কম জল খেলেই কিন্তু বাসা বাঁধতে পারে মারাত্মক সব রোগ! সাবধান না হলেই বিপদ

ভালো স্বাস্থ্যের জন্য জল অপরিহার্য। প্রকৃতপক্ষে, জল সবকিছুর জন্য সাহায্য করে। আর আমরা মানুষ প্রায় ৬০ শতাংশ জল দিয়ে তৈরি। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ, কোষ এবং টিস্যু সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পানি ব্যবহার করে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার জল পান করার পরামর্শ দেন। পানি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে, এটা আপনি হয়তো জানেন। কিছু খাবারও আপনার হাইড্রেশন লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে। শসা, তরমুজ, টমেটো, আম জলীয় ফল এবং সবজি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবুও আমাদের অনেকেই প্রতিদিন কম জলপান করি। এর পরিবর্তে, মিষ্টি পানীয় এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের মতো ডিহাইড্রেটিং পানীয় পান করতে পছন্দ করি। কিন্তু, এগুলো শরীর থেকে জল বের করে দেয়। আচ্ছা, এবার প্রতিদিন কম জল পান করলে শরীরে কী হয়? আপনি যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন, সেগুলো এখানে দেওয়া হল।

প্রতিদিন কম পানি পান করলে কেন সমস্যা?

প্রতিদিন কম জল পান করলে কী হবে, তা নিয়ে উদাসীন হবেন না। কারণ, এটি অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রধানত, কম জল পান করলে মূত্রনালীতে পাথর তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পাথর অপসারণ করার পরেও, পুনরায় পাথর তৈরি রোধ করার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অপরিহার্য। মূত্র তৈরি করতে প্রায় ২ থেকে ৩ লিটার জল পান করতে হবে। কম জল পান করলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ ঘন হয়ে মূত্রনালী দিয়ে বের হবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এছাড়াও, পর্যাপ্ত জল পান না করলে মূত্র ঘন ঘন বের হবে না এবং শরীরে টক্সিন জমা হবে। এর ফলে মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে।

প্রতিদিন কম পানি পান করলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:

১. কম শক্তি

আপনি যদি প্রতিদিন কম জল পান করেন, তাহলে আপনার শক্তির স্তর কমে যেতে পারে। বিশেষ করে, আপনি যদি দিনের বেলায় খুব কম জল পান করেন, তাহলে আপনি সারাদিন সক্রিয় থাকতে পারবেন না। খুব ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। তাই সারাদিন নিয়মিত জল পান করার জন্য নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য সবসময় একটি পানির বোতল হাতের কাছে রাখুন।

২. পাচনতন্ত্রের সমস্যা:

প্রতিদিন কম জল পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কারণ, পানি খাবার হজমে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত জল পান না করলে, খাবার হজম হতে বেশি সময় লাগে, যার ফলে পাচনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়।

৩. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:

আপনি যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান না করেন, তাহলে শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

৪. মানসিক অবস্থার পরিবর্তন:

ডিহাইড্রেশন আপনাকে বিরক্ত করতে পারে। ২০১৯ সালে নিউট্রিশনস জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাগ, বিরক্তি, বিভ্রান্তি, হতাশা এবং উদ্বেগের মতো অনুভূতি ১ শতাংশ ডিহাইড্রেশনের কারণে বেড়ে যেতে পারে। তাই পরের বার যখন আপনি ক্লান্ত বা বিরক্ত বোধ করবেন, তখন এক গ্লাস জল পান করুন।

৫. ধীর বিপাক:

শরীরের প্রতিটি কাজের জন্য পানির প্রয়োজন। তাই আপনি যদি ডিহাইড্রেটেড থাকেন, তাহলে আপনার বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ধীর হয়ে যাবে। এছাড়াও, আপনার শক্তির স্তরও কমে যাবে। তাই, আপনার শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য হাইড্রেটেড থাকা অপরিহার্য।

৬. মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি:

২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপনার মস্তিষ্ক যখন প্রয়োজনীয় পানি পায় না, তখন মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। তাই আপনি যদি মাথাব্যথা বা ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে কিছুটা পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন।

এই ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে:

হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি বিকলতা, পায়ে ফোলা থাকলে বেশি জল পান করা এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, এই ধরনের ব্যক্তিদের শরীরে বেশি জল জমা হলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এছাড়াও, ৩ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের তৃষ্ণার অনুভূতি কম থাকে। তাই তাদের তৃষ্ণা পাওয়ার আগেই তাদের জল দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে তাদের শরীরে পানিশূন্যতা এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস জল পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কারণ, জল শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে এবং কিডনি কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, জল ওজন কমাতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই সকালে চা বা কফির আগে এক গ্লাস জল পান করুন। গরম জল পান করা পাচনতন্ত্র এবং বিপাকের জন্য খুবই উপকারী।