মহিলাদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা! কেন হয় এই রোগ, সবচেয়ে বড় কারণ কী?

স্তন ক্যান্সার, আজ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল রোগগুলির মধ্যে একটি এবং বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে। WHO অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় ২.৩ মিলিয়ন মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ভারতেও এটি মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন এর আসল কারণ কী? কেন কিছু মহিলার এটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি? এটি কি কেবল জেনেটিক্সের কারণে হয় নাকি আমাদের জীবনযাত্রাও ভূমিকা পালন করে? আজ আমরা স্তন ক্যান্সারের বৈজ্ঞানিক কারণ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সবচেয়ে বড় কারণ

স্তন ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক মহিলাদের হরমোন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের সাথে। যখন এই হরমোনগুলির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, তখন স্তনের টিস্যুতে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শুরু হতে পারে, যা ধীরে ধীরে ক্যান্সারযুক্ত টিউমারে পরিণত হয়। ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে শুরুর দিকে পিরিয়ড শুরু হওয়া (১২ বছরের আগে), দেরিতে মেনোপজ (৫৫ বছরের পরে), প্রথম গর্ভধারণ ৩০ বছরের পরে এবং স্তন্যপান না করানো।

২. জেনেটিক মিউটেশন (BRCA1 এবং BRCA2 জিন)

কিছু মহিলার বংশগতভাবে স্তন ক্যান্সার হয়। BRCA1 এবং BRCA2 নামক জিনের মিউটেশন হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৬০-৮০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই ঝুঁকি অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো হলিউড তারকাদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, যারা এটি বিবেচনা করে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

৩. জীবনযাত্রা এবং নতুন জীবনের অনিয়ম

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: যেমন জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত মাংস, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, কম ফাইবার গ্রহণ। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এবং অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন এবং ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধি করে।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৫-৩০% পর্যন্ত কমাতে পারে।

মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি করে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ঘুম কম হলে মেলাটোনিন কম তৈরি হয়, যার ফলে শরীরের কোষের ক্ষতি ঠিক হয় না।

৪. পরিবেশগত কারণ (টক্সিন এবং রাসায়নিক)

প্লাস্টিকে রাখা খাবার থেকে BPA নির্গত হয় যা একটি xenoestrogen এবং স্তনের টিস্যুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডিওডোরেন্ট এবং রাসায়নিক প্রসাধনীতে থাকা parabens এবং phthalates শরীরের হরমোনে হস্তক্ষেপ করে।

৫. ব্যক্তিগত চিকিৎসা ইতিহাস এবং হরমোন থেরাপি

যেসব মহিলার আগে ডিম্বাশয় বা জরায়ুর সাথে সম্পর্কিত কোনও রোগ ছিল বা যারা দীর্ঘ সময় ধরে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) নিচ্ছেন, তাদের ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা, মানসিক আঘাত এবং একাকীত্বও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যোগ, ধ্যান এবং প্রাণায়াম মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।