বর্ষাকালে জলবাহিত রোগ সংক্রমণ কোনো নতুন কিছু নয়। তবে এর মধ্যে অন্যতম হল লেপ্টোস্পাইরোসিস। প্রতি বছর এই রোগের প্রকোপ বাড়ে, তাই বর্ষায় বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।

বর্ষাকাল মানেই একদিকে যেমন প্রকৃতির সজীব রূপ, তেমনই জলবাহিত রোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায় বহুগুণ। এই সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসচেতনতা ও গা-ছাড়া মনোভাব থেকে একাধিক সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হল লেপ্টোস্পাইরোসিস। সাধারণভাবে খুব পরিচিত না হলেও এই রোগ মারাত্মক হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

লেপ্টোস্পাইরোসিস : কী এই রোগ?

বর্ষার এই সময়ে জলবাহিত যে রোগগুলি মাথাচাড়া দেয়, তার মধ্যে একটি হল লেপ্টোস্পাইরোসিস। প্রতি বছর এই রোগের প্রকোপ বাড়ে দেশের নানা জায়গায়। জলবাহিত ও ব্যাক্টেরিয়াজনিত এই রোগটি ছড়ায় Leptospira interrogans নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এটি প্রধানত ছড়ায় ইঁদুর, কুকুর, বিড়াল, বেজি প্রভৃতি প্রাণীর মূত্র ও মল থেকে। বর্ষাকালে এই বর্জ্য পদার্থগুলি নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে জলাশয়ে মিশে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসে। বিশেষত, জমা জল বা প্লাবিত অঞ্চলে খালি পায়ে হাঁটলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, পায়ের ফাটা বা কাটা অংশ দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

উপসর্গ কী কী?

লেপ্টোস্পাইরোসিসের লক্ষণগুলো সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতোই। হঠাৎ জ্বর আসা সাথে তীব্র মাথা ও পেশিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি হয়। শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কে প্রদাহ, খিঁচুনি বা মেনিনজাইটিসের উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও নাক, মাড়ি বা প্রস্রাব থেকে রক্তপাত হতে পারে।

এই রোগ সময়মতো না ধরলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করলে তবেই এই রোগ ধরা পড়বে। রোগের বারবাড়ন্ত হলে লিভার ও কিডনি বিকল হতে পারে।

সতর্ক থাকবেন যেভাবে

* বর্ষায় জমা জল এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে খালি পায়ে জমা জলের আশেপাশে হাঁটা একেবারে নয়।

* বাইরে থেকে এলে হাত-পা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দরকারে সঠিক স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

* জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল, বাইরের শরবত বা নরম পানীয় খাওয়া বন্ধ করুন।

* পরিচ্ছন্ন পোশাক ব্যবহার করুন, রাস্তায় পড়ে বেরোনো ভেজা বা অপরিচ্ছন্ন পোশাক ঘরে রেখে দেবেন না।

* অসুস্থ হলে, উপসর্গ দেখে আশঙ্কা হলে সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে যাবেন না।