শেষ ভরসা বাজারচলতি কন্ডিশনার, সিরাম। কিন্তু রুক্ষ আবহাওয়া এবং বাতাসে ধুলোর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সে সবও ব্যর্থ হচ্ছে কখনও সখনও। অল্পস্বল্প ব্যবহারে কাজ হচ্ছে না। করুন কিছু ঘরোয়া উপায়।
শ্যাম্পু করলে চুল রুক্ষ ও না করলে খুশকি—এই সমস্যার সমাধানে সঠিক শ্যাম্পু (সালফেট-মুক্ত), হালকা গরম জল ব্যবহার, শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ও তেল ম্যাসাজ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং খুশকির জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা জরুরি, যা আপনার মাথার ত্বককে পরিষ্কার ও চুলকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে। এখানে ৫টি উপায় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
* ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন:
১. তিসির বীজ ভেজানো জল: তিসির বীজ ভেজানো জলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা চুলের চারপাশে ময়েশ্চারাইজ়ারের পরত তৈরি করে দেয়। চুলকে ভঙ্গুর হতে দেয় না। সপ্তাহে দু’ তিন বার এই তিসি ভেজানো জল চুলে লাগিয়ে রাখলে চুল অত্যন্ত নরম এবং উজ্জ্বল দেখাবে। ভিতর থেকে পুষ্টিও জোগাবে চুলকে।
২। কলা দিয়ে তৈরি মাস্ক : পাকা কলা চটকে বা ব্লেন্ডারে বেটে নিয়ে তা চুলে মাস্কের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন। পটাশিয়াম এবং নানা ধরনের ভিটামিনে ভরপুর কলায় আর্দ্রতা বজায় রাখার ক্ষমতাও রয়েছে। খরখরে রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুলে এক বারের ব্যবহারেই তফাত দেখা যাবে। এটিও সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৩. দইয়ের মাস্ক: দইয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ার। এতে থাকা বি ভিটামিন চুলের জন্যও অতি জরুরি একটি পুষ্টিগুণ। চুলে সপ্তাহে ২-৩ বার দইয়ের মাস্ক লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক রেখে দিয়ে তার পরে চুল পরিষ্কার করলে চুল হবে রেশমের মতো নরম এবং উজ্জ্বল।
৪। মধু এবং অলিভ অয়েল: চুলে মধু এবং অলিভ অয়েল এক সঙ্গে মিশিয়ে স্নানের ঘ্ণ্টা খানেক আগে লাগিয়ে রাখতে পারেন। মধু আর্দ্রতা জোগাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল চুলে পুষ্টি জোগান দেয়।
১. সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন ও ব্যবহার পদ্ধতি:
* সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু: সালফেট (Sulfate) যুক্ত শ্যাম্পু চুল থেকে প্রাকৃতিক তেল কেড়ে নেয়, যা রুক্ষতার কারণ। তাই মাইল্ড ও সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
* শ্যাম্পু শুধু স্ক্যাল্পে: শ্যাম্পু প্রধানত মাথার ত্বকের জন্য। ভালো করে ফেনা তৈরি করে শুধু স্ক্যাল্প পরিষ্কার করুন, চুলের আগা পর্যন্ত শ্যাম্পু লাগাবেন না। এতে চুল রুক্ষ হবে না।
২. কন্ডিশনার ও তেল ব্যবহার
* শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার: শ্যাম্পুর পর অবশ্যই ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি চুলকে নরম ও আর্দ্র রাখে।
* তেল ম্যাসাজ: সপ্তাহে ১-২ দিন শ্যাম্পু করার আগে নারকেল তেল, শিকাকাই তেল বা বাদাম তেল হালকা গরম করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।
৩. খুশকির জন্য বিশেষ শ্যাম্পু ও ঘরোয়া প্রতিকার:
* অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু: যদি খুশকি বেশি হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে জিঙ্ক পাইরিথিয়োন বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, যা অতিরিক্ত তেল ও মৃত কোষ দূর করে।
* অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার (ACV): শ্যাম্পু করার পর এক কাপ জলে এক টেবিল চামচ ACV মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
* সুষম খাদ্য: প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খান। পর্যাপ্ত জল পান করুন।
* মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ চুল ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। মেডিটেশন বা যোগা করুন।
৫. ধোয়ার সময় সতর্কতা:;
* গরম জল এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত গরম জল মাথার ত্বককে শুষ্ক করে। হালকা গরম বা ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন।
* অতিরিক্ত ধোয়া বা কম ধোয়া এড়িয়ে চলুন: খুব বেশি ধুলে তেল চলে যায়, আবার কম ধুলে তেল জমে খুশকি হয়। তাই সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখুন।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে শ্যাম্পু করার পরও চুল রুক্ষ হবে না এবং খুশকির সমস্যাও কমবে। যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
