সংক্ষিপ্ত

গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলেও পুজো কমিটিগুলো ছাড় পাবে বলে জানান তিনি। এই ঘোষণার পর থেকেই সরব হয় বিরোধী দলগুলি। এবার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ সাধারণ মানুষ। একই দিনে এই মর্মে দুটি জনস্বার্থ মামালা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে।

মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় পরপর দুটি জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে। বুধবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজেশ ভরদ্বাজের এজলাসে এই মামলা গৃহীত হয়। আবেদনকারী জনৈক সুবীরকুমার ঘোষের আর্জি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দিক সরকার। তাঁর প্রেক্ষীতে বেশ কিছু যুক্তিও পেশ করেছেন তিনি। 
গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলেও পুজো কমিটিগুলো ছাড় পাবে বলে জানান তিনি। এই ঘোষণার পর থেকেই সরব হয় বিরোধী দলগুলি। এবার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ সাধারণ মানুষ। একই দিনে এই মর্মে দুটি জনস্বার্থ মামালা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। 
মামলাকারীর দাবি যেখানে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও 'টাকা নেই' বলে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা দিতে পারছে না রাজ্য, সেখানে দুর্গাপুজো বাবদ এই বিশাল অঙ্কের টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে কেন? পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে জল সংকট প্রবল, হাসপাতালে বেডের অভাব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের হাতে থাকা অর্থ কোনও জনমুখি কাজে ব্যবহার না হয়ে কেন ক্লাবগুলিকে অনুদানে দেওয়া হচ্ছে? পাশাপাশি বিদ্যুত বিলে ছাড়ের সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করা হয়েছে। তাই জনস্বার্থ রক্ষার্থে আদালত যেন এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় সেই আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারীরা। 
প্রথম মামলার শুনানি হবে আগামী শুক্রবার এবং দ্বিতীয় মামলার শুনানি আগামী শুক্র অথবা সোমবারে হবে। 
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় সরব হয়েছেন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,‘‘আসলে ক্লাবগুলিকে কিনে ‘চোর-চোর’ আওয়াজ বন্ধ করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে কাজ হবে কি? বরং উনি যদি ওই টাকাটা রাজ্যের উন্নয়নে খরচ করতেন, তা হলে বাংলার লাভের লাভ হত।" 
পাশাপাশি বাংলার সর্বজনীন দুর্গাপুজোকে 'সরকার পোষিত' পুজোয় পরিনত করতে চাইছে রাজ্য সরকার বলেও দাবি করলেন তিনি। 
মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মোট ৪৩টি ক্লাবকে ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে, অর্থাৎ মোট খরচ ২৫৮ কোটি টাকা। এর পরেও থাকছে শোভাযাত্রা পুজার কার্নিভাল ইত্যাদি। বিরোধীদের দাবি শুধু যদি ২৫৮ কোটি টাকারই হিসাব করা যায় তাহলেই অনেক কিছু করা যেত। 

 আরও পড়ুনদুর্গাপুজোয় কত অনুদান পাবে পুজো কমিটিগুলি? নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর 


পুজোর অনুদান বাবদ অর্থ কোন খাতে কী ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব ছিল তার একটি তালিকাও তুলে ধরেন শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন,‘‘উচ্চমানের ল্যাবরেটরি বানানোর জন্য রাজ্যের ২৫৮টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলকে এক কোটি টাকা করে দেওয়া যেত। মাত্র ১০ লাখ টাকা করে দিলে ২,৫৮০টি প্রাথমিক স্কুলের উন্নয়ন সম্ভব ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, রাজ্য সরকার ২ টাকা কেজি দরে ১ কোটি ২৯ লাখ কেজি চাল কিনতে পারত।’’
এছাড়াও, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য এই টাকায় প্রায় ৫২ কোটি মিড ডে মিল হত। উচ্চ প্রাথমিকে (৭.৪৫ টাকা প্রতি পড়ুয়া) ৩৪ কোটি ৬৩ লাখের বেশি মিড ডে মিল বাবদে খরচ করা যেত বলে দাবি শমীকের। তা বাদেও রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১,৬০০ শয্যা বাড়ানো যেত, গ্রামাঞ্চলে ৩৬,৮৬০টির মতো নলকূপ বানানো যেত। যার ফলে রাজ্যে পানীয় জলের সমস্যা বেশ অনেকটাই মিটত। 

আরও পড়ুনপুজো কমিটির বৈঠকে বড় ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, নাম না করে নিশানা বিজেপিকে