সংক্ষিপ্ত
নিউটাউনের (New Town) ইকো পার্কের (Eco Park) কাছে, যাত্রাগাছির (Jatragachi) এলাকার নিকাশী খালে দেখা গেল বিষাক্ত ফেনা। এর আগে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল নয়াদিল্লির (New Delhi) যমুনা নদে (River Yamuna) এবং ব্যাঙ্গালোরের (Bangalore) হ্রদে।
খাল জুড়ে সাদা সাদা ফেনা, যেন কেউ ডিটারজেন্ট পাউডার ঢেলে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে এমনই অদ্ভূত দৃশ্য দেখা গেল, নিউটাউনের (New Town) ইকো পার্কের (Eco Park) কাছে, যাত্রাগাছির (Jatragachi) সংলগ্ন এলাকার এক নিকাশী খালে। তবে, ভারতে এই দৃশ্য নতুন নয়। এর আগে ব্যাঙ্গালোরের (Bangalore) হ্রদে বা নয়াদিল্লি (New Delhi) সংলগ্ন যমুনা নদে (River Yamuna), এর আগেই এই ধরণের দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এই ফেনা দেখতে যতই শ্বেতশুভ্র হোক না কেন, এগুলি কিন্তু অত্যন্ত বিষাক্ত (Toxic Foam), জলদূষণের (Water Pollution) কারণে এই ফেনা তৈরি হয়। এতদিন যে জলদূষণের ছবি দেখা যেত দিল্লি বা ব্যাঙ্গালোরে, এখন তাই দেখা গেল নিউ টাউন এলাকাতেও।
একাংশের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা (Environmental Scientists) মনে করছেন, নিউটাউনের খালে এই রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কারণ, এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ (Urbanisation) এবং অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক ক্ষুদ্র উৎপাদন শিল্প কারখানা (Unplanned Production Units) গড়ে ওঠা। তাঁরা সতর্ক করে বলছেন, এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কিন্তু, ভবিষ্যতে বড় বিপদে পড়তে হতে পারে। কারণ তাঁদের অনুমান, এই ফোম বা ফেনা তৈরি হয়েছে ফসফেট (Phosphate) ও অ্যামোনিয়া (Amonia) দূষণের কারণে। আর এই দুই বিষাক্ত যৌগের দূষণই অত্যন্ত ক্ষতিকর পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
নিউটানের যাত্রাগাছি এলাকার ওই খালে, বিভিন্ন ড্রেনের মাধ্যমে পয়ঃপ্রণালীর (Sewerage) জল এবং বহু নিকটবর্তী কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য (Untreated Industrial Waste) জলের মিশ্রণ এসে পড়ে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনুমান, ওই বর্জ্য মিশ্রিত জলের সঙ্গে, প্রচুর পরিমাণে ফসফেট ও অ্য়ামোনিয়া মিশছে খালের জলে। সেই সঙ্গে পচনশীল গাছপালা এবং ফিলামেন্টাস ব্যাকটেরিয়ার (Filamentous Bacteria) উপস্থিতিতে ওই বুদবুদ (Bubble) তৈরি হচ্ছে। এই বুদবুদগুলি জলের চেয়ে হালকা বলে একটি পরতের মতো জলের উপরে ভাসছে এবং ধীরে ধীরে জমে ওই ফোম বা ফেনায় পরিণত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা জানয়েছেন, স্বল্পমেয়াদে ওই বিশাক্ত ফেনা গায়ে লাগলে ত্বকে জ্বালাভাব এবং অ্যালার্জি হতে পারে। যদি ওই রাসায়নিকগুলি পেটে চলে যায়, তাহলে তীব্র পেটের সমস্যা, এমনকী টাইফয়েডের মতো রোগও হতে পারে। শিল্পজাত বর্জ্যে ভারী ধাতু উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলির সংস্পর্শে আসলে স্নায়বিক সমস্যা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। অ্যামোনিয়া রক্তে উচ্চ ঘনত্বে পৌঁছলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে, যা থেকে কোমা বা মৃত্যু হতে পারে। অ্য়ামোনিয়া এবং ফসফেট দুই যৌগই জলে অত্যন্ত দ্রবণীয় বলে সহজে দূষিত জল থেকে এগুলিতে আলাদাও করা যায় না। উচ্চ ঘনত্বে উপস্থিত হলে, তা শুধু ওই জলকেই নয় সংলগ্ন এলাকার বায়ুকেও দূষিত করে। যা, ফুসফুস ও শ্বাসনালীর ক্ষতি করে। সেইসঙ্গে ওই এলাকার মাটির অম্লকরণের কারণও হয়। যা বড় প্রভাব ফেলে এলাকার বাস্তুতন্ত্রের উপর।
এর আগে দিল্লিতে ছট পূজার ঠিক আগে যমুনা নদে এরকম ফেনা দেখা গিয়েছিল। ওই বিষাক্ত ফেনাময় জলেই , স্নান ও প্রার্থনা সেরেছিলেন ভক্তরা। সেখানকার জল পরীক্ষা করে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড উচ্চ মাত্রায় অ্যামোনিয়া এবং ফসফেট পেয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই দুই যৌগ থেকেই, তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং ত্বকের সমস্যা হতে পারে। তার আগে ২০১৭ সালে, ব্যাঙ্গালোরের দক্ষিণে বেলান্দুর (Bellandur Lake) এবং ভার্থুর হ্রদেও (Varthur Lake) একই রকমের ফেনা দেখা গিয়েছিল। হাওয়ার সঙ্গে সেই ফেনা উড়ে রাস্তায় চলে এসেছিল। ওই একই বছরে, বেঙ্গালুরুর আরেকটি হ্রদ আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওই ক্ষেত্রে জলের সঙ্গে কোনওভাবে পেট্রোলিয়াম মিশে গিয়েছিল।