শিশুদের জন্য চিনির অতিরিক্ত ব্যবহার, ক্ষতিকর প্রভাব ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প
প্রতিদিন চিনি শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর, জানেন কি? দাঁতের ক্ষয়, স্থূলতা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি নানা সমস্যার কারণ হতে পারে চিনি। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য চিনির বিকল্প জেনে নিন এবং তাদের সুস্থ রাখুন।

বাজারে পাওয়া বিভিন্ন জুস, চকলেট, বিস্কুট, কেক, টফি, প্যাকেটজাত খাবার, মিষ্টি এবং এমনকি কিছু রুটি ও দইয়েও চিনির পরিমাণ লুকিয়ে থাকে। অনেক সময় অজান্তেই বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের প্রতিদিন অনেক চামচ চিনি খাইয়ে দেন। কিন্তু আপনি কি জানেন যে প্রতিদিন চিনি খাওয়া বাচ্চাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? পুরনো সময়ে এবং এখনও অনেকে ৪-৫ মাসের বাচ্চার দুধে চিনি মিশিয়ে খাওয়ান, যা শিশু বিশেষজ্ঞরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেন। ডাক্তারদের মতে, চিনি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং নবজাতকের জন্য চিনির একটা দানাও তার মানসিক বিকাশের জন্য বাধা হতে পারে।
বাচ্চাদের জন্য প্রতিদিন চিনি খাওয়া – ঠিক না ভুল?
বাচ্চাদের জন্য প্রতিদিন চিনি খাওয়া ভুল।
- শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন চিনি দেওয়া তাদের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। WHO এবং American Heart Association (AHA) এর মতে:
- ২ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের এক চামচও চিনি দেওয়া উচিত নয়। এই বয়সে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে।
- ২-১৮ বছর বয়সী বাচ্চাদের প্রতিদিন ২৫ গ্রাম (৬ চামচ) এর বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়।
প্রতিদিন চিনি খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের উপর পড়া প্রভাব:
দাঁতের ক্ষয়
চিনি মুখে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যার ফলে দ্রুত দাঁতের ক্ষয় হয়।
মনোযোগ এবং আচরণের উপর প্রভাব
চিনি খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে বিরক্তি, অতিরিক্ত সক্রিয়তা এবং মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্থূলতা এবং বিপাকের উপর প্রভাব
প্রতিদিন চিনি খেলে বাচ্চাদের ওজন দ্রুত বাড়তে পারে, যার ফলে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে।
ঘুমের উপর খারাপ প্রভাব
অতিরিক্ত চিনি খেলে বাচ্চাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যার ফলে তাদের মেজাজ এবং পড়াশোনা উভয়ের উপর প্রভাব পড়ে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া
চিনি শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, যার ফলে বাচ্চারা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
বাচ্চাদের মিষ্টির জন্য কি দেবেন – স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
- চিনি- স্বাস্থ্যকর বিকল্প
- সাদা চিনি- ফল (কলা, আপেল, আম)
- ক্যান্ডি-টফি- শুকনো ফল (আখরোট, কিশমিশ, ডুমুর)
- প্যাকেটজাত জুস- তাজা ঘরে তৈরি ফলের রস (চিনি ছাড়া)
- মিষ্টি বিস্কুট- ঘরে তৈরি গুড়/মধু দিয়ে তৈরি মিষ্টি
- চকলেট- ডার্ক চকলেট (৭০% কোকোর বেশি) সীমিত পরিমাণে
বিঃদ্রঃ: ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু দেওয়া উচিত নয়।
অভিভাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- প্যাকেটজাত খাবারের লেবেল অবশ্যই পড়ুন – "Added Sugar" বা "High Fructose Corn Syrup" এড়িয়ে চলুন।
- বাচ্চাদের মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন না, বরং ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- “মিষ্টি পুরস্কার” এর মানসিকতা পরিবর্তন করুন – বাচ্চাদের প্রশংসা বা সময় দিয়ে খুশি করুন।

