সংক্ষিপ্ত
রীতিমতো 'বিরক্ত' হয়ে টুইটার থেকে রাজ্যপালকে ব্লক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করার সময় একথা জানান। পাশাপাশি এই কাজের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি।
রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত নতুন কোনও বিষয় নয়। রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরব হতে দেখা যায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। কখনও সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আবার কখনও টুইটারে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েন না তিনি। তার প্রেক্ষিতে পাল্টা জবাব দিতেও দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাসকদলের অন্য নেতা-মন্ত্রীদেরও। আর এবার রীতিমতো 'বিরক্ত' হয়ে টুইটার থেকে রাজ্যপালকে ব্লক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করার সময় একথা জানান। পাশাপাশি এই কাজের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি।
রাজ্যপাল যে নিত্যদিন টুইট করে রাজ্য সরকারকে একের পর এক বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে, তাতেই রীতিমতো 'বিরক্ত' হয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি বিষয় নিয়ে রাজ্যপালকে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না তিনি। তাই বাধ্য হয়েই রাজ্যপালকে টুইটার থেকে ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি দুঃখিত এটি বলার জন্য, কিন্তু বাধ্য হয়েই করলাম।” এর আগে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের চিত্র দেখেই বোঝা গিয়েছিল, রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক কোন তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন- ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে খুলছে স্কুল-কলেজ, বিধিনিষেধে ছাড় একাধিক ক্ষেত্রে
এদিকে রাজ্যপালকে সরানোর জন্য আজই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে নালিশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সংসদে বাজেট অধিবেশেনর প্রথম দিন সেন্ট্রাল হলে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুদীপও। ভাষণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রথম সারিতে বসা লোকসভার সাংসদদের দিকে এগিয়ে যান রাষ্ট্রপতি। আর প্রথম সারিতে ছিলেন সুদীপও। তখনই রাষ্ট্রপতিকে দেখে আর দেরি করেননি তিনি। সোজা সেখানেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে দেন। তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে সরান। না হলে, সংসদীয় গণতন্ত্রের বিপদ হচ্ছে।" আর ঠিক এই দিনই রাজ্যপালকে টুইটার থেকে ব্লক করে দিলেন মমতা। যদিও রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নালিশ জানানো প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। শুধু জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। এই নিয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ যা বলার বলেছেন। বিধানসভার পুরো এক্তিয়ার অধ্যক্ষের। সুতরাং, স্পিকারই এই বিষয়ে বলবেন।”
আরও পড়ুন- রাজ্যের গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজ্যপালকে সরানো হোক, সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন সুদীপের
আর এই বক্তব্যের পরেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “তবে আমি বাধ্য হয়ে একটা কাজ করেছি। আমি দুঃখিত এর জন্য। এর জন্য আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। উনি প্রতিদিন একটি করে টুইট করেন। কখনও অফিসারদের গালাগালি দিয়ে, কখনও আমাকে গালিগালি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ তুলে, অসাংবিধানিক কথাবার্তা, অনৈতিক কথাবার্তা বলেন। আমাদের নির্দেশ দিতেন ওনার পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। পরামর্শ নয়, ওনার নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বলতেন। তার মানে, আমরা ওনার চাকর-বাকর আর কি!”
মমতা আরও বলেন, “আমরা কি বন্ডেড লেবার? আমরা নির্বাচিত সরকার হয়ে বন্ডেড লেবার! আর একটা কাউন্সিলরের কর্পোরট ইলেক্টেড না হয়েও, শুধুমাত্র নমিনেটেড হয়ে, তিনি হয়ে গিয়েছেন এখন সবার মাথার উপরে সুপার পাহাড়াদার। আমি বাধ্য হয়েছি, আজকে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ওনাকে ব্লক করে দিতে। কারণ, প্রতিদিন আমার বিরক্তি লাগত ওনার টুইটগুলি দেখে। বারবার বিরক্ত করতেন। যে কথাগুলি বলা উচিত নয়, যে কথাগুলি তিনি বলতেন, তা অমানবিক। এর জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমার কিছু করার নেই। আমি অনেকদিন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। চার বার চিঠি লিখেছি। বার বার বলেছি। প্রতিদিন অফিসারদের ডেকে পাঠাচ্ছেন। এটা উনি পারেন না। উনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারেন। সরাসরি যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে আর সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি শুনেছি, আদালত থেকে শুরু করে আয়কর, ইডি থেকে শুরু করে সিবিআই, কাস্টমস থেকে শুরু করে কলকাতা সিপি, ডিসি, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। উনি নিজেকে কী ভাবেন! বাংলার মানুষ মাথা নত করে চলে না।”