সংক্ষিপ্ত

কলকাতার ইনসাফ ব়্যালির সাফল্য স্বাভাবিকভাবে মনে বল জুগিয়েছে ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। তাই মীণাক্ষিরা এবার প্রতিটি জেলায় ব্লকে ব্লকে ইনসাফ ব়্যালি করার আহ্বান রেখেছে। 
 

ধর্মতলায় ইনসাফ মিছিল-কে ঘিরে এক অভূতপূর্ব আশার আলো এখন বামপন্থী সংগঠনে। ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই-এর যৌথ উদ্যোগে ইনসাফ ব়্যালি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি, কংগ্রেস- সকলের চোখ টাটিয়েছে। কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে এত মানুষের এক মিছিল যা কার্যত জনপ্লাবনের চেহারা নিয়েছিল তাতে বিন্দুমাত্র কোনও অশান্তি হল না- তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মীণাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের কড়া বার্তা। 

শিয়ালদহ-হাওড়া এবং পার্ক স্ট্রিট থেকে আসা তিন মিছিলের জন সমুদ্র এতটাই ছিল যে মীণাক্ষি মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্যরা সভাস্থল সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। সভা শেষে একটি বাংলা প্রথম সারির টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মীণাক্ষি বলেন, মানুষের বাধা সবচেয়ে বড় বাধা, মানুষ বাধা দেয়নি, তারা যেখানে সভা করতে চেয়েছে সেখানেই সভা হয়েছে, ছাত্র-যুবরা মেজাজ নিয়ে এসেছিল, তারা বলেছে রাস্তাতেই সভা হবে, তাই হয়েছে।  এই প্রসঙ্গেই মীণাক্ষি সাফ বলেন, ধর্মতলা কারও একক পৈতৃক সম্পত্তি হতে পারে না। সেটা শাসক দল এবং পুলিশ বুঝতে হবে বলেও দ্বর্থ্যহীন ভাষায় বুঝিয়ে দেন। এমনকি এই নিয়ে হাইকোর্টকেও নির্দেশিকা জারি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের শহিদ দিবস পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালের রাজ্যে পালাবদলের পর ধর্মতলার মোড়ে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করার অনুমতি তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক দল পায়নি। তৃণমূল বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলের ধর্মতলায় সভা মানে রানি রাসমণি রোডের একটা লেনে। এর থেকে বড় সভা করতে গেলে বিগ্রেড অথবা অন্য কোনও স্থানে। ইনসাফ মিছিলের সভাকেও স্বাভাবিকভাবে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ধর্মতলা ট্রাম ডিপোর ভিতরে শেষমেশ সভামঞ্চ তৈরির অনুমতি মিলেছিল। কিন্তু ইনসাফ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন লক্ষাধিক ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই কর্মী এবং সিপিএম কর্মী ও সমর্থকরা। সভামঞ্চকে ঘিরে ভিড় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে শেষ মিছিলে আসা একটি ম্যাটাডোরের উপরে প্লাইউডের পাটাতন বিছিয়ে তাকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলের মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। আর সেখান থেকেই উদ্বেলিত জন প্লাবনের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিমরা।  

জনতার এমন ভিড়় দেখে পুলিশও আর আপত্তি করেনি। সরু জায়গায় ভিড় বেশি হলে অনেক দুর্ঘটনারও আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। ওয়াই চ্যানেলের মুখে ম্যাটাডোরকে মঞ্চ বানানোয় ভিড় ছড়িয়ে যাওয়ার অনেকটা জায়গা পেয়ে যায়। পুলিশও ধর্মতলামুখী কিছু রাস্তা ব্লক করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মীণাক্ষির কথায়, পুলিশ শেষ কথা বলবে না, পুলিশ আইনকে রক্ষা করবে, সমাজকে রক্ষা করবে, পুলিশ যখন আইনকে নিজের হাতে নিয়ে রক্ষকের জায়গায় ভক্ষক হয়ে প্রশাসনকে অনৈতিকভাবে ওই জায়গায় ব্যবহার করে তখন মানুষ নিজের রাস্তা নিজেই বের করে নেয়। মানুষ তো পাথর কেটে রাস্তা বের করেছে, এ তো শুধু পুলিশের ঘেরাটোপ। 

কলকাতার ইনসাফ ব়্যালির সাফল্য স্বাভাবিকভাবে মনে বল জুগিয়েছে ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। তাই মীণাক্ষিরা এবার প্রতিটি জেলায় ব্লকে ব্লকে ইনসাফ ব়্যালি করার আহ্বান রেখেছে। এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের কাজের দাবিতে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বলেও মন্তব্য করেন মীণাক্ষি। গত এগারো বছর ধরে সমস্ত স্থানে বামপন্থীদের হয় মিথ্যা গাঁজা কেসে জেলে পোরা হয়েছে না হলে খুন হতে হয়েছে। এখনও সেই ট্রেন্ড চলছে বলেও জানান মীণাক্ষি। কিন্তু এত কিছুর পরও কর্মী ও সমর্থকরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। যার প্রমাণ এই দিনকার ইনসাফ ব়্যালির ভিড়। 

আর ১০ দিন বাদেই পূজো। দিকে দিকে পুজো বাজার এখন জমজমাট। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে ধর্মতলাকে কেন্দ্র করে মধ্য কলকাতার একটা বিশাল অঞ্চল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে মানুষের। সপ্তাহের শুরুতেই এমন এক নজিরবিহীন মিছিলের ভিড় ট্র্যাফিকের অবস্থাকে দফারফা করে দিয়েছিল। মীণাক্ষিদের মতে, পুজো বাঙালির সেরা উৎসব। সকলেই আনন্দ উৎসবে মাতবেন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিবার রয়েছে যারা এই আনন্দকে উদযাপনের  মানসিকতাতেই নেই। সেই পরিবারগুলো হয়তো পুজোর দিনগুলিতে এক নিকষ কালো অন্ধকারে স্বজন হারানোর বেদনায় রিক্ত হয়ে যাবে। এমন সব পরিবারের জন্য এই ইনসাফ ব়্যালি বলে মন্তব্য করেন মীণাক্ষি। তিনি আরও জানান যে, সোমবারই সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁরা কলকাতার মানুষের কাছে ৩টি ঘণ্টা চেয়ে নিয়েছিলেন এই কর্মসূচি-কে সফল করতে। রাজ্যের বেটার ফিউচারের জন্য এটা আবশ্যিক ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

কয়েক মাস আগেই আনিস খানের হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করে গ্রেফতার হয়েছিলেন মীণাক্ষি। সেই সময় পাক্কা ১১ দিন জেলে ছিলেন মীণাক্ষি এবং তাঁর বেশিকিছু সঙ্গী। এদিনও সভা নিয়ে পুলিশ কড়া অবস্থান নিতে পারত, এমনকি ধরপাকড়ও করতে পারত। মীণাক্ষির দাবি, পুলিশ আইনগতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না। ১১ বছর ধরে এই অন্যায় করে আসছে। সেই অন্যায়কে ধরিয়ে দেওয়াটাও ছিলেন এদিনের লক্ষ। 

এদিকে, ইনসাফ ব়্যালি নিয়ে বিজেপি তোপ দেগেছে। ইনসাফ ব়্যালি-র সাফল্য সম্ভব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য, এমন অভিযোগ করেছে বিজেপি। কেন এদিন কাঁদানে গ্যাস, লাঠি-র ব্যবস্থা থাকল না, তা নিয়েও তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যে বিজেপি-র সহকারি পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য-র। যদিও, বিজেপি-র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, কোনও অ্যাকশন হয়নি, তাই পুলিশও রিয়্যাক্ট করেনি। যদিও, কুণালের মতে বামেদের এমন মিছিল হয়েও তো লাভ নেই, ভোটবাক্সে তো শূন্য-ই জোটে। মীণাক্ষি অবশ্য কুণালের মন্তব্যে নজর দিতে নারাজ। তিনি জানিয়েছেন, ২১৮টা আসন পেয়েও বান্ধবীর ঘর থেকে ইডি কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। এমন আসন সংখ্যা নিয়ে কী লাভ। রাজ্যটাকে তো দুর্নীতির কারখানায় পরিণত করেছে তৃণমূল। এমন মন্তব্য করেন মীণাক্ষি। 
আরও পড়ুন--  
সিপিএমের নয়া হেল্পলাইন নজরে পঞ্চায়েত, ব্যাপক সাড়া পাওয়ার দাবি দলের   
CPIM Rally : বালুরঘাটে CPIM-এর 'বিশাল' বিক্ষোভ সমাবেশ, 'চোর ধরার জন্য CBI, ED আসছে' বললেন মহঃ সেলিম 
'সমস্ত দুর্নীতির মূল নায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়' বিস্ফোরক মন্তব্য বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য-র