সংক্ষিপ্ত
শরীর সর্বস্ব মাথা! বিশেষভাবে সক্ষমদের খোঁচা দিয়ে মিম আদৌ সুস্থতার লক্ষণ নয়, বলছেন মনোবিদ
রাজনৈতিক হোক বা অন্য কোনও কারণ, সামাজিক মাধ্যমে যখন তখন শেয়ার হচ্ছে ভুরি ভুরি মিম। হুড়মুড়িয়ে শেয়ারও হচ্ছে সেই সব পোস্ট। বাদ থাকছে না বিশেষ ভাবে সক্ষমরাও। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের খোঁচা দিয়ে অনবরত শেয়ার করা হচ্ছে মিম। বডি শেমিং তো রয়েছেই। যেমন ধরুন খুব স্থূলাকার কারও ছবি নিয়ে হাসাহাসি করা বা কোনও শ্যামবর্ণা কারও ছবি নিয়ে হাসির খোরাক করা। এ যেন এক নতুন ট্রেন্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে নেট পাড়ায়।
নির্বাচনের পরের দিনের ঘটনাও অনেকটা ঠিক একরকম। তৃণমূলের লোকসভার মহিলা প্রার্থীদের ছবির মিম শেয়ার করে লেখা হল "শেষমেশ হ্যান্ডিক্যাপড"। অর্থাৎ "বিশেষ ভাবে সক্ষমরা এমনই এক শ্রেণী যাদের একবারে নিচু চোখে দেখা যেতে পারে"।
বিশেষ ভাবে সক্ষমদের নিয়ে যারা খোরাক করেন তাঁরা কতটা মানসিক ভাবে সুস্থ? এই নিয়ে এশিয়ানেট বাংলা কথা বলেছিল মনোবিদ কুসুমিতা চক্রবর্তীর সঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে মনোবিদ কুসুমিতা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, " আমরা সবাই তো বিশেষ ভাবে সক্ষম। আজকে আমি যে কাজটা করতে পারছি সেটা হয়তো অনেকে পারছে না, বা অন্য কেউ যেটা পারছে না সেটা আমি পারছি না,তো আমরা তো বিশেষ ভাবে সক্ষমই হলাম। আমি যদি শারীরিক অক্ষমতার কথাই বলি তাহলে কেউ ট্রেকিং করতে পারে হয়ত আমি পারি না বা সুইমিং, সাইকেল পারে আমি পারি না, তাহলে সেটাও তো অক্ষমতাই হল।
সেক্ষেত্রে কারও মেডিক্যাল কোনও সমস্যা থাকলে তাদের নিয়ে খোরাক করাটা শারীরিক সুস্থতার লক্ষণ কোনও ভাবেই নয় এবং যারা এগুলো করে আমার মনে হয় যে দেখা যেতে পারে যে তাঁরা হয়তো জীবনের কোনও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত বা অনেক রাগ, ক্ষোভ, অনেক দুঃখ তাদের রয়েছে যা তাঁরা ব্যক্ত করতে পারেনি এবং ওই জন্য তারা ওই জায়গা তে শারীরিক ভাবে যাদের সমস্যা রয়েছে তাদের সঙ্গে নোংরা খেলাটা খেলছে। এক্ষেত্রে অন্যদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তুলে নিয়ে একটা অদ্ভুত আনন্দ উপভোগ করে তারা, যা কোনও ভাবেই মানসিক সুস্থতার লক্ষণ হতে পারে না।
সমাজকে এটাই বলার যে যারা শারীরিকভাবে সক্ষম তাঁরা কোনও ভাবে স্বইচ্ছায় নয় বা জন্মগত ভাবেও হয়তো নয়, কোনও কারণে কোনও দুর্ঘটনা কারণেও হতে পারে। তাই এদেরকে বাদ দিয়ে একটা বৃহত্তর আধুনিক সমাজ গড়া কীভাবে সম্ভব? তবে কি ভবিষ্যতে সংসদে বা বিধানসভায় কোনও শারীরিকভাবে সক্ষম মানুষ সুযোগ পাবে না বলে ধরে নি?"
এই প্রসঙ্গে এশিয়ানেট বাংলাকে কিছু সাধারণ মানুষও নিজের মতামত জানিয়েছেন, যেমন শ্রবনা সিংহ মহাপাত্র নামের এক শিল্পী জানিয়েছেন, "বিশেষ ভাবে সক্ষমতা শারীরিক অবস্থা মাত্র। এইটা কোনও দিন মানসিক অবস্থা হতে পারে না। সেই অর্থে আমরা সবাই আজ বিশেষ ভাবে সক্ষম। তাই তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা করা উচিৎ না। পারলে তাদের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। আর যারা ভাবে তাদেরকে বিয়ে করা মানে জীবন নষ্ট বা কেউ বিয়ে করলে উল্টো দৃষ্টিপাত করা তারাই আসলে "হ্যান্ডিক্যাপড"।
এই প্রসঙ্গে নিজের মতামত জানিয়েছেন স্ট্রিট ডগ এনজিও-র এক কর্মী শালীনি ঘোষও, তিনি জানিয়েছেন, "আমি তো মনে করি এখন মানুষ মানসিক ভাবে অক্ষম। আর যারা মনে করেন এই ধরনের মানুষকে জীবনসঙ্গী করা মানে জীবন শেষ আসলে তারাই শারীরিক ও মানসিক ভাবে অক্ষম। তাই আমার এই ধরনের মানুষের জন্য খারাপ লাগছে যারা "মেন্টালি হ্যান্ডিক্যাপড" ঈশ্বরের কাছে তাদের সুস্থতার কামনা করি।
এ ছাড়া এক গৃহবধূ বর্ণালী মহাপাত্র জানিয়েছেন, "আসলে এরা মানসিক ভাবেই অক্ষম, এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তাঁরা গানে, নাচে কত কিছুতে ভাল, তাই বিশেষ ভাবে সক্ষমরা কখনই শেষমেশ হতে পারে না, কারণ কোনও মানুষই সর্বগুণ সম্পন্না নয়।"