সংক্ষিপ্ত

করোনাভাইরাস অতিমারীর দুঃসহ স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলে সারা বিশ্বের মানুষ যখন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময় ফের চিনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। এই মধ্যে হানা দিচ্ছে নতুন রোগ।

চিনা ভাইরাস হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে বিরল রোগ র‍্যাবিট ফিভার। এই রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। এই রোগের আসল নাম হচ্ছে টিউলারেমিয়া। এটি বিরল ও সংক্রামক রোগ। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০০১ থেকে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে টিউলারেমিয়া সংক্রমণের বার্ষিক গড় ৫৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ফলে এই রোগ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভারতে এখনও এই রোগের সংক্রমণের কথা জানা যায়নি। তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বহু ভারতীয় নানা কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অনেকে ভারতে আসেন। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তেই পারে।

কী কারণে হয় র‍্যাবিট ফিভার?

সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, ফ্রান্সিসেলা টুলারেনসিস নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে র‍্যাবিট ফিভারের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ যে কোনও ব্যক্তির শরীরেই সংক্রমিত হতে পারে। মানুষ হোক বা অন্য কোনও প্রাণী, সবার শরীরেই থাবা বসাতে পারে এই সংক্রমণ। তবে এই ভাইরাস বেশি ছড়ায় খরগোশ, ইঁদুরের মতো প্রাণীর শরীরে। এই সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে থেকে সেই ভাইরাস অনেক সময় মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের মতে, দূষিত জল পান করলে, ধুলো-বালি নোংরা ঘাঁটলে তার মাধ্যমেও অনেক সময় এই রোগের জীবাণু মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও গবেষণাগার থেকে এই সংক্রমণ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই কারণে যেখানে-সেখানে জল খাওয়া উচিত নয়, ধুলো বাঁচিয়ে চলা উচিত। বাইরে কোথাও কাজ করার সময়ও সতর্ক থাকা উচিত।

র‍্যাবিট ফিভারের লক্ষণগুলি কী?

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, র‍্যাবিট ফিভারের বিশেষ কিছু উপসর্গ ও লক্ষণ রয়েছে। জ্বর, মুখে-ত্বকে ঘা, গলা ব্যথা, চোখ জ্বালার মতো লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হওয়া উচিত। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তবে কোনও ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হলে শুরুতে বোঝা যায় না।

কীভাবে এই রোগ থেকে বাঁচবেন?

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যাঁরা মাঠে কাজ করেন, ঘাস কাটেন, ফসল কাটেন, তাঁদের অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরে থাকা উচিত। খরগোশ, কুকুর, ইঁদুরের মতো প্রাণীর পরিচর্যা করার সময় মাস্ক, গ্লাভস পরে থাকতে হবে। পরিশোধিত জল পান করতে হবে। তাহলে র‍্যাবিট ফিভার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

এইচএমপিভি নিয়েও আতঙ্ক

চিনের হেনান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এইচএমপিভি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যাওয়া, গলা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসে ঠিক যে লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছিল, এইচএমপিভি-তেও ঠিক সেই লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে। জ্বর, সর্দি-কাশি হলে যে ধরনের সমস্যা দেখা যায়, এইচএমপিভি-র ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সেটাই হচ্ছে। শুরুতে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, নাক থেকে জল গড়ানো, কোনও গন্ধ না পাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ভারতে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। বেঙ্গালুরুতে দুই শিশু আক্রান্ত হয়েছে। কলকাতাতেও একজন আক্রান্ত হয়েছে। ফলে নতুন চিনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। করোনাভাইরাস অতিমারীর সময় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই দিনগুলির কথা মানুষের মনে ফিরে আসছে।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

আরও পড়ুন-

ভারতেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে চিনের নতুন ভাইরাস, কী ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার?

HMPV: কীভাবে বাঁচবেন HMPV থেকে? ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলি দেখুন ছবিতে

Viral Video: মহামারির কালো ছায়া পড়বে বিশ্বে? চিনে অজানা ভাইরাসে আক্রান্তদের ভিড় হাসপাতালে