প্রতিটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন বলে ডাক্তাররা বলেন। কিন্তু এটি সব বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বয়স অনুযায়ী ঘুমের পরিমাণও ভিন্ন হওয়া উচিত। সেটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

আমাদের বেঁচে থাকার এবং সুস্থ জীবনের জন্য বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে ঘুম একটি মৌলিক প্রয়োজন। আমরা যে খাবার খাই এবং যে পানি পান করি, ঠিক তেমনি ঘুমের গুরুত্ব দেওয়া আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষা এবং উন্নত করার জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি বয়সের মানুষের কত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন তা জানা সুস্থ জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নবজাতক (০-৩ মাস):

নবজাতক শিশুদের ঘুমের ধরণ বড়দের মতো নিয়মিত হয় না। তারা দিনে ৭-৮ বার ছোট ছোট ঘুম নেয়। তাদের ঘুম বেশিরভাগ সময় খাওয়ার সময়ের সাথে সম্পর্কিত। এই বয়সে, মস্তিষ্ক দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই বেশি ঘুম প্রয়োজন। তাই তাদের দিনে প্রায় ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

শিশু (৪-১১ মাস):

এই বয়সে শিশুদের ঘুমের ধরণ কিছুটা নিয়মিত হতে শুরু করে। রাতে দীর্ঘক্ষণ ঘুমানো এবং দিনে ২-৩ বার ছোট ঘুম নেওয়া স্বাভাবিক। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য এই ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সের শিশুদের দিনে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

ছোট শিশু (১-২ বছর):

এই বয়সে দিনের বেলায় ঘুমের সংখ্যা কমে যায়। তাদের সক্রিয় খেলাধুলা এবং শেখার কার্যকলাপের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। ভাষা বিকাশ এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশে ঘুম সাহায্য করে। এই বয়সীদের দিনে প্রায় ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশু (৩-৫ বছর):

বেশিরভাগ শিশু এই বয়সে দিনের বেলায় ঘুমানো বন্ধ করে দেয়। তাদের কল্পনাশক্তি এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশের জন্য ভালো ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম তাদের মনোযোগ এবং আচরণ উন্নত করে। তাই এই বয়সের শিশুদের দিনে প্রায় ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

স্কুলগামী শিশু (৬-১৩ বছর):

এই বয়সে তাদের শিক্ষাগত পারফরম্যান্স, স্মৃতিশক্তি এবং শারীরিক বিকাশের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অমনোযোগিতা এবং শেখার অসুবিধার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই দিনে প্রায় ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের শিক্ষা, মনোযোগ এবং শারীরিক বিকাশে সাহায্য করবে।

কিশোর (১৪-১৭ বছর):

হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই বয়সে ঘুমের ধরণ পরিবর্তিত হতে পারে। তারা দেরিতে ঘুমাতে এবং সকালে দেরিতে উঠতে পছন্দ করতে পারে। তবে, স্কুল এবং অন্যান্য কার্যকলাপের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাব মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিরক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই বয়সীদের দিনে প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

যুবক (১৮-২৫ বছর):

কাজ, পড়াশোনা এবং সামাজিক জীবনের কারণে এই বয়সে ঘুম কমে যেতে পারে। তবে, নিয়মিত ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, মেজাজ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সীদের দিনে প্রায় ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

প্রাপ্তবয়স্ক (২৬-৬৪ বছর):

প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, জীবনযাত্রা এবং ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে এই ঘুমের পরিমাণ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। কারও জন্য ৬ ঘণ্টা যথেষ্ট হতে পারে, আবার কারও জন্য ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা মানসিক চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে প্রায় ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

বয়স্ক (৬৫ বছর এবং তার বেশি):

বয়স্কদের ঘুমের প্রয়োজন কমে না, তবে তাদের ঘুমের গুণমান কমে যেতে পারে। তারা রাতে ঘন ঘন জেগে উঠতে পারে এবং দিনের বেলায় মাঝেমধ্যে ছোট ঘুম নিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম তাদের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে। বয়স্কদের জন্য দিনে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট।

পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব:

আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করে।

শিশু এবং কিশোরদের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, গ্রোথ হরমোন গভীর ঘুমের সময় নিঃসৃত হয়।

আমরা দিনের বেলায় যে তথ্য এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করি তা ঘুমের সময় মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত হয়।

ভালোভাবে ঘুমানোর পর, আমরা পরিষ্কারভাবে এবং তীক্ষ্ণভাবে চিন্তা করতে পারি। আমাদের মনোযোগ এবং একাগ্রতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন যাপন করার সম্ভাবনা বেশি।