সংক্ষিপ্ত

  • ইংরাজিতে একটি জনপ্রিয় শব্দ আছে হিপোক্রিসি
  • কথায়-কথায় আমরা তা ব্যবহার করতেও ভালোবাসি
  • লকডাউন ৩-এ মদ কিনতে মানুষের লাইন কি তবে হিপোক্রিসি
  • সরকারের এই মদ বিক্রির অনুমতি আদৌ কি লকডাউনের স্বার্থকে সমর্থন করছে

বিউ সরকার-- করোনা  আতঙ্ক আজ গ্রাস করেছে সমস্ত দেশবাসীকে । আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছেন সকলে। সারাক্ষণই চিন্তা এই না করোনার বীজ শরীরে ঢুকে পড়ে। আর করোনার মৃত্যুর খবর এই আতঙ্কের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে, এত সবের পরও কিছু জিনিস পরিস্কার চোখে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে অনেককিছু। যেখান থেকে সামনে বেরিয়ে আসছে অনেক প্রশ্ন, অনেক জিজ্ঞাসা। কারণ, মানুষ করোনা নিয়ে চর্চায় যতটা না আতঙ্ক প্রকাশ করছে তেমন সচেতনতা তো লকডাউনের নিয়ম বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং পালনে দেখা যাচ্ছে না। 

কোভিড ১৯-এর জেরে ইতিমধ্যেই অনেকেই নিজেদের প্রিয়জন আত্মীয়-স্বজন কে হারিয়েছে। কিন্তু আজ ভগবান এর থেকেও বেশি নির্ভরশীল সেই সকল মানুষদের কাছে যাদেরকে আমরা চিনি ডাক্তার ও নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ-এর পরিচয়ে, আজ্ঞে হ্যাঁ! একমাত্র তারাই নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে লড়ে চলেছে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য।  

এই মৃত্যু ভয় যে এতটাই মারাত্মক যাতে করে কোনও পরিবারের ছোট বাচ্চাটা ও আতঙ্কে থাকে যে পরের দিন সকাল হলে সে তার বাবা-মাকে পাবে তো? এরইমধ্যে তৃতীয় দফায় দেশে শুরু হয়েছে লকডাউন। কিন্তু তাতেও দেশের হাল যে খুব একটা ফিরেছে তা আমরা হলফ করে বলতে পারি না বরং দিনের পর দিন আরও কঠিন পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই মানব সমাজ। মানুষের আয় বলতে গেলে প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। যেটুকু পুঁজি জমানো ছিল তাও আজ শেষের মুখে। হায়রে মানব সমাজ! কখনও কি ভেবে দেখেছিলো যে এমনও দিন আসতে পারে? 

আরও পড়ুন- ছবি এঁকে পরজন্মের কথা বলে ভিক্ষে করেন ওঁরা, জুটছে না ইহজন্মের চালটুকুও

আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের পেটে ভাত নেই। অনাহারে দিন গুজরান হচ্ছে কোনওমতে। এরইমধ্যে কিছু সমাজসেবী সংস্থা হাতে হাত মিলিয়ে লড়ে যাচ্ছে মানুষের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য। এই যে আমরা এত জাত ধর্ম নিয়ে মাথা খারাপ করি, আজ সেগুলো কই? সত্যি বলতে, ক্ষুধার কোন ধর্ম হয় না।

ইতিমধ্যেই দুদিন আগে সরকার থেকে মদের দোকান গুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেখে অবাক হই যে মানুষের হাতে আজ নাকি অর্থের অভাব। কিন্তু তবুও নিজের পরিবার বর্গ, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে সবার কথা ভুলেই সুরাপ্রেমী মানুষজন- অবশ্যই এই দলে পুরুষ এবং মহিলা-সকলেই আছেন, রোগের পরোয়া না করে মদের দোকানের বাইরে লাইন দিয়েছে। এদিকে সংসারে হাড়ি চরল কিনা সেদিকেও হুঁশ নেই। ছোট্ট শিশুটি না খেতে পেয়ে  কেঁদে ও চলেছে  খেয়াল নেই এরপরে না খেয়ে মারা যাবে তবুও নেশা ছাড়া যাবে না। এমনই একটা বার্তা যেন আমরা দিনের পর দিন পাচ্ছি আমাদের এই মানব সমাজ থেকে। স্বাভাবিক দিনযাপন যে কবে হবে ,রোজকার শুরু কবে হবে সবকিছুই এখন অজানা। 

আরও পড়ুন- মৃত্য়ুভয় কিন্তু সেভাবে নেই, বন্দিদশা কবে ঘুচবে, সেটাই এখন সবার দুশ্চিন্তা

কথায় আছে , স্বভাব যায় না মলে! মানুষের স্বভাব কোথায় যাবে যতই দুঃখ থাকুক , মৃত্যু হোক তবুও স্বভাবের বাইরে বেরনো যাবে না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের প্রধান  শিক্ষক শ্রী সুশান্ত দাস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দেশের এই সঙ্কটের সময়ে সরকার লকডাউন-এর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ তা অনেক দিনই হল কিন্তু, এর ফল খুব আশাজনক নয়। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ফলে সেই সকল গরিব মানুষেরা এই মারণ রোগের কবলে নিজেদের জীবন হারাচ্ছে। সরকার মদের দোকান খুলে দিয়েছে , এটার কোন যুক্তি ছিল বলে তিনি মনে করছেন না। আরও বলেন তিনি,দেখা যাচ্ছে রেশন দোকানের থেকেও বেশি ভিড় জমায়েত হচ্ছে মদের দোকান গুলোর সামনে। এই বস্তুটি যে খুব একটা মানুষের দৈনিক জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তা একদমই নয় তবুও কিছু মানুষ অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেন না। তাই এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে আগামী আরও চোদ্দ দিন কঠোরভাবে লকডাউন বলবত করা যায় তাহলে এই পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

বিষয়টা যে হচ্ছে লকডাউন-ও শুধুই কোভিড ১৯-এর প্রকোপকে আটকানোর মোক্ষম অস্ত্র তা বলা যায় না। কারণ, ভারতবর্ষে যথারিতি গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-কে মেনে চলা এবং মাস্ক থেকে শুরু করে সমানে হাত ধোয়া ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটা অনেকবেশি জরুরি। কিন্তু, লকডাউন-এর ৩ যে ছবিটা বারবার উঠে আসছে তা মোটেও আশাপ্রদ নয়। শুরুতেই এক প্রশ্ন করা হয়েছিল- লকডাউনে তাহলে ফায়দা কোথায়? গরিবের পেটে আঘাতে? না সব জেনেও সরকারের আচমকা মুনাফা অর্জনের চিন্তা! না করোনার প্রকোপ ঠেকানো! প্রশ্নের উত্তর আপনাদের বোধের উপর ছেড়ে দেওয়া হল।

বিউ সরকার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকস্তরের ছাত্রী। লেখা তাঁর প্রথম পছন্দের বিষয়। সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন বিউ। করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউন এবং তা ঘিরে যে সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা ছুঁয়ে গিয়েছে এই জেনারেশনের প্রতিনিধি বিউ-এর মন। লকডাউন নিয়ে লাগাতার লিখে চলেছেন তিনি। এবার সামনে নিয়ে এলেন লকডাউন ৩-এ মদের দোকানের সামনে জনজোয়ারের প্রশ্নটা-কে। নিজস্ব পুরো ভাবনা এখানে মেলে ধরেছেন বিউ। এই লেখা নিয়ে কোনও মতামত থাকলে আমাদের ই-মেল করুন এই আইডি-তে an.bangla@asianetnews.in-এ।