সুডৌল ভরাট ঠোঁট পেয়ে সবাই করাচ্ছে লিপ ফিলার্স, তবে একে মোটেও নিরাপদ প্রক্রিয়া বলতে রাজি নন চিকিৎসকেরা। হতে পারে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আগে একসময় মহিলাদের পাতলা ঠোঁটের হাসি মুগ্ধ করতো লোকজনকে, সেটাই ছিল ঠোঁটের সৌন্দর্যের সংজ্ঞা। এখন যুগ বদলেছে, সাথে ট্রেন্ডও। মোটা, ভরাট, গ্লসি ঠোঁট আঁকতে উত্যে পড়ে লেগেছে বলিউড থেকে টলিউড, ইনস্টাগ্রাম থেকে টিকটক সব সেলিব্রিটিরাই। ট্রেন্ডে এসেছে বিউটি ট্রিটমেন্ট 'লিপ ফিলার্স'। তবে এই বিউটি ট্রিটমেন্টের মাঝেই বিরাট ঝুঁকি! Je দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী অভিনেত্রী উর্ফী জাভেদও।
সমাজমাধ্যম জুড়ে ভাইরাল উর্ফীর ভিডিও - ফুলে ঢোল হয়েছে ঠোঁট, গাল-থুতনির পেশিও ফুলে উঠেছে। যন্ত্রণায় কথা বলা তো দূর, খেতে পর্যন্ত পারছেন ণা অভিনেত্রী। এবার তা সরাতেও চরম কষ্ট। যন্ত্রনায় চোখে জল নিয়ে উর্ফী জানাচ্ছেন, এমন আর কখনও করবেন না। বরং অনেক সূক্ষ্ম ও কম যন্ত্রণাদায়ক কিছু হলে তা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
কী এই 'লিপ ফিলার্স' বিউটি ট্রিটমেন্ট?
'লিপ ফিলার্স' এক ধরনের কসমেটিক প্রসেস, যাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। সিন্থেটিক হায়ালুরনিক অ্যাসিডে ভরা একটা ইঞ্জেকশনই যথেষ্ট। ঠোঁটের চামড়া ভেদ করে সুচ ফুটিয়ে কোষের ভিতরে এক রকম থকথকে জেল ভরে দেওয়া হয়, যাতে ঠোঁট ফুলেফেঁপে বেশ ভরাট দেখাবে, সূক্ষ্ম বলিরেখাগুলি দূর হবে, ঠোঁট নরম ও জেল্লাদারও দেখাবে। একে ফিলার্স ইঞ্জেকশনও বলা হয়। কে কতটা পুরু করবেন ঠোঁট, সেই বুঝে হায়ালুরনিক অ্যাসিডের ডোজ় ঠিক করা হয়।
ইনজেকশনের ডোজ় ও বিউটি ট্রিটমেন্ট প্রসেস ঠিকঠাক হলে ফলাফল ৬-১২ মাস স্থায়ী হয়। তবে সামান্য ভুল হলেই হতে পারে মারাত্মক বিপদ।
লিপ ফিলার্স কি আদৌ নিরাপদ?
লিপ ফিলার্সকে মোটেও নিরাপদ প্রক্রিয়া বলতে রাজি নন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল বলেন, আগে মহিলাদের পাতলা ঠোঁটেরই আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এখন পুরু, বেঢপ আকারের ঠোঁটই পছন্দ করছেন কমবয়সিরা। তারকাদের দেখাদেখি তা করতে গিয়ে বিপদেও পড়ছেন। ফিলার্স করাতে হলে তার খরচ বেশ অনেকটা, তাই অভিজ্ঞ কারও কাছে করানোই শ্রেয়। কারণ সামান্য ভুল হলেই মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে ত্বকের।
কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?
১. ঠোঁট প্রচণ্ড ফুলে যাবে, যন্ত্রণা শুরু হবে।
২. ঠোঁটের রং বদলে যেতে পারে, ঠোঁট থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৩. ঠোঁটের কোষে প্রদাহ শুরু হবে, ঠোঁট এবং তার চারপাশের পেশি ফুলে টান ধরবে, গ্রন্থিগুলি ফুলে উঠবে।
৪. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যালার্জি হতে পারে, এতে ঠোঁটে চুলকানি, র্যাশ হতে পারে।
৫. ঠোঁটের জায়গায় জায়গায় মাংসপিণ্ড ফুলে ভিতরে ছোট ছোট দানার মতো পিণ্ড তৈরি হবে। হায়ালুরনিক অ্যাসিড জমে থাকলে তা থেকে কোষের ক্ষতিও হতে পারে।
৬. ঠোঁটের ভিতরে রক্ত সঞ্চালন বাধা পাবে, ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকবে। ঠোঁটের কোনায় গাঢ় কালশিটে পড়বে। তারপর সেখানেও যন্ত্রণা শুরু হবে।
৭. ঠোঁটে হার্পিসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। যাদের কখনও পক্স বা হার্পিস হয়েছিল, তাদের সংক্রমণ ফিরে আসার আশঙ্কা বেশি।
৮. লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ থাকলে ফিলার্সের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর থেকে অটোইমিউন রোগ হতে পারে। এমনকি স্নায়ুর অসাড়তাও দেখা দিতে পারে।
