জিনিস দেখা মাত্রই রাস্তায় বায়না শুরু, অভিভাবকরা কীভাবে সামলাবেন বাচ্চার বায়না?

বাড়িতে হোক বা রাস্তায়, কিছু চাই মানে চাই, শুয়ে পড়ে বায়না জুড়ে দেয় বাচ্চা - এমন অপ্রস্তুতকর ঘটনা প্রায় সব মা-বাবারই চেনা। বাচ্চাদের কথা না মানা বা বকাঝকা করলেই আরও তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দেয়, হাত পা ছুড়ে কান্না করতে থাকে। আবার এমন আচরণ প্রশ্রয় দিলেই ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা কী করবেন?

মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সন্তানের এমন অবাধ্য হয়ে ওঠার জন্য কিছুটা হলেও অভিভাবকদের একাংশ দায়ী। বেশি আহ্লাদ দিতে গিয়ে চাইতে না চাইতেই জিনিসপত্র হাজির করেন তাঁরা। পেতে পেতে এক সময় চাহিদাও হয়ে যায় লাগামছাড়া। বিশেষত সে যদি জানে কেঁদে, চেঁচিয়ে কার্যোদ্ধার করা যায়, তা হলে তো কথাই নেই। আবার অভিভাবকের কাউকে যদি সে দেখে, চিৎকার করলেই কাজ হচ্ছে, একই জিনিস শিখবে সে।’’

তিনি আরও পরামর্শ দেন, যে সন্তানকে যদি কিছু দিতেই হয় সেটি ভাল আচরণ বা কাজের পুরস্কার বাবদ দেওয়া দরকার। এমনি এমনি যে কিছু চাইলেই মেলে না, তার জন্য উপযুক্ত কাজ করতে, সেটা বুঝতে হবে। এতে সন্তান পুরস্কারের গুরুত্ব বুঝবে, সে ধৈর্য ধরতেও শিখবে। এই শিক্ষাগুলো বাচ্চার জীবনে বড়ো হওয়ার জন্য জরুরি।

বাচ্চার অবাধ্য বায়না সামলাবেন কীভাবে?

১। বায়না করলেই জিনিস মিলবে, এই ধারণায় প্রশ্রয় নয়

বাচ্চা কাঁদছে, চিৎকার করছে দেখে অভিভাবকরা তাড়াতাড়ি করে চাহিদা মিটিয়ে দেন বাচ্চার। এমনটি করবেন না। মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘শিশু যদি একটু হাত-পা ছোড়ে, কাঁদে তাকে সেটা করতে দিন। একটু পরে সে ভুলে যাবে। কিন্তু বায়না দেখে জিনিস কিনে দিলে সে বুঝবে, এটাই খেলনা বা জিনিস পাওয়ার পন্থা।’’

২। উদাহরণ দিয়ে বোঝান

শিশুকে বোঝানোর জন্য গল্প বা রূপক ব্যবহার খুব কার্যকর। যেমন—দু’টি গাড়ি রাখুন। একটি ব্যাটারি আছে, অন্যটির ব্যাটারি খুলে নিন। সন্তানকে চালাতে বলুন দুটোই। একটি চলবে, দ্বিতীয়টি নয়। সন্তানকে বোঝান, গাড়ি চলার জন্য জ্বালানি প্রয়োজন। তেমনই জিনিস কিনতে হলে টাকা দরকার। আর টাকা উপার্জন করতে হয়, এমনি এমনি পাওয়া যায় না।

৩। মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন

শিশুর মন অন্যদিকে ঘোরানো অনেক সময় আশ্চর্যভাবে কাজ করে। তার পছন্দের গান, গল্প বা অন্য খেলনায় মনোযোগ ফেরালেই কান্না থেমে যেতে পারে।

৪। শান্ত থাকুন, শান্ত করুন বাচ্চাকে

রেগে গেলে বা কাঁদলে শিশুকে কিছুটা সময় দিন। প্রয়োজন হলে জড়িয়ে ধরে শান্ত করুন। জিনিসটি খুব দরকার হলে, শিশুকে কিনে দেওয়ার মতো জিনিস হলে, প্রতিশ্রুতি দিন যে ভবিষ্যতে ভালো আচরণ বা কাজ করলে, পুরস্কার হিসেবে সে জিনিসটি পাবে।

৫। সবার সামনে বকাবকি নয়

বাচ্চা রাস্তায় জেদ বা কান্নাকাটি করলে বাইরের লোকজনের মাঝে বকাবকি না করে শান্ত থাকুন। শিশুর আচরণে উৎসাহ না দিয়ে ধৈর্য ধরুন। বাচ্চা আপনার মনোযোগ না পেলে কান্না থামিয়ে দেবে। অভিভাবকরা এড়িয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

সারাংশ পছন্দের জিনিস দেখা মাত্রই বাড়িতে, রাস্তাঘাটে লোকজনের মাঝে জেদ, চিৎকার, এমনকি কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে শিশুর বায়না সামলাবেন কীভাবে? রইলো বিশ্বশুজ্ঞদের পরামর্শ।