বাসি ভাত খেলে ডায়াবেটিস কমে যায়, এমন খবর সম্প্রতি ইন্টারনেটে ঘুরছে। এ ব্যাপারে ডাঃ শিব সুন্দর তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

বাসি ভাত খেলে কি সুগার লেভেল কমে?

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বাসি ভাতের একটা বিশেষ স্থান আছে। বাংলা সহ দেশের অনেক অঞ্চলেই এটি বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি বাসি ভাত খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে বলে একটা ধারণা প্রচলিত আছে। তবে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা বাসি ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেন না। যদিও ডাঃ শিব সুন্দর তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বাসি ভাত খাওয়া যেতে পারে বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

বাসি ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা

বাসি ভাত হল রান্না করা ভাত রাতভর জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খাওয়া। এই পদ্ধতিতে ভাতে থাকা স্টার্চ এবং সুগার ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য উপকারী উপাদানে ভাঙে। বাসি ভাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া জাতীয় উপকারী অণুজীব তৈরি হয়। প্রোবায়োটিক নামে পরিচিত এই অণুজীবগুলি পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এগুলি পাচনক্রিয়া উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও এতে ভিটামিন বি6, বি12, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে। ল্যাকটিক অ্যাসিড স্টার্চ ভেঙে ফেলায় বাসি ভাত সহজপাচ্য।

ডায়াবেটিস রোগীরা এভাবে বাসি ভাত খেতে পারেন

বাসি ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় এটি রক্তে সুগার লেভেল ধীরে ধীরে এবং সমানভাবে বাড়ায় বলে বলা হয়। তবে এর পক্ষে মেডিকেল প্রমাণ কম। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হলেও কার্বোহাইড্রেট থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার লেভেল বাড়াতে পারে। ডাঃ শিব সুন্দরের মতে, বাসি ভাত জলে ভিজিয়ে পান্তা হিসেবে না খেয়ে, পরের দিন গরম করে কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। যাদের HbA1C দশের উপরে, তারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীদের রান্না করা ভাত ফ্রিজে রেখে পরের দিন গরম করে খাওয়া ভালো বলে তিনি জানিয়েছেন।

পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে

এভাবে ফ্রিজে রেখে পরের দিন গরম করে খেলে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। স্টার্চ রেজিস্ট্যান্স বেশি থাকে। এতে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে। এটি কিছুটা হলেও রক্তে সুগার লেভেল বাড়তে বাধা দেয়। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনফ্লেমেশন কমে। যাদের HbA1C আটের কম, তারা প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত বাসি ভাত খেতে পারেন। শুধু ভাত না খেয়ে এর সাথে প্রোটিন এবং ফাইবার যুক্ত করতে হবে। ছোট পেঁয়াজ এবং সবজির সাথে ডিম, মাংস, মাছ, পনির জাতীয় প্রোটিন সহ বাসি ভাত খাওয়া যেতে পারে।

প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে

এভাবে ফাইবার এবং প্রোটিন সহ ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত বাসি ভাত খেলে রক্তে সুগার লেভেল স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। তবে শুধু ভাত খেলে সুগার লেভেল তাড়াতাড়ি বেড়ে যাবে। উপরোক্ত পরামর্শ অনুযায়ী বাসি ভাত খাওয়া আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে। তবে বাসি ভাত ডায়াবেটিস সারিয়ে তুলতে পারে এর কোন প্রমাণ নেই বলে ডাঃ শিব সুন্দর জানিয়েছেন। বাসি ভাত খেলে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সেরে যাবে বলে কেউ যদি বলে, তা বিশ্বাস করবেন না। বাসি ভাত হলেও এতে কার্বোহাইড্রেট আছে, তাই এটি রক্তে সুগার লেভেল বাড়াবেই।

যেকোনো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার সুগার লেভেল বাড়ায়

যেকোনো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারই হোক, এর সাথে প্রোটিন এবং ফাইবার যুক্ত করে পরিমিত পরিমাণে খেলেই রক্তে সুগার লেভেল স্বাভাবিক থাকবে। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। এই তথ্যগুলি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি ডাঃ শিব সুন্দরের ইনস্টাগ্রাম পেজে প্রকাশিত ভিডিও অবলম্বনে তৈরি। এর সত্যতা নিয়ে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা কোনো ভাবেই দায়ী নয়।