সংক্ষিপ্ত
- পালিকা মাকে ও বাবাকে হারিয়ে অনাথ হল মেঘনা
- মেঘনা হল গোল্ডেন রিট্রিভার প্রজাতির কুকুর
- অভিযোগ, তার পালিকা মাকে খুন করে তার বাবা
- ঘটনার পর, এক পশু প্রেমিকের কাছে রয়েছে সে
সম্প্রতি হারিয়েছিল পালিকা মাকে, এবার বাবাকেও হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়ল বছর আড়াইয়ের মেঘনা। মেঘনা হল গোল্ডেন রিট্রিভার প্রজাতির কুকুর। সূত্রের খবর,তার পালক পিতা চন্দন বিশ্বাস তাকে পাশের ঘরে বন্দি করে রেখে তার পালিকা মা মিনা বিশ্বাসকে গলা কেটে খুন করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত চন্দন বিশ্বাসকে পুলিশ অসুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করে হাসপাতালে পাঠায়। স্ত্রীকে গলা কেটে খুন করার পর নিজেও কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল চন্দন। এই ঘটনার পর থেকেই এক পশু প্রেমিকের কাছে রয়েছে মেঘনা।
আরও পড়ুন, চুরির সামগ্রী বিক্রির জন্য অভিনব কায়দায় বিজ্ঞাপন, গ্রেফতার ২
সূত্রের খবর, বাগনান থানার হরিনারায়ণপুরে গত সাত মাস যাবৎ ভাড়া বাড়িতে থাকতো চন্দন ও মিনা। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে তাদের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গত বুধবার চন্দন তার স্ত্রী মিনাকে গলা কেটে খুন করে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি চন্দনও পাশের ঘরে গিয়ে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চন্দনের মৃত্যু হয়। স্ত্রীকে খুন করার আগে বাড়ির তৃতীয় সদস্য আড়াই বছরের গোল্ডেন রিট্রিভার মেঘনাকে চন্দন পাশের ঘরে আটকে রাখে বলে জানা গিয়েছে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে মিনা-র অত্যন্ত প্রিয় কুকুর ছিল মেঘনা। মেঘনাকে নিজের সন্তানের মতো দেখতো মিনা। সে মেঘনাকে নিজের হাতে করে খাবার খাওয়াতো। যেদিন মিনাকে খুন করা হয় সেদিন নাকি পাশের ঘর থেকে মেঘনাকে অস্বাভাবিক ভাবে চিৎকার করতে শোনা যায়। প্রতিবেশীরা জানান মেঘনা মিনাকে এতোটাই ভালবাসতো যে সে যদি খোলা থাকতো তাহলে চন্দন কোনওভাবেই তার স্ত্রী মিনাকে খুন করতে পারত না। সেটা অনুমান করেই মিনাকে খুন করার আগে চন্দন মেঘনাকে পাশের ঘরে বন্দী করে রেখেছিল। বাসিন্দারা জানান,পুলিশ যখন চন্দনকে গ্রেফতার করে এবং মেঘনাকে নিয়ে যায় তখন মেঘনা নাকি অস্বাভাবিক আচরণ করছিল ।
আরও পড়ুন, মোদী সরকারকে কি অনাগরিকরা ভোট দিয়ে এনেছে, প্রশ্ন অপর্ণার
অপরদিকে, মেঘনাকে থানায় আনার পর সে নিমেষে থানার প্রতিটি আধিকারিকের মন জয় করে নেয়। থানার আধিকারিকরা তাকে আদর করলে সে তার বিশাল লেজ নাড়িয়ে তার আনুগত্য প্রকাশ করেছে। কিন্তু যখনই সে একা থেকেছে তখনই সে মুখ দিয়ে অদ্ভুত রকম 'কুঁই কুঁই' আওয়াজ করেছে বলে জানা গিয়েছে। তার চোখের কোন দিয়ে নেমে এসেছে জলের ধারা। কেউ কেউ জানিয়েছেন মেঘনা সারাক্ষণ তার পালিকা মাকে খুঁজে বেড়িয়েছে। রাজকুমার মন্ডল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান প্রথম দিন সে কিছুই খেতে চায়নি। শুধু মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ করে সে ফিরে যেতে চেয়েছে তার পালিকা মায়ের কোলে। সে হয়তো অনুমান করতে পারছে যে তার জীবনে বড় রকমের কোনও অঘটন ঘটে গিয়েছে। শনিবার মেঘনাকে অদ্ভুত রকমের শান্ত দেখা গিয়েছে। সে কোনও রকম চিৎকার-চেঁচামেচি করেনি। বারে বারে শুধু দরজার দিকে তাকিয়েছে,এই হয়তো ফিরে এলো তার পালিকা মা মিনা। কিন্তু সে আজও জানতে পারেনি যে তার পালিকা মা অথবা পালক বাবা কেউই আর কোনওদিনও তাঁকে কোলে টেনে নেবে না। দু'জনেই জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূরে পাড়ি দিয়েছে।