শীতের সময়ে ঘন ঘন সংক্রমণ, সর্দি, কাশি, কানে ব্যথা, গলা ব্যথায় নাজেহাল বাড়ির ছোটরা। কারও কারও আবার সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে। তবে পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সেই ক্ষমতা বাড়তে পারে। তা হলে কী কী খাওয়াবেন সন্তানকে?
শীতে খুদেদের সর্দি-গলা ব্যথায় ওষুধের পাশাপাশি মধু, আদা-তুলসি মিশ্রিত পানীয়, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (কমলা, কিউই), উষ্ণ ঝোল (চিকেন/ভেজিটেবল স্যুপ) এবং আলু ভর্তা (ত্বক সহ) খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে, কারণ এদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে এবং এগুলো শরীরকে শক্তি যোগায়।
শিশুদের সর্দি-গলা ব্যথার জন্য কয়েকটি উপকারী খাবারের বিস্তারিত বিবরণ :
১. মধু (Honey): উপকারিতা: মধুতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা গলা ও শ্বাসনালির জীবাণু ধ্বংস করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ব্যবহার: হালকা গরম জল বা ভেষজ চায়ের সাথে ২ চামচ মধু মিশিয়ে দিন। এটি বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী, তবে ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু দেবেন না।
২.আমলকি (Amla): ভিটামিন সি-এর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক উৎস এটি। এটি শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা সরাসরি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ভিটামিন সি ছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ভরা আমলকি হজমে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আনে।
৩. হলুদ ( termaric) : হলুদে থাকা কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টিসেপটিক। এটি ঠান্ডা লাগা, সর্দি ও কাশির প্রবণতা কমায়।
৪.ঘি ( Ghee) : ভিটামিন এ, ডি এবং ই সমৃদ্ধ ঘি ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায়। তা ছাড়া একটানা কাশির ফলে গলায় প্রদাহ, জ্বালা ধরে ব্যথা হতে পারে। গলাকে আরাম দিতে পারে ঘি।
৫. আদা ও তুলসি (Ginger & Tulsi): উপকারিতা: আদা ও তুলসি পাতার মিশ্রণ শ্বাসনালির প্রদাহ কমায় এবং কফ বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ব্যবহার: আদা কুচি, তুলসি পাতা, সামান্য গোলমরিচ গুঁড়ো ও জল ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিন। ঠান্ডা হলে মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ান।
৬.ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (Vitamin C Fruits): উপকারিতা: কমলা, কিউই, বেরি, আনারসের মতো ফলগুলিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ব্যবহার: ফলের রস বা ফল সরাসরি ছোট ছোট টুকরো করে দিন (শিশুর বয়স অনুযায়ী)।
৭. উষ্ণ ঝোল ও স্যুপ (Warm Broths & Soups): উপকারিতা: চিকেন বা ভেজিটেবল স্যুপের মতো উষ্ণ তরল খাবার গলাকে আরাম দেয়, শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং সহজে হজম হয়। এটি রোগীকে শক্তি জোগায়। ব্যবহার: ঘরে তৈরি হালকা মশলার মুরগি বা সবজির স্যুপ দিন।
৮. আলু ভর্তা (Mashed Potatoes - Skin On): উপকারিতা: নরম আলু ভর্তা গলায় সহজে নামে, আর খোসাসহ ভর্তা করলে তাতে থাকা ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ব্যবহার: খোসা ছাড়ানোর দরকার নেই, ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে ম্যাশ করে দিন।
অতিরিক্ত টিপস: নিয়মিত জল পান: শিশুকে প্রচুর পরিমাণে জল ও অন্যান্য তরল (যেমন – ভেষজ চা, স্যুপ) পান করান, যাতে শরীর আর্দ্র থাকে।
আর্দ্রতা: ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ: ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি বা গুরুতর অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


