সংক্ষিপ্ত

অযোধ্যায় রাম মন্দির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাম ও শরদ কোঠারি।

কলকাতার এই দুই 'কর সেবক'-এর বোন পূর্ণিমা কোঠারি রাম মন্দির ট্রাস্টের সদস্য হতে চান।

এই নিয়ে তিনি বিজেপি ও আরএসএস নেতাদের কাছে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।

রামমন্দির ট্রাস্টের কয়েকজন সদস্য ইতিমধ্যেই বাছাই করা হয়েছে।

 

১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর অযোধ্যায় রাম মন্দির আন্দোলনে সামিল হয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কলকাতার দুই 'কর সেবক' রাম ও শরদ কোঠারি। এবার তাঁদের বোন পূর্ণিমা কোঠারি, 'শ্রী রাম জন্মভূমী তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট' অর্থাৎ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে এই ট্রাস্ট-ই।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে এই ট্রাস্ট গঠনের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পূর্ণিমা কোঠারি জানিয়েছেন, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য তাঁরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করেছেন। ট্রাস্ট গঠন করার কথা ঘোষণার পরই অনেকেই তাঁকে বলেছেন সেই ট্রাস্টে তাঁকে রাখা উচিত। এই বিষয়ে বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গিয় এবং রাম মাধব-এর কাছে তিনি তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ-ও করেছেন। গত মাসে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ 'ভাইয়াজি' জোশিকে-ও এই বিষয়ে একটি চিঠি লিখেছেন পূর্ণিমা কোঠারি।

গত ২৩ জানুয়ারি পূর্ণিমা গিয়েছিলেন অযোধ্যাতে। মোহান্ত নৃত্যগোপাল দাস-সহ অযোধ্যার আরও অনেক সাধুই তাঁকে আশীর্বাদ করে জানিয়েছেন তাঁর এই ট্রাস্টের সদস্য হওয়া উচিত। কারণ রামমন্দিরের জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে তারা মনে করেন। এছাড়া পূর্ণিমা আরও আশাবাদী, কারণ একজন অন্তত মহিলাকে ট্রাস্টে রাখা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

রাম ও শরদ কোঠারি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য ছিলেন। যথাক্রমে ২২ ও ২০ বছর বয়সী কলকাতার এই দুই যুবক ততদিনে আরএসএস-এর প্রশিক্ষণ কোর্সের তিন বছরের মধ্যে প্রথম দুই বছর শেষ করতে পেরেছিলেন। সেই সময়ই পালে হাওয়া পেয়েছিল রামমন্দির আন্দোলন। ১৯৯০ সালের ২২ অক্টোবর এই দুই ভাই, বোন পূর্ণিমা ও তাঁদের এক বন্ধু রাজেশ আগরওয়াল-কে সঙ্গে করে কলকাতার খিলাত ঘোষ লেনের বাড়ি থেকে ট্রেনে অযোধ্যা রওনা দিয়েছিলেন।

তবে তখনকার উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিধি নিষেধে তাদের বারাণসীতেই নামতে হয়েছিল। সেখানথেকে অযোধ্যা যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি নেন তাঁরা। কিন্তু, তাও এক পুলিশি পিকেটে আটকে দেওয়া হয়। তারপর ২০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ৩০ শে অক্টোবর ভোর চারটে নাগাদ তাঁরা অযোধ্যা পৌঁছেছিলেন। তার তিন দিন পর, কার্তিক পূর্ণিমা উপলক্ষে বিতর্কিত কাঠামো থেকে দূরে ঠিল ছোঁড়া দূরত্বে জড়ো হয় করসেবকরা। তারপর ভজন গাইতে গাইতে বিতর্কিত জমির দিকে রওনা দেয় করসেবকের দল। পুলিশ তাদের থামাতে গুলি ছোঁড়ে। হনুমান গড়ির কাছে এক সরু গলিতে পরে শরদ ও রাম কোঠারীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল।

পূর্ণিমা জানিয়েছেন তাঁর দাদারা নিরস্ত্র ছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও, মুলায়ম সিং-এর তাদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এখনও তাঁর মনে তাজা বলে জানিয়েছেন তিনি। পূর্ণিমা এবং রাজেশ আগরওয়াল এখন রাম-শারদ কোঠারি স্মৃতি সমিতি নামে একটি সংস্থা চালান। প্রতি বছর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজের জন্য একজন করে ব্যক্তিকে পুরষ্কার দেয় তারা। সেইসঙ্গে পূর্ণিমা তাঁদের পারিবারিক লোহার ব্যবসা দেখভাল-ও করেন।

'শ্রী রাম জন্মভূমী তীর্থ ক্ষেত্র' ট্রাস্ট গঠিত হবে মোট ১৫ জন সদস্য নিয়ে। ট্রাস্টের প্রধান রামমন্দির মামলায় হিন্দু পক্ষের হয়ে লড়া ৯২ বছর বয়সী আইনজীবী কে পরাশরণ। এছাড়া ট্রাস্টে থাকছেন প্রয়াগরাজ-এর বিশিষ্ট সাধু জগৎগুরু শঙ্করাচার্য জ্যোতিষ পিঠাধেশ্বর স্বামী বাসুদেবানন্দ, উদুপি-র বিশিষ্ট সাধু জগৎগুরু মাধবাচার্য স্বামী বিশ্ব প্রসন্নতীর্থ, হরিদ্বারের সাধক যুগপুরুষ পরমানন্দ, পুনের সাধু স্বামী গোবিন্দদেব গিরি, অযোধ্যা রাজ পরিবারের বংশধর বিমলেন্দু মোহন প্রতাপ মিশ্র ও ডাক্তার অনিল মিশ্র, ১৯৮৯ সালে রামমন্দিরের জন্য প্রথম ইঁট গাঁথা পাটনার দলিত কামেশ্বর চৌপল, নির্মোহী আখড়ার মোহান্ত ধরম দাস। এছাড়া থাকবেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং ট্রাস্টের পাঁচ মনোনীত সদস্য।