সংক্ষিপ্ত
- আজ ২০ অগস্ট, জেমস প্রিন্সেপের জন্মদিন
- কে এই জেমস প্রিন্সেপ ? ইতিহাসে কী অবদান তাঁর
- স্মৃতির সরণি বেয়ে তারই উত্তর খুঁজল এশিয়ানেট নিউজ বাংলা
(আজ ২০ অগস্ট। জেমস প্রিন্সেপের জন্মদিন। কে এই জেমস প্রিন্সেপ ? কলকাতা তথা ভারতের ইতিহাসে কী অবদান তাঁর। স্মৃতির সরণি বেয়ে তারই উত্তর খুঁজলেন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি তপন মল্লিক।)
কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি প্রিন্সেপ ঘাট। এর বয়স খুব বেশি না হলেও স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দুই আকর্ষণীয়। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ওয়াটার গেট ও সেন্ট জর্জেস গেটের ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা এই নান্দনিক ও অতিকায় প্যালাডিয়ান পোর্চটি যে কারও নজর কাড়বে। ব্রিটিশ যুগে ঘাটটি তৈরি হয়েছিল ১৮৪১ সালে। প্রথম দিকে ব্রিটিশদের সব যাত্রীবাহী জাহাজের যাত্রী এই ঘাটেই ওঠানামা করত। এই ঘাটটির নাম প্রায় সবার মুখে মুখে ফেরে। সবারই জায়গাটি চেনা। তা হলেও ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষটি কে, কেনই বা তাঁর নামে এত বড় একটি স্মৃতি সৌধ, সে কথা অধিকাংশ কলকাতাবাসী জানেন না।
তবে জেমস প্রিন্সেপ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন। পরবর্তী বছরগুলিতে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের মুদ্রাতত্ত্ব ও লিপিবিদ্যার ক্ষেত্রে তাঁর প্রবর্তিত গবেষণা পদ্ধতিই প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুসরণ করেছে। যে উদ্দীপনা ও পরিশ্রম দিয়ে ভারতীয় ও ইউরোপীয় সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কারের কাজ করেছিলেন তা তার আগের একশো বছরেও হয়নি।
সম্রাট অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেছিলেন জেমস প্রিন্সেপ। যখন তিনি ব্রাহ্মীলিপিতে অশোকের দীর্ঘ অনুশাসনের পাঠোদ্ধার করেন, তখন অশোক ও প্রাচীন ভারত সম্পর্কে কেউই বিশেষ কিছু জানতেন না। প্রিন্সেপ গ্রিক হরফ জানতেন, ব্রাহ্মীলিপিতেও দক্ষতা ছিল। তাঁর পরিশ্রমের ফলেই বিশ্বের মানুষ প্রাচীন ভারতের শক্তিশালী শাসক বিহারের অশোক সম্পর্কে জানতে পারে। একই সূত্রে গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কেও।
জেমস প্রিন্সেপ মাত্র ২০ বছর বয়সে ইংল্যান্ড থেকে চাঁদপাল ঘাটে নেমেছিলেন। কলকাতার টাঁকশালে সহকারী ধাতু পরীক্ষক (Assey Master) হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তারপর তাঁকে নতুন টাঁকশাল খোলার জন্য কাশীতে পাঠানো হয়। ফের তিনি ডেপুটি এসে মাস্টার হিসেবে কলকাতার টাঁকশালে ফিরে আসেন। তিনি ‘ভিউস অ্যান্ড ইলাসস্ট্রেশনস অফ বেনারস’ নামে একটা বই লেখেন। ‘গ্ল্যানিংস অফ সায়েন্স’ নামে একটা সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এই সাময়িক পত্রিকাটিই পরবর্তীকালে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির মুখপত্র হয়। ১৮৩২ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন।
মুদ্রার প্রতি প্রিন্সেপের প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি কুষাণ আমলের মুদ্রার পাঠোদ্ধার ও বিশ্লেষণ করেন। এ ছাড়া তিনি ছাপাঙ্কিত মুদ্রাসহ সমস্ত ভারতীয় স্থানীয় মুদ্রা, স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের মুদ্রা, গুপ্ত আমল ও অন্যান্য সময়ের মুদ্রার পাঠোদ্ধার করেন। প্রিন্সেপই ‘পাঞ্চ-মার্কড’ বা ছাপঙ্কিত কথাটি প্রথম চালু করেন। তিনি মুদ্রা প্রচলনের পর্যায় হিসেবে ছাপঙ্কিত নকশা খচিত ও ছাঁচে ঢালাইকৃত তিনটি পর্যায় শনাক্ত করেন।
পরিশ্রম করতে করতে প্রিন্সেপ একদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁকে তাঁর কাজের মাঝপথেই দেশে ফিরতে হয়। জেমস প্রিন্সেপ মাত্র ৪১ বছর বয়সে ২২শে এপ্রিল ১৮৪০ সালে ইংল্যান্ডে মারা যান। তাঁর অধিকাংশ কাজই অসমাপ্ত থেকে যায়। জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তদকালীন ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড এডেনবরা ১৮৪১-৪২ সাল নাগাদ জেমস প্রিন্সেপের নামে গঙ্গার ধারে এই স্মৃতিসৌধ ও ঘাট তৈরি করেন।