সংক্ষিপ্ত

কলকাতা শহরেই রয়েছে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিকড়
এই শহরে রয়েছে তাঁর মা ও ভাই 
ছেলের নোবেল জয়ে আবেগ তাড়িত নির্মলা
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে  শেয়ার করলেন নানা স্মৃতি

নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখের সামনে সারাক্ষণ ফ্ল্যাশ বাল্বের ঝলকানি। আচমকাই সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়ার এক অনুভূতি তাঁকে যেন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্ন তাঁকে বারবার যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির সরণিতে। সকলেরই একটাই জিজ্ঞাস্য, অভিজিতের সঙ্গে শেষ কখন কথা হয়েছে? আপনি কি জানতেন যা আপনার ছেলে নোবেল পাবে? আচমকাই মিডিয়া ফোকাসের এমন আলো, আর সাংবাদিকদের বেষ্টনি কেমন যেন অপ্রস্তুত করে তুলেছিল নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছেলের কৃতিত্বে কোন মায়ের না গর্ব হয়? আর সেই কৃতিত্ব যদি হয় নোবেল প্রাপ্তির মত বিষয় তাহলে তো আর কথাই নেই। তাই ছেলে অভিজিতের নোবেল প্রাপ্তিতে নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার ঘোরফেরা করছিলেন স্মৃতির সরণি থেকে মাতৃত্বের আবেগে।

বিয়ে করেছিলেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ এবং অধ্যাপককে। তাই মারাঠি হলেও মুম্বইয়ে আর বাস করা হয়নি নির্মলার। স্বামীর হাত ধরে চলে এসেছিলেন কবলকাতায়। আদরের বড় ছেলের কথা বলতেই বলে উঠলেন 'ওর মধ্যে তো রয়েছে ওর বাবার প্রভাব'। প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক  ছিলেন নীর্মলার স্বামী। অর সেই শিক্ষক স্বামীর ছাত্র ছিলেন অভিজিৎ। আলাপ চারিতায় জানালেন ১৯৮৩ সাল থেকেই পাকাপাকি ভাবে বিদেশের বাসিন্দা অভিজিৎ। বছরে অন্তত ৩ থেকে ৪ বার দেখা হয়। কথা হয় অনেক কিছু নিয়েই। তবে এই কথার বেশিরভাগটাই জুড়ে থাকে অভিজিতের কাজকর্মের বিষয়। কারণ, নির্মলার মতে , বাবা কেমন আছ, কী খাচ্ছ, এমন প্রশ্ন পছন্দ করেন না অভিজিৎ। তাই মা ছেলের কথা জুড়ে অধিকাংশ সময় থাকে সমাজের কাহিনী, সাধারণ মানুষের অবস্থা এবং তাঁদের অর্থবৈষম্যের কথা। 

ছেলের নোবেল প্রাপ্তির খবর পেলেন কী করে? নির্মলার দিকে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। উত্তরে জানালেন, সোমবার দুপুরে আচমকাই ছোটছেলে হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে টিভি দেখতে, এবং সেই সঙ্গে জানায় দাদার নোবেল প্রাপ্তির খবর। কিছুটা হলেও নাকি বিস্মিত হয়েছিলেন নির্মলা। কারণ, রবিবার রাতেও আমেরিকা থেকে ছেলে অভিজিতের ফোন পেয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল, কিন্তু ঘুণাক্ষরেও নাকি তিনি জানাননি এমন একটা সম্ভাবনার কথা। নিজের মনে বারবার বিড়বিড় করতে থাকেন নির্মলা, কেন জানাল না ছেলে, জিজ্ঞেস করতে হবে।

সাংবাদিকদের আব্দারে হাতে থাকা মোবাইল থেকে ফোনটা লাগিয়ে ফেললেন অভিজিতের নম্বরে। বঙ্গের বুকে সন্ধে ৬টা মানে আমেরিকায় তখন দিনের আলো ফুটছে। নির্মলা অনেকবার চেষ্টা করলেন ছেলের সঙ্গে কথা বলার, কিন্তু বারবার নেটওয়ার্ক সমস্যা বিভ্রাট ঘটাল মা ও নোবেলজয়ী ছেলের কথোপকথনে। বাড়ির এক সদস্য ফের একবার ফোন লাগালেন অভিজিতের নম্বরে। এবার ছেলের গলা খানিকটা শুনতে পেয়ে বলে গেলেন, 'তুমি তো জানালে না কিছু, এতবড় একটা সম্মান, বাড়িতে লোকজনের ছড়াছড়ি, সবাই এসে তোমার কথা জিজ্ঞেস করছে, কী বলছ? শুনতে পারছ না', ফোনটা রেখে নির্মলা জানালেন অভিজিতের সঙ্গে কথা হয়েছে, তবে কিছুই শুনতে পারছে না, পরে ফোন করবে বলে জানিয়েছে। মারাঠি থেকে বাঙালি গৃহবধূ হয়েছিলেন নির্মলা কিন্তু তা বলে সন্তানদের মধ্যে কোনও ভাবেই বাঙালিত্বকে ঘুচতে দেননি তিনি। সগর্বে জানালেন, বাঙালির কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অতি পছন্দের। তাই তিনি আজও কলকাতায় রয়ে গিয়েছেন। এমনকি সন্তানদের মধ্যে পুরোপুরি বাঙালিত্বকে লালল পালন করছেন। অভিজিতের সঙ্গে দেখা হলে আজও  তিনি নানা বাঙালি পদ রান্না করে খাওয়ান। বলতে গেলে নির্মলার আজ বড় আনন্দের দিন। কারণ এক মায়ের এক সন্তান আজ নোবেলজয়ী।