সংক্ষিপ্ত

রামসারের পদ্ধতি অনুযায়ী জলাভূমি সংরক্ষণ করতে গেলে সহায়ক হতে পারে Ramsar Wetland of International Importance এর শিরোপা – কোন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জলাভূমিকে সংরক্ষণ করতে ইচ্ছুক কোন সরকার Ramsar Convention এর কাছে আবেদন জানিয়ে যদি প্রমাণ করতে পারে যে এই জলাভূমি Ramsar Wetland of International Importance এর দাবি রাখে এবং Ramsar বিজ্ঞানীরা এই দাবি যথার্থ বলে সম্মত হন তাহলে জলাভূমিটি Ramsar স্বীকৃতি পায়। 

ধ্রুবা দাশগুপ্ত, পরিবেশবিদ ও পরিবেশ গবেষক--  প্রতি বছর বিশ্ব জলাভূমি দিবস আসে ২ ফেব্রুয়ারি। এই দিনটির তাৎপর্য হল যে বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের দশ বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন বাস্তবায়িত হয়েছিল। মূলত পাখিদের জনসংখ্যাকে ধরে রাখার জন্যই এই জলাভূমি সংরক্ষণ করার আইন প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। ইরানের রামসার শহরে এই কর্মকান্ডের শুরু, তার থেকে আইনটির নাম Ramsar Convention. এই আইনকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য প্রতি বছর একটি করে থিম্ বেছে নেওয়া হয়। এই বছরের, অর্থাৎ ২০২২ সালের থিম্ হচ্ছে Wetlands Action for People and Nature – মানুষের সঙ্গে প্রকৃতিকে জলাভূমির মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা। সারা বিশ্বে জলাভূমি প্রেমিকরা এই থিম্ নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় রেখে পালন করে।

রামসারের পদ্ধতি অনুযায়ী জলাভূমি সংরক্ষণ করতে গেলে সহায়ক হতে পারে Ramsar Wetland of International Importance এর শিরোপা – কোন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জলাভূমিকে সংরক্ষণ করতে
ইচ্ছুক কোন সরকার Ramsar Convention এর কাছে আবেদন জানিয়ে যদি প্রমাণ করতে পারে যে এই জলাভূমি Ramsar Wetland of International Importance এর দাবি রাখে এবং Ramsar
বিজ্ঞানীরা এই দাবি যথার্থ বলে সম্মত হন তাহলে জলাভূমিটি Ramsar স্বীকৃতি পায়। আমাদের কলকাতা শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত পূর্ব কলকাতার জলাভূমি Ramsar স্বীকৃতি পায় ২০০২ সালে, শহরের ময়লা জলের থেকে পোষক বের করে তার সাহায্যে খাদ্য উৎপাদন করে সেই জল পরিশোধন করে নদী দূষণ বাঁচানোর জন্য। মজার কথা হল যে এই জলাভূমি বিশ্ববিখ্যাত হলেও আমাদের খোদ শহর কলকাতাতেই অল্প পরিচিত। 

আজ এই বিশেষ দিনে Wetlands Action for People and Nature এই ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে একটু দেখা যাক। পূর্ব কলকাতার জলাভূমির নামকরণ করেছিলেন পরিবেশবিদ্‌ এবং এই জলাভূমির আবিষ্কর্তা প্রয়াত ড. ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ (১৯৪৭-২০১৮) - আশির দশকের গোড়ায় - আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে। উনি আবিষ্কার করেছিলেন যে এই জলাভূমি শহরের ময়লা জল পরিশোধনের কাজ করে, এবং একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনও করে কলকাতা শহর এবং জলাভূমি সমাজের জন্য। এই জলাভূমির মানচিত্রও তৈরী করেছিলেন তিনি। ওঁর ২০ বধরের অক্লান্ত প্রচেষ্টাতেই এই জলাভূমি Ramsar স্বীকৃতি পায়। এই এলাকাকে ইংরেজীতে বলে East Calcutta Wetlands and Waste Recycling Region, অর্থাৎ পূর্ব কলকাতার জলাভূমি এবং বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ক্ষেত্র। এটি একটি ecosystem বা সম্পুর্ণ বাস্তুতন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয় – জল, স্থল, ময়লা ঢিবি এবং জলাভূমি অধিবাসীদের বসবাসের স্থান – সমগ্রকে একসঙ্গে নিয়ে। আমাদের এই পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে জল এবং স্থল দুটিই প্রচুর পরিমাণে আছে, তাছাড়া আছে জীববৈচিত্র্য। হয়তো তা অনেক নয় কিন্তু উল্লেখযোগ্য। আর আছে মানুষ, যারা জলাভূমিকে ব্যবহার করার মাধ্যমে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। এরা না হলে জলাভূমি আজ থাকত না। 

মাছের ভেড়ি চাষের জমি, সব্জী ক্ষেত, জলাভূমি আধিবাসীদের বসতবাড়ী – সব কিছু নিয়েই পূর্ব কলকাতার জলাভূমি। এই জলাভূমির আয়তন ১২,৫০০ হেক্টর (১২৫ বর্গ কিলোমিটার) । এই  উৎপাদন ব্যবস্থার জন্যই কিন্তু আমরা সস্তায় খাবার পাই, আমাদের কম খরচে টিকে থাকা সম্ভব হয়। এত সুষমভাবে কাজ করা এই আয়তনের ময়লা জলের জলাভূমি বিশ্বে আর একটিও নেই। এটা ভেবে আমাদের সকল কলকাতাবাসীর গর্বিত হওয়া উচিৎ। ২০২২ বালে এই জলাভূমির Ramsar স্বীকৃতি প্রাপ্তির দুই দশক পূর্ণ হল। আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা? আমাদের পূর্ব কলকাতার জলাভূমি Ramsar এর চয়ন তালিকায় এসেছিল তার wise use বা বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারের বৈশিষ্ট্যের জন্য। তবে বুদ্ধি বা দীপ্তি, আজকের দিনে কোনোটারই প্রমাণ মেলা দুরূহ। আতঙ্কিত লাগে এই কথা উপলব্ধি করে যে আমাদেরই চরম অযত্নে, উচ্চপর্যায়ের অবহেলায় জলাভূমির প্রাণ-শেষ অবস্থার উত্তর আমরা খুঁজতে রাজি নই, কোনো স্তরেই। জলাভূমির নিজস্ব যে আইনটি আছে, সেইটিকে প্রয়োগ করে আর ঝুড়ি ঝুড়ি F.I.R. করে নির্মাণ- কার্য আটকানোর ব্যবস্থা করলে জলাভূমিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে এটা যে অবাস্তব, তার কোন চেতনাই হল না। 

ডাক্তার যদি রোগ না দেখে শুধু রুগীকেই তাকিয়ে দেখতে থাকে তাহলে রোগের চিকিৎসা হবে কি? এটা আমরা কবে বুঝব যে জলাভূমিকে নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার পথকে যদি সুগম করতে হয়, তাহলে ময়লা জলের সরবরাহের সুব্যবস্থা করে তার ব্যবহারকারী জলাভূমি সমাজের কাছে পৌঁছে দিতে হবে? এই ফলনশীলতার জন্যই জলাভূমির অস্তিত্ব অবশ্য প্রয়োজনীয় - যারা কার্যসূত্রে অন্যান্য বড় শহরে গিয়েছেন অথবা বসবাস করেছেন তারা মেনে নিতে দ্বিধা করবেন না যে কলকাতা একটি এমন শহর যেখানে তুলনামূলক কম আয় করলেও বেঁচে থাকা যায়। ময়লা জল সরবরাহের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ক্ষতিগ্রস্ত, ময়লা জলের খাল এবং মজে যাওয়া ভেড়িগুলি ঘিরে যাদের জীবন জীবিকা, সেই জলাভূমি অধিবাসীরা করুণভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে পরিত্রাণের জন্য। ওদের সর্বোতভাবে সাহায্য করে পাশে দাঁড়াতে পারলে তবেই লক্ষাধিক মানুষের জলাভূমি সমাজ এবং সাড়ে চার লক্ষ কলকাতাবাসীর সুরক্ষিত বসবাসের সবচেয়ে বড় খুঁটি, এই আমাদের পূর্ব কলকাতার জলাভূমি, আমাদের সকলের টিকে থাকাকে সুনিশ্চিত করতে পারবে। মাছ, ধান এবং সবজী উৎপাদন করে।

জলাভূমিকে একটি আকর্ষনীয় নির্মাণ-ক্ষেত্র হিসেবে দেখা খুবই সহজ। যারা অল্প-পয়সায় জমি কিনে এখানে বাড়ী করার স্বপ্ন দেখেন তারা খবরই রাখেন না যে এই এলাকার অন্যতম খামতি হচ্ছে পানীয় জলের তীব্র অভাব। সদ্য সমাপ্ত একটি সমীক্ষায় এই তথ্য প্রকটভাবে উঠে এসেছে। এটি নীচু এলাকা, বাইরে থেকে এসে প্রণামী দিয়ে, উৎসাহ ভরে বাড়ী করে ছয় মাসের বেশী সেই বাড়ীতে থাকতে পারছে না এমন লোকের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে যাচ্ছে, সমীক্ষায় এই তথ্যও উঠে এসেছে। তাই জলাভূমির উৎপাদন ক্ষেত্রগুলি খুব বসবাস যোগ্য, এই কথা ভাববার কোন কারণই নেই। হতবাক হই ভেবে যে আমরা তো অনেক মনীষীদের পুজো করতে ভালবাসি, খুব উৎসাহ ভরে সহজাত ভাবে ব্যক্তিপূজো করি। কিন্তু আমাদের এত বাঙালি মণীষীরা তাদের জীবন দিয়ে, কর্মকান্ড দিয়ে, বাণী দিয়ে বেঁচে থাকবার ও মানুষকে ভালবাসার যে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন, তা তো আমরা কেউ শিখি না? ব্যক্তিকে পুজো করব কিন্তু তার শিক্ষাকে তুচ্ছ করব, এই দ্বিচারিতার জন্য আমাদের কি কোন প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত নয়? যদি তাই হয়, তাহলে আমরা নিজেদের ভালবেসে এই জীবন্ত ঐতিহ্যবাহী (Living heritage) জলাভূমিকে প্রাণবন্ত করতে যেন সচেষ্ট হই, কর্মোন্মুখ হই।

মাছের ভেরিতে তরুণীর মুণ্ডুহীন নগ্ন দেহ, চাঞ্চল্য শাসনে

জলাভূমি বোজানোর অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

Purbalok Pond Scam:উন্নয়নের নামে জলাভূমি চুরি করছে খোদ সরকার, ফাটকা খেলছেন তৃণমূল কাউন্সিলার প্রার্থী