ভাজাভুজি হোক অথবা কষিয়ে রান্না, হলুদ থাকবেই। তবে সমস্যা হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের বদলে গুঁড়োমশলা দেওয়া হয়। কিন্তু গুঁড়োয় তুলনায় কাঁচা হলুদ খাওয়া বেশি উপকারী। তাই কাঁচা হলুদ দিয়েই ঘরে বানিয়ে নিতে পারেন রকমারি পদ।

বাঙালি হেঁসেলে হলুদ থাকবে না সেটা ভাবাও অস্বাভাবিক ব্যাপার। ভাজাভুজি থেকে কষা বা ঝোল রান্নায় হলুদের সম্ভার অতুলনীয়। মা ঠাকুমাদের আমলে কাঁচা হলুদ দিয়ে বিভিন্ন রকম রান্না করা হতো। এখন যদিও এই বাটাবুটির ঝামেলা থেকে সরে গিয়ে ব্যস্ত জীবনে সবাই হলুদ গুঁড়ো টাই ব্যবহার করেন। কিন্তু কাঁচা হলুদ স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। যদি খেতে পারেন সঠিক উপায়ে তাহলে মুখের স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই বজায় থাকে। কাঁচা হলুদের কিছু গুনাগুন এবং উপকারিতা ও কিছু রেসিপি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো।

কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে কোলেস্টেরল ও প্রদাহ কমাতে কয়েকটি সুস্বাদু খাবার হলো:

1.হলুদ-আদার পানীয়, 2. সবজি ভাজার সাথে, 3. ডিমের অমলেট বা ভুজিয়া, 4. সালাদ ড্রেসিং, 5.চিকেন/মাছের ম্যারিনেড, 6.হলুদ দুধ (Golden Milk), এবং 7.ডাল বা ভাতে মেশানো 8.হলুদের আচার 9.হলুদের ঘি

হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, বিশেষত কালো গোলমরিচ যোগ করলে এর শোষণ বাড়ে।

হলুদের সুস্বাদু পদগুলি হলো:

১. হলুদ-আদার পানীয় (Turmeric Ginger Shot): গ্রেট করা কাঁচা হলুদ ও আদা, অল্প গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে জল দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এটি সকালের জলখাবারে দারুণ উপকারী।

২. রোস্ট করা সবজি: গাজর, আলু, ব্রোকলি ইত্যাদি সবজি রোস্ট করার আগে সামান্য অলিভ অয়েল, লবণ, গোলমরিচ ও গ্রেট করা কাঁচা হলুদ মাখিয়ে নিন। এতে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বাড়বে।

৩. ডিমের অমলেট/ভুজিয়া: ডিম ফেটানোর সময় বা ভাজার সময় অল্প গ্রেট করা কাঁচা হলুদ ও কুচানো ধনেপাতা মিশিয়ে নিন। এটি ডিমের পদকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করে তোলে।

৪. সালাদ ড্রেসিং: অলিভ অয়েল, লেবুর রস, নুন ও এক চিমটি গ্রেট করা কাঁচা হলুদ মিশিয়ে সালাদের ড্রেসিং তৈরি করুন।

৫. চিকেন/মাছ ম্যারিনেড: চিকেন বা মাছের টুকরোতে আদা-রসুন বাটা, লেবুর রস, নুন ও গ্রেট করা কাঁচা হলুদ মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে রান্না করুন। এটি মাংসকে নরম ও সুস্বাদু করে।

৬. হলুদ দুধ (Golden Milk): এক গ্লাস গরম দুধের সাথে গ্রেট করা হলুদ, এক চিমটি গোলমরিচ ও সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি রাতে ভালো ঘুম ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

৭. ডাল ও ভাতে মেশানো: রান্না করা ডাল বা ভাতের সাথে সামান্য গ্রেট করা কাঁচা হলুদ মিশিয়ে দিন। এটি সাধারণ খাবারকেও পুষ্টিগুণে ভরপুর করে তোলে।

৮. কাঁচা হলুদের আচার- শীতকালের জন্য উপযুক্ত। টুকরো করা কাঁচা হলুদ প্রথমে গরম সর্ষের তেলে মেশাতে হয়। তার পর তাতে কাঁচালঙ্কা, নুন, রসুন ও আদা— সব দিয়ে চটজলদি বানানো যায় এই আচার। সকালে পরোটার সঙ্গে দারুণ লাগে খেতে।

৯. কাঁচা হলুদের ঘি- কাঁচা হলুদের ঘি।কাঁচা হলুদ ধীরে ধীরে দেশি ঘিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া হয়। তার পর ছেঁকে নেওয়া হয়। পরে অন্য রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা রুটির উপর মাখিয়েও খেতে পারেন।

কেন কাঁচা হলুদ উপকারী?

* কারকিউমিন: কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদানটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ (inflammation) কমায় এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

* গোলমরিচের ব্যবহার: গোলমরিচ মেশালে কারকিউমিনের শোষণ ক্ষমতা প্রায় ২০ গুণ বেড়ে যায়, তাই যেকোনো পদেই অল্প গোলমরিচ মেশানো উচিত।

এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজমশক্তি ভালো থাকে এবং কোলেস্টেরল ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।