতে যে লকডাউন জারি হয়েছে তা তুলে নেয়া হয়েছে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১৫ জনের মৃত্যুর নথিভুক্ত করা হয়েছে। যাতে এটাই উদ্বেগের যে সরকারি পরিসংখ্যানে সংক্রমণের সঠিক রেরর্ড তুলে ধরা হচ্ছে না।
চিনে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে সংগৃহীত ডেটার স্কেল, যখন বাধ্যতামূলক ভর পিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছিল তার থেকে অনেকটাই কম। সিডিসি কর্মকর্তা ইয়িন ওয়েনউউ বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এখন হাসপাতাল, স্থানীয় সরকার সমীক্ষার পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা, ওষুধ বিক্রি এজাতীয় তথ্য সংগ্রহ করছে। যা কোভিড তথ্য আপডেট করতে সাহায্য করবে। চিনা হাসপাতাল ও শ্মশানগুলি রোগী ও মৃতদেহে তথ্যও সংগ্রহ করাহচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে চিনা কোভিড তথ্যের অস্বচ্ছতা জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা-সহ বেশ কয়েকটি দেশে চিনে আসা-যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গতমাসে কয়েকটি স্থানীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ আক্রান্তের দৈনিক তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে। যেমন মঙ্গলবার জেজিয়াংএর রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত কয়েক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষের বেশি হয়ে গেছে। জানুয়ারি মাসে মহামারি সর্বোচ্চ আকার নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কুঝোউ ও ঝুশান এই দুটি শহরে তিরিশ শতাংশ মানুষই আক্রান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে।
পূর্ব উপকূলায় শহর কিংডাওতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ডংগুয়ান এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষের বেশি। হাইনান দ্বীপের ৫০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলেও দাবি স্থানীয় প্রশাসনের।
চিনের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, এয়ারফিনিটি নামের একটি সংস্থার অনুমান আগামী এপ্রিল মাসে চিনে প্রতিদিন ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে করোনা-আক্রান্ত হয়ে। সেই সময় চিনে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হবে। আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে।
অনেক দেশই কোভিডের বাড়বাড়ন্তের জন্য চিনকেই নিশানা করেছে। কিন্তু বর্তমান তরঙ্গ থেকে নতুন স্ট্রেইনের জন্ম হতে পারে বলেও দাবি করছে। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও স্ট্রেইনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। চীনা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক দিনগুলিতে বলেছেন যে ওমিক্রন সাবভেরিয়েন্ট BA.5.2 এবং BF.7 বেইজিংয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, জনসাধারণের আশঙ্কার প্রতিক্রিয়ায় যে ডেল্টা রূপটি এখনও প্রচারিত হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
করোনাভাইরাসের কারণে আবার জারি হবে লকডাউন? জানুন কী বলছে গ্রহের অবস্থান
নতুন বছরের স্বাগত ভাষণে করোনা-কথা শি জিংপিং-এর মুখে, এড়িয়ে গেলেন চিনাদের বিক্ষোভের প্রসঙ্গ