গর্ভাবস্থার প্রতিটি ট্রাইমেস্টারই গুরুত্বপূর্ণ এবং সচেতন থাকতে হয় মা সহ পরিবারের সকলকে। তাই ট্রাইমেস্টারের সমস্ত খুঁটিনাটি প্রতিটি হবু মা-বাবার জানা উচিত।
মায়ের গর্ভে নতুন প্রাণের সঞ্চার, গর্ভধরণের এই আশ্চর্যেজনক প্রক্রিয়া পরিবারে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। তবে মা-এর জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়। শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের দীর্ঘ পরীক্ষা যেন এই সময়। গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে মায়ের সাথে পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
গর্ভাবস্থা (Pregnancy) সাধারণত ৪০ সপ্তাহ ধরে চলে এবং এই সময়কালকে তিনটি ট্রাইমেস্টারে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ট্রাইমেস্টারে মায়ের শরীর, ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং গর্ভাবস্থার উপসর্গ ভিন্ন হয়। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব, কোন সময়কে কোন ট্রাইমেস্টার বলা হয় এবং সেই সময় কী কী পরিবর্তন ঘটে মায়ের।
গর্ভাবস্থার তিনটি ট্রাইমেস্টারের বিস্তারিত
১। প্রথম ট্রাইমেস্টার
সময়কাল: গর্ভাবস্থার প্রথম দিন থেকে ১২তম সপ্তাহ বা প্রথম ৩ মাস চলে এই সবাই।
এই সময় ভ্রূণের বিকাশ শুরু হয়, নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর দেয়ালে আস্তে আস্তে বসে যায়। প্লাসেন্টা গঠন হওয়া শুরু হয়। এই সময়ই ভ্রূণের হৃদস্পন্দন, মস্তিষ্ক, চোখ, কিডনি, লিভারসহ প্রধান অঙ্গের গঠন শুরু হয়। ভ্রূণের আকার যত বাড়ে, মাথা-হাত-পা স্পষ্ট হতে থাকে।
এই প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মায়ের বমি বমি ভাব, মর্নিং সিকনেস, ক্লান্তি, স্তনে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, ঘন ঘন মূত্রত্যাগ এসব সমস্যা হতে পারে। শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মুড সুইং শুরু হয়। কখনো কখনো হালকা রক্তক্ষরণ হতে পারে। ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
২। দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার
সময়কাল: ১৩ থেকে ২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত বা ৪র্থ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত।
এই সময়ে শিশুর নড়াচড়া করা শুরু হয়। হাড় শক্ত হতে থাকে, ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয় এই সময় থেকেই। শিশুর চুল, চোখের পাতা, নখ ইত্যাদি গঠিত হয়, শ্রবণশক্তি বিকশিত হয় – এমনকি মা-বাবার কণ্ঠ শুনতে পায় শিশু।
ওরথম ২-১ মাস বোঝা না গেলেও ৩-৪ নম্বর মাস থেকে মায়ের পেট স্পষ্টভাবে বড় হতে শুরু করে, baby bump বোঝা যায়। পেটের পাশে টান বা ব্যথা অনুভব হতে পারে যাকে রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন বলে। মায়ের খিদে বাড়ে, বমিভাব কমে, মুড সুইংও কিছুটা কমে আসে। এছাড়া হরমোনজনিত কারণে মুখে বা ত্বকে রঙের পরিবর্তন আসতে পারে।
৩। তৃতীয় ট্রাইমেস্টার
সময়কাল: ২৮ থেকে ৪০-৪১ সপ্তাহ অথবা শেষের ৩ মাস সময়কাল।
এই সময়ে শিশুর ফুসফুস সম্পূর্ণ বিকশিত হয়ে যায়। শিশুর ওজন বাড়ে এবং ফ্যাট জমা হয়, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর হয়, এবং শিশুর অবস্থান জন্মের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে অর্থাৎ head-down position -এ আসে।
মায়ের ক্ষেত্রে জন্মদানের জন্য জরায়ু প্রসারিত হতে থাকে, এবং তাতে চাপ পড়ে মূত্রথলি, ফলে মূত্র ধরে রাখা মুশকিল হয়, ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর ওপরেও চাপ পড়ে, পিঠ ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। গর্ভনালির সংকোচন (Braxton Hicks contractions) শুরু হয়, যা কখনও কখনও ডেলিভারির আগাম সংকেত দেয়। বাচ্চা নিচের দিকে নামতে থাকে (lightening), ফলে গর্ভাবস্থার শুরুতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে, এই সময় তা কোনে, শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।


