সংক্ষিপ্ত
চিরাচরিত সেই লড়াই। বাংলা মিডিয়াম বনাম ইংরাজি মিডিয়াম। আর এর জালেই ফের একবার তীব্র হল বাকযুদ্ধ। ২ দিন ধরে উত্তাল নেটদুনিয়া। সাফাই দিতে রেডিও মির্চির প্রাক্তন আরজে-র ফেসবুক লাইভ। অনেকটা কাটে ঘায়ে নুনের ছেঁটার মতোই হল পরিস্থিতি। আরও তীব্র কটাক্ষ এবং অপমানের শিকার হতে হল আরজে অয়ন্তিকাকে।
বাংলা মিডিয়ামের কী ভবিষ্যত অন্ধকার? গত দুই দশকে এই নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। এরমধ্যে রাজ্য জুড়ে ছত্রাকের মতো এখানে ওখানে গজিয়ে উঠেছে ইংরাজি মাধ্যমের স্কুল। যার ফলে বাঙালি মুখে বাংলা ভাষা বাঁচাও-এর কথা বললেও আখেরে ইংরাজি মাধ্যমেরই শরণাপন্ন হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলা বাঁচাও-এর আন্দোলনও তীব্র হয়েছে। জন্ম হয়েছে একাধিক গণ সংগঠনের। যারা সওয়াল করছে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগের। এহেন এক পরিস্থিতিতে আগুনে যেন ঘি ঢালার মতো করে এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেছেন রেডিও মির্চির প্রাক্তন আরজে অয়ন্তিকা। এক টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের অনুষ্ঠানে আরজে অয়ন্তিকা বলে বসেন, বাংলা মিডিয়ামে পড়ে কোনও ভালো চাকরি পাওয়া যায় না। এমনকী কর্পোরেটেও চাকরি পান না বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা ছেলে-মেয়েরা। আর এর জন্য এই সব ছেলে-মেয়েরা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনা করান। তিনি নিজে ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনা করে আজ এক কর্পোরেট সংস্থায় ভালো কাজে নিয়োজিত গোছরেরও মন্তব্য করেন।
আরজে অয়ন্তিকার এই মন্তব্য যেন ছিল আগুন ঘৃতাহুতি। দাবানলের মতো টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের অনুষ্ঠানের আরজে অয়ন্তিকার করা মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং-এর মিনিট খানেক অংশ নেটদুনিয়ার ছড়িয়ে যায়। যার জেরে নেটদুনিয়ায় এখন তীব্র কটাক্ষের শিকার আরজে অয়ন্তিকা। কী বলেছিলেন অয়ন্তিকার তাঁর ভাইরাল হওয়া সেই মন্তব্যে, পুঙ্খনাপুঙ্খ তা এখানে তুলে ধরা হল- 'ভালো কি খারাপ সেই জায়গায় আসি। আজ কে যদি বেঙ্গলি মিডিয়ামে কেউ নিজের সন্তানকে পড়ায় তাহলে সে কি কোনও ইন্টারভিউ ক্র্যাক করতে পারবে? সবার কি মনে হয়- এখানে সবাই কী ভাবছেন ? বাংলা মিডিয়ামে পড়া কোনও ছাত্র গিয়ে কোনও কর্পোরেট হাউসে গিয়ে ভালোভাবে চাকরি নিয়ে বাড়ি কি যেতে পারবে? আমার মনে হয় পারবে না।'
অয়ন্তিকার এই মন্তব্যে তীব্র রোষ ঝড়ে পড়ে নেটদুনিয়ায়। অনেকেই নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখতে থাকেন যে তাঁদের পড়াশোনা বাংলা মিডিয়ামে, এরপর স্নাতকস্তরের পড়াশোনা এবং স্নাতকোত্তর-এর পড়াশোনাতে তাঁরা ইংরাজিতে উত্তরপত্র লিখেছেন। এমনকী, ইংরাজিতে বই লিখে সমাদর পেয়েছেন। এমনকী ইংলিশ স্পোকেন ক্লাসও করাচ্ছেন এখন। তাহলে বাংলা মিডিয়ামের ছেলেরা কোথায় পিছিয়ে পড়ছে? এমন প্রশ্ন তুলে অনেকে অয়ন্তিকাকে ট্যাগ করে পোস্ট করে।
পরিস্থিতি আরও অয়ন্তিকার বিরুদ্ধে চলে যায়, যখন অয়ন্তিকা ৪ এপ্রিল বিকেলে ফেসবুক লাইভে তাঁর মন্তব্যে সাফাই দেন। এতে নেটদুনিয়ায় আরও ক্ষোভ ছড়ায়। মানুষ জন সমানে অয়ন্তিকার কমেন্ট বক্সে গিয়ে একের পর এক মন্তব্য করতে থাকেন। ফেসবুক লাইভে অয়ন্তিকা ফের জানান, বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছেলে-মেয়েদের অধিকাংশই কর্মস্থলে ইংরাজি ভালো করে বলতে না পেরে মানসিক হতাশায় ভোগেন। যদিও, এদের ইংরাজি লেখনি যে কোনও ইংরাজি মিডিয়ামে পড়া ছেলে-মেয়েদের মতো বা তার থেকেও বেশি ভালো। অয়ন্তিকা তাঁর এই ফেসবুক লাইভে আরও মন্তব্য করেন যে, কর্মক্ষেত্রে যেহেতু ইংরাজি বা অন্য ভাষার চল রয়েছে, সেখানে বাংলা প্রায় ব্রাত্য। সুতরাং এমন ভাষায় পড়াশোনা শিখে কোনও কাজ নেই। বরং ইংরাজি মাধ্যমের শিক্ষা ছেলে-মেয়েদের মনে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে বলেই তিনি মনে করেন। অয়ন্তিকা আরও জানিয়েছেন যে, তাঁর পিতা-মাতাও বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু, ইংরাজি মাধ্যমের শিক্ষায় শিক্ষিত না হতে পারলে সন্তানের কর্মস্থলে উজ্জ্বল উপস্থিতি হবে না সেটা বুঝতে পেরে নাকি তাঁরা অয়ন্তিকাকে অনেক কষ্ট করেই ইংরাজি মাধ্যমের স্কুল ভর্তি করেছিলেন। অয়ন্তিকাও নিজের সন্তানকে ইংরাজি মাধ্যমে ভর্তি করেছেন। সে কথাও তিনি ফেসবুকে ফলাও করে বলেছেন।
অয়ন্তিকার এই ইংরাজি মাধ্যমের পড়াশোনা সওয়াল নিয়ে মঙ্গলবার দিনভরই উত্তাপ চড়তে থাকে। বাংলা পক্ষের কৌশিক মাইতি অয়ন্তিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। কৌশিক কমেন্ট বক্সে দাবি করেছেন, এখনও ৯০ শতাংশ বাঙালি ছেলে-মেয়ে বাংলা মাধ্যমেই প্রাথমিক শিক্ষা এবং উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করছেন। অয়ন্তিকা বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ের বিরোধীতাও করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কৌশিক। অয়ন্তিকার মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। বাংলা মাধ্যম বনাম ইংরাজি মাধ্যমের লড়াইয়ে যে বিতর্কটা সারাক্ষণ লেগে রয়েছে তাতে আরজে অয়ন্তিকার মন্তব্য নয়া ইন্ধন যোগ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন|সাইকেল চুরি হওয়ায় বন্ধ হতে বসেছিল পড়াশোনা, নতুন সাইকেল নিয়ে পড়ুয়ার বাড়ি হাজির থানার বড়বাবু
আরও পড়ুন| স্কুল দেওয়া হবে গীতার পাঠ, দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যে কী বলছে বিরোধীরা
আরও পড়ুন| নয়া শিক্ষানীতির বাস্তবায়নে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করবে এবারের বাজেট, দাবি মোদীর