সংক্ষিপ্ত

একদিন পরেই দোলযাত্রা। আর এই দোলযাত্রার আগের দিন পালন করা হয় 'হোলিকা দহন' বাংলায় যাকে বলা হয় 'ন্যাড়াপোড়া।' এদিন ভক্তরা নরসিংহের পূজা করে এবং কয়েকটি পবিত্র স্তুতি বন্দনার মাধ্যমে প্রহ্লাদের মাহাত্ম্য স্মরণ করা হয়। জেনে নিন এই দিনটির পিছনে লুকিয়ে থাকা অজানা ইতিহাস। 

'আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরিবোল।' এই দুটি শ্লোকের সাথে বাঙালির পরিচিতি প্রায় অনেক দিনের। দোলের (Dolyatra) আগের দিন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয় হোলিকা দোহনের (Holika Dahan) উৎসব। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে বলা হয় যে, এই দিনটি অসুর হোলিকাকে দহনের প্রতীক যার অর্থ হল অশুভর বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির আগমন। দোলযাত্রার আগের দিন সন্ধ্যায় পূর্ণিমা তিথি চলাকালীন এই হোলিকা দোহনের উৎসব (Holika Dahan Festival) উদযাপন করা হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী এই হোলিকা দহন, এর ঐতিহাসিক তাৎপর্যই বা কোথায়? 

হোলিকা দহন কী?

সত্যযুগে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর অত্যন্ত অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ব্রহ্মার তপস্যা করে ভয়ানক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন। যার ফলে তার অন্যায় অত্যাচারের সীমা ও ছাড়াতে শুরু করেছিল। সেই সময়কালেই জন্ম নেন তাঁর পুত্র সন্তান প্রহ্লাদ। বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুর পুত্র কি না বিষ্ণুর (Lord Vishnu) উপাসক! এ কথা কিছুতেই সহ্য করতে পারলেন না দৈত্যরাজ। নানাভাবে প্রহ্লাদকে হত্যার চেষ্টা শুরু করতে থাকলেন তিনি। নাগ-কক্ষে ছেলেকে বন্দি রাখলেন। কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে নাগেরা পালঙ্ক তৈরি করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করলেন। ফলে এ যাত্রায় ব্যর্থ হল হিরণ্যকশিপুর প্রচেষ্টা। 

অবশেষে উপায় না পেয়ে হিরণ্যকশিপু ডেকে পাঠালেন বোন হোলিকাকে। প্রজাপতি ব্রহ্মা হোলিকাকে একটি বিশেষ চাদর দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল সেই চাদর ছিল হোলিকার রক্ষাকবচ। এরপর হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে সেই চাদর গায়ে দিয়ে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেন এবং ভগবান বিষ্ণুর উপাসক প্রহ্লাদের গায়ে একটিও আঁচড় লাগল না, উল্টে পুড়ে মারা গেলেন হোলিকা। অবশেষে শ্রীবিষ্ণু নরসিংহ অবতার রূপ নিয়ে হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করেন।

আরও পড়ুন- ন্যাড়া পোড়ার সময় ভুলেও এই গাছের কাঠ ব্যবহার করবেন না, হতে পারে মারাত্মক সমস্যা

আরও পড়ুন- শীতলা অষ্টমীতে দেবীকেও নিবেদন করা হয় বাসি খাবার, জেনে নিন কারন

আরও পড়ুন- কোথাও টমাটো দিয়ে কোথাও বা শুধু জল দিয়ে, জেনে নিন বিশ্ব জুড়ে কিভাবে পালিত হয় হোলি উৎসব

হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাই আসলে বাংলায় ন্যাড়াপোড়া নাম পরিচিত। এর অর্থ অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তিকে আহ্বান। তবে এই ন্যাড়াপোড়া পালনের কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে। গাছের শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা দিয়ে বুড়ির বাড়ি তৈরি করে তাতে অগ্নিসংযোগ করে দোলের আগে পালিত হয় ন্যাড়াপোড়া। ফাল্গুনী শুক্লপক্ষের চতুর্দশতম দিন, প্রাক দোলযাত্রা (Pre Dol Yatra)। পুরান অনুসারে এই বিশেষ দিনেই ভগবান বিষ্ণু হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন।  আর সেই কারণেই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে পুরানো ডালপালা, আগাছা ইত্যাদি পুড়িয়ে 'ন্যাড়াপোড়া' উৎসব পালিত হয়। ধান কাটার পর ধানগাছের গোড়ায় যে অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকে তাকে বলা হয় 'নাড়া' এবং চলতি ভাষায় 'নাড়া' পোড়ানোকেই বলা হয় 'ন্যাড়াপোড়া।'